Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

অর্থনীতি চাপের মুখে আছে: গভর্নর

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ৪, ২০২২, ০৮:১৬ পিএম


অর্থনীতি চাপের মুখে আছে: গভর্নর

* ব্যাংকিং খাতে মূল সমস্যা তারল্য প্রবাহ কম থাকা
* দুর্বল ১০ ব্যাংক চিহ্নিত সবল করার উদ্যোগ
* ব্যাংকের পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংস্কার

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে আছে। এর মধ্যে একটি আছে আমদানি চাপ অন্যটি মূল্যস্ফীতি। আমদানি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খুব বেশি কাজ করার সুযোগ নেই। 

কারণ জ্বালানী, গ্যাস, ভোজ্যতেলসহ জরুরী প্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্য আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। শিগগিরই এটি ঠিক হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার (০৪ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর দুটি উপায় আছে-ইন্টারেস্ট রেট কমানো এবং ট্যাক্স বাড়ানো। কিন্তু আমরা তৃতীয় বিকল্প নিয়ে কাজ করছি। তা হলো- চাহিদা কমানোর পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানো।

গত দুই বছর আমরা করোনা মোকাবেলায় ভিন্ন পলিসি নিয়ে কাজ করে দক্ষিণ এশিয়ায় সকলের চেয়ে ভাল করেছি। সময় দিলে এখানেও আমরা ভাল করব। এ ছাড়া ডলার বাজারে অভিযানের সুফল পেতে সময় লাগবে বলে জানান তিনি। 

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে মূল সমস্যা তারল্য প্রবাহ কম থাকা। এটি সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ বৃদ্ধি ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এ তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি। আমরা প্রথমে ব্যাংক ও পরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করব। 

ইতোমধ্যে কয়েকটি  সূচক পর্যালোচনা করে র‌্যাংকিং তৈরি করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ১০টি ব্যাংককে সবল করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি, ঋণ-আমানত অনুপাত এবং প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলোকে রেটিং করা হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর নাম জানাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘কোনো ব্যাংক বন্ধ হোক সেটা আমরা চাই না। এ জন্য র‌্যাঙ্কিং পর্যালোচনা করে ১০টি ব্যাংককে আলাদা করেছি। আমরা চাই তারা দুর্বল থেকে সবল হোক, ব্যবসা করুক। 

আমাদের লক্ষ্য, ব্যাংকগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা। এরই মধ্যে একটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমরা বলেছি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। 

ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের কাজে পর্ষদ কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। যদি কেউ সমস্যা করে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রটেকশন দিবে। তবে কেউ অনিয়ম করলে একশনে যাবে। 

রাজনৈতিক চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এখানে চাপ বলে কিছু নেই। আইনের মধ্যে থেকে কাজ করছে কি না সেটাই প্রধান। রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা আইন তৈরি করে দিয়েছে, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। 

তাই তাদের আপত্তি থাকার কথা না। আমরা মনেকরি রাজনৈতিক নেতারা দায়িত্বশীল, তারা আমাদের কাজে সহায়তা করবে।

নয়-ছয় সুদহার তুলে দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি তুলে দিলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। প্রতিবছর ২০ লাখ যুবক কর্মক্ষম হচ্ছে, তাদের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা একটা ভাল সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। 

আশাকরি ডলার বাজারের অস্থিরতা ঠিক হয়ে যাবে। তখন আমরা এটি বাজারের ওপর ছেড়ে দিব। এছাড়া বাজারে স্বাভাবিক রাখতে আমরা ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট লেভেল করার চেষ্টা করছি। বিশ্ববাজারে ডলারের ক্রাইসিস হচ্ছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংক সুদহার বাড়াচ্ছে তাই সব ডলার সেখানে চলে যাচ্ছে। তবে আলাদা নীতির কারণে বাংলাদেশ এ সমস্যায় পড়বে না।

ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে টাকা পাচারের প্রচারণা থাকলেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোন তথ্য নেই জানিয়ে গভর্নর বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বড় অঙ্কের এলসি ওপেনের ২৪ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দিয়েছি। 

আমাদের একটি অভিজ্ঞ টিম বিষয়গুলো পরীক্ষা করে দেখছে। এক প্রশ্নের উত্তরে খেলাপি ঋণ অর্থ প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে না বলে মন্তব্য করেন গভর্নর। 

তিনি বলেন, খেলাপিরা এক ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে অন্য ব্যাংকে রাখছে। তারাতো টাকা গর্তে লুকিয়ে রাখছে না। তাই তারল্য প্রবাহ কমে যাওয়ার কোন কারণ নেই।

এ সময় উপস্থাপিত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়-ঋণ ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নসংক্রান্ত বিষয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ ও পুনর্গঠনসংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার জারি হয়েছে। 

এ সার্কুলারের বর্ণিত শর্ত মোতাবেক ব্যাংকগুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে, যা আগে অনেকটা অস্বচ্ছ এবং অসমভাবে করা হতো। এ ছাড়া গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় এবং আমদানি ব্যয় দুটিই ৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে এনে সামঞ্জস্য তৈরি করা হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

 

আমারসংবাদ/টিএইচ

Link copied!