Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

বাংলাদেশ ব্যাংককে শতভাগ স্বাধীন দেখতে চান গভর্নর

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

মে ২১, ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম


বাংলাদেশ ব্যাংককে শতভাগ স্বাধীন দেখতে চান গভর্নর

নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংককে সর্বোচ্চ স্বাধীন সংস্থা হিসেবে দেখতে চান খোদ গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তার আশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা হবেন পেশাদার ও বিচক্ষণ। 

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সদ্য বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘গভর্নর হিসেবে আমার দায়িত্ব চার বছর। এরপর আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে যেমন দেখতে চায় তা হল- এটি একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠান হবে। এখানে ইন্টেলেকচুয়াল বা মেধাবি বিচক্ষণ কর্মকর্তাদের মিলনমেলা থাকবে এবং এপেক্স রেগুলেটরি বডি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক শতভাগ স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর বলেন, অনেক সময় কাজের প্রয়োজনে সাবেক গভর্নরদের পরামর্শ নিতে হয়। সেজন্য ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন স্যারকে সবসময় কাছে পেয়েছি। তবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সব পরামর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের পরপরই কিছু কাজ গুরুত্ব সহকারে হাতে নিয়েছি। এগুলোর মধ্যে- কর্মকর্তাদের বাসস্থান অন্যতম। অর্থাৎ ব্যাংক কলোনিগুলোর মান উন্নয়ন। পাশাপাশি কর্মের পরিবেশ ভালো করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যতগুলো অফিস রয়েছে সেগুলোর মান উন্নয়নের কাজ শুরু করেছি। কারণ কর্মের পরিবেশ ভালো থাকলে ৩০ শতাংশেরও বেশি প্রোডাক্টিভিটি বেড়ে যায়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘আমার অস্তিত্বের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক মিশে আছে। আমি এটা ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। যারা এখানে কাজ করেন তারা শুধু চাকরিই করেন না, এটা তাদের পরিবার। আমি অবসরে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত অনেক পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। অনেক সময় গভর্নরদের হাত-পা বাঁধা থাকে। তাই চাইলেও সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে না। দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সীমাবদ্ধ থাকলে তাকে মডারেট মূল্যস্ফীতি বলা হয়। এখন এটি বেড়ে গেছে। অথচ অতীতে দুর্যোগের বছরেও মূল্যস্ফীতি ছিল ১-২ শতাংশ। সম্প্রতি দেশে যত ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে তার অন্যতম কারণ বহির্বিশ্বের অস্থিরতা। এই সমস্যাও খুব ভালোভাবেই মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভবিষ্যতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদি তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় সরকার একবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (পরিচালনা বোর্ড) নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন ঋণ খেলাপি। তাকে নিযুক্ত করতে সরাসরি আপত্তি জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর। আমরা এখনো এমন সাহসী গভর্নর চাই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, এখানে যারা কাজ করি সবাই একটি পরিবার। সবাই আপনজন। অবসরে গেলেও তাদের সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। আপনাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সবাইকে নিয়েই আমরা আগামীতে এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের পার্শ্ববর্তী ইসলামী ব্যাংকের জমি কিনতে পারাকে সফলতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকদিন থেকেই চাচ্ছিলাম জমিটা কিনতে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে পারিনি। নতুন গভর্নর যোগদান করার দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হয়েছে। সেজন্য গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে ধন্যবাদ জানান আহমেদ জামাল।

সাবেক ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা বলেন, নিজের জায়গা থেকে সঠিকভাবে কাজ করলে অনেক কিছু পরিবর্তন করা যায়। উপরের নির্দেশনার দিকে না তাকিয়ে উদ্যোগী হয়ে কাজ করুন। অতিরিক্ত পরিচালক অবস্থা থেকেই বিভিন্ন কাজের বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরে গিয়েও জনগনের জন্য কাজ করার আহবান জানান তিনি।

আরএস

Link copied!