আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মে ৮, ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মে ৮, ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমি চাই ওরা থেমে যাক। আমি দুটি দেশকেই খুব ভালোভাবে চিনি এবং চাই ওরাই সমাধান করুক।"
`অপারেশন সিন্দুর` নামে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারত যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি আরও জানান, দুই দেশের মধ্যে আঘাত ও প্রত্যাঘাত চলছে, তাই এখন সময় হয়েছে উভয় পক্ষের সংযত হবার।
ট্রাম্প জানান, প্রয়োজন হলে তিনি যে কোনো ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত। যদিও তিনি সরাসরি হস্তক্ষেপের কথা বলেননি, তবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পথ উন্মুক্ত রাখার ইঙ্গিত দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দুই দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থাপনের জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভারত, পাকিস্তানে নেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত
ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের আবহাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতেন, এমন দুই পদাধিকারীকে এখনো নিয়োগ করেনি ট্রাম্প প্রশাসন।
দুই দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাষ্ট্রদূত এখনো নেই। দুই দেশে অবস্থানরত রাষ্ট্রদূতরা চরম উত্তেজনার সময়ে স্থানীয়ভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারতেন।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম কার্যকালের সময়ে ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করা টিম র্যোমার বিবিসিকে বলেছেন ,"দিল্লিতে বসে দুই দেশের মধ্যে নীরবে কূটনৈতিক পদক্ষেপ বা চুপচাপ মধ্যস্থতাও করতে পারতেন" ভারতে যদি কোনো রাষ্ট্রদূত থাকত আমেরিকার।
ভারত আর পাকিস্তানে `স্থায়ী রাষ্ট্রদূত` থাকাটা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
তার কথায়, "ইসরাইল, চীন আর দক্ষিণ আমেরিকার জন্য রাষ্ট্রদূতদের নাম ঘোষণা হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের এখন সবথেকে গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল।"
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা প্রথমে মনোনয়ন পান তারপর তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করে মার্কিন সিনেট। এই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। ট্রাম্প প্রশাসন মাত্রই একশো দিন পার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র কি হাত ধুয়ে ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে বিবিসির সংবাদদাতা টম বেটম্যান বলছেন যে ভারত আর পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে হোয়াইট হাউস গত দুদিনে যে মন্তব্য করেছে, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে আমেরিকা এই সংঘাতে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে না, বা বলা যেতে পারে `হাত ধুয়ে ফেলছে`।
মি. বেটম্যান লিখেছেন, প্রথমে ওভাল অফিস বলল `এটা লজ্জাজনক ঘটনা` আর তারপরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বললেন যে "আঘাত-প্রত্যাঘাত" হয়ে গেছে, তাই তিনি এখন চান যে সংঘাত বন্ধ হোক।
কিন্তু তিনি এটা নির্দিষ্ট করে বলেন যে কীভাবে দুটি দেশের সংঘাত থামবে।
ভারতীয় হামলার পরে যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু সরাসরি সংযত হওয়ার কথা বলেনি, তাতে অন্যান্য দেশের মধ্যেও একটা কূটনৈতিক দোলাচল তৈরি হয়েছে।
এর কারণ হলো গত কয়েক বছরে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে আর পাকিস্তানকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটন, অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ সম্পর্ক থাকলেও তা মসৃণ ছিল না কখনোই, লিখেছেন বিবিসির সংবাদদাতা টম বেটম্যান।
তার মনে হচ্ছে যে হোয়াইট হাউস বোধহয় দিল্লিকে কিছুটা সময় দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু খুব বেশি সময় কি দিতে পারবে আমেরিকা?
আগের সংঘাতে কী অবস্থান নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট?
এর আগে ২০১৯ সালে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে পুরোপুরি সমর্থন করেছিল।, কারণ তারা তখন মনে করেছিল যে ভারত শাসিত কাশ্মীরে যে `জঙ্গি`রা হামলা চালিয়েছিল, তাদের টার্গেট করে প্রত্যাঘাত করার অধিকার ভারতের আছে।
কিন্তু সেবারের সংঘাত যেভাবে খুব দ্রুত বেড়ে চলেছিল, তখনই আমেরিকা মত পাল্টে উত্তেজনা কমানোর কথা বলতে থাকে।
চ্যাথাম হাউসের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ক্ষিতিজ বাজপেয়ী বলছেন যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আগেকার সংঘাতের সময়ে উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র একটা স্পষ্ট ভূমিকা নিয়েছিল কিন্তু এবারে `বহির্দেশীয় চাপ` খুব একটা নেই।
তার কথায়, "এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের তরফেই আমরা কোনো ধরনের চাপ দেখতে পাইনি।" উত্তেজনা কমানোর কথা "বলা সহজ, করা কঠিন"। -বিবিসি
আরএস