তানভীর চৌধুরী, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
জুন ২, ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
তানভীর চৌধুরী, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
জুন ২, ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে চান? তাহলে ঘুরে আসুন দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এলাকা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল থেকে।
এ দুই উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম পর্যটন অঞ্চল। এখানে রয়েছে শত বছরের পুরোনো চা বাগান, গভীর অরণ্য, লেক, জলপ্রপাত, পাহাড়ি ছড়া, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও বহু দর্শনীয় স্থান।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
কমলগঞ্জের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। প্রায় ১,২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বন আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিত। এটি শুধু প্রাকৃতিক উদ্যান নয়, এক জীবন্ত গবেষণাগার। এখানে রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী, যার মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক, সবুজ ঘুঘু, বন মোরগ, ঈগল, শকুনসহ বহু পাখি ও প্রাণী।
উচ্চ পাহাড়ি টিলাজুড়ে বিস্তৃত এই বনের ভেতরে রয়েছে তিনটি ট্রেইল। হাঁটতে হাঁটতেই দেখা মিলবে নানা রকম পাহাড়ি ছড়া, গহীন সবুজ, আর প্রাণিকুলের কোলাহল।
মাধবপুর লেক
চা বাগানের বুক চিরে এক মনোমুগ্ধকর হ্রদ—মাধবপুর লেক। চারদিকে সবুজ পাহাড় ও চা বাগানের পরিবেশে ঘেরা এ লেক শীত মৌসুমে অতিথি পাখির আগমনে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এখানে রয়েছে দুটি ট্রেইল। দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার, যা হেঁটে ঘোরা যায়।
হাম-হাম জলপ্রপাত
রাজাকান্দি বনাঞ্চলে অবস্থিত হাম-হাম জলপ্রপাত এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০১০ সালে আবিষ্কৃত এ ঝরনাটি প্রায় ১৩৩ ফুট উঁচু ও ৩০ ফুট প্রশস্ত। এটি পৌঁছাতে তিন ঘণ্টার ট্রেকিং করতে হয়, যার পথে সঙ্গী হয় পাহাড়ি গাছগাছালি, বাঁশঝাড় আর চশমা বানরের দল।
পদ্মছড়া ও ক্যামেলিয়া লেক
চা বাগানের গভীরে গড়ে ওঠা পদ্মছড়া ও ক্যামেলিয়া লেক দুইটি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। ক্যামেলিয়া লেকটি পরিচিত ‘বিসলার বান’ নামে। এটি ব্রিটিশ আমলে গড়া শমশেরনগর চা বাগানে অবস্থিত। তবে এখানে যেতে চাইলে চা বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়া উত্তম।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ
কমলগঞ্জ উপজেলার গর্ব বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিতে গড়া এ কমপ্লেক্সে প্রতি বছর অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন। এখানে যেতে যেতে শিববাজারের রাস উৎসবের স্থান জোড়া মন্দির দেখা যাবে।
পাথারিয়া পাহাড় ও মাধবকুণ্ড
বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়ে রয়েছে বিখ্যাত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। প্রায় ২০০ ফুট উচ্চতা থেকে ধেয়ে আসা জলের ধারা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বর্ষায় আশপাশের ছোট ছোট ঝরনাগুলোও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
বাইক্কা বিল
হাইল হাওরের অংশ বাইক্কা বিল পাখি ও মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। অতিথি পাখির কলকাকলি আর জলজ উদ্ভিদের সমারোহে ভরা এই স্থান প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ।
চা বাগান, চা গবেষণা কেন্দ্র ও সাত রঙা চা
শ্রীমঙ্গলেই রয়েছে প্রায় ৬০টি চা বাগান। শহর থেকে বের হলেই দেখা মেলে সবুজের সমারোহ। এখানে আছে বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই), যেখানে ফুলের বাগান, পুরোনো চা গাছ, চা ফ্যাক্টরি ও টেস্টিং ল্যাব ঘুরে দেখা যায়। কাছেই ‘নীলকণ্ঠ চা কেবিন’-এ পাওয়া যায় সাত রঙা চা—যা মৌলভীবাজারের অন্যতম আকর্ষণ।
সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা
ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই ক্ষুদ্র চিড়িয়াখানাটি শহরের প্রান্তে অবস্থিত। এখানে দেখা মেলে ভালুক, হরিণ, ময়না, বনমোরগসহ নানা প্রাণীর।
থাকার ব্যবস্থা
শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে রয়েছে নানা দামের ইকো রিসোর্ট ও পাঁচ তারকা হোটেল। গ্র্যান্ড সুলতান, লেমন গার্ডেন, নভেম ইকো রিসোর্ট, ওয়াটারলিলি—প্রত্যেকটিই প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মিত।
যেভাবে যাবেন— ঢাকা থেকে বাস বা আন্তঃনগর ট্রেনে শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ বা শমশেরনগর নেমে সিএনজি বা অটোরিকশায় গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।
ইএইচ