ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন বিড়ি-সিগারেটের দোকান

ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

রাকিবুল ইসলাম

রাকিবুল ইসলাম

জুন ২, ২০২৪, ০৭:৩৬ পিএম

ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের আসক্ত করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়

—অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাবি

সিগারেট এখন ফ্যাশনের মতো হয়ে গেছে

—অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগীয় প্রধান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট

তামাক কারখানাগুলোকে লাল তালিকাভুক্ত করতে হবে

—ডা. লেলিন চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন

যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে

—অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেন আমিন, লাইন ডিরেক্টর, নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

মাদক এক অভিশাপ আর ভয়ংকর ছোবলের নাম। এটি শুধু মাদকাসক্তের জন্ম দেয় না, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পও ছড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে মাদকাসক্তের সংখ্যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে ধূমপান একটি ফ্যাশন বা স্মার্টনেস অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দেখা যায় বিভিন্ন মনোহারি দোকান। আর এসব দোকানেই বিক্রি হচ্ছে সিগারেট-বিড়িসহ বিভিন্ন তামাকজাত পণ্য। এসব দোকানের সামনে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো সতর্কীকরণ বার্তা। উল্টো এসব দোকান থেকে শিক্ষার্থীরা সিগারেট কিনে জনসম্মুখেই সেবন করতে দেখা যায় অধিকাংশ সময়। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান হচ্ছে মাদকের প্রথম স্তর। এর মাধ্যমেই ছেলেমেয়েরা ঢুকে পড়ছে মাদকের অন্ধকার ভুবনে। শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশের চিত্র একই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়োপযোগী যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যতে অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।

তরুণদের মধ্যে সিগারেটের ব্যবহার

মূলত তরুণ এবং শিশুদের টার্গেট করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টোব্যাকো প্রোডাক্টস উৎপাদন ও বাজারজাত করছে তামাক কোম্পানিগুলো। এছাড়া সিগারেট কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ফ্লেভারের সিগারেট তৈরির কারণে কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে বিশেষ করে স্কুলকলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসব তামাকপণ্যের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সহজেই তারা আকৃষ্ট হচ্ছে। এদিকে, দেশে সিগারেট বিক্রি নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় ক্ষতিকারক এসব পণ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।

কোম্পানিগুলোর মূল টার্গেট তরুণরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে টোব্যাকো প্রোডাক্টসের ব্যবহার তরুণ সমাজের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রাস্তাঘাট, ক্যাম্পাস, তরুণদের আড্ডাস্থল, বিভিন্ন মার্কেট এবং রাস্তার মোড়ে গড়ে ওঠা দোকানে সিগারেটের ব্যবহার ব্যাপকহারে চোখে পড়ছে। আমাদের সচেতন হতে হবে যেন এসব দোকান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে না থাকে। 

তিনি বলেন, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ইতিবাচক পরিবর্তনে তরুণ জনগোষ্ঠীর অবদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। তামাক কোম্পানিগুলোও এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে যেকোনো উপায়ে তামাকপণ্য ও টোব্যাকো প্রোডাক্টে আসক্ত করে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা বৃদ্ধি করতে চায়। এজন্য তারা সিগারেটের নানা ফ্লেভার যুক্ত করে ভোক্তা এবং তরুণদের সামনে উপস্থাপন করে থাকে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে সিগারেট এখন এটা ফ্যাশনের মতো হয়ে গেছে। অসংখ্য তরুণ ছেলে-মেয়ে সিগারেটে আসক্ত হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে নেশার জগতে প্রবেশ করছে।

তিনি আরও বলেন, একটা ছেলে যখন সিগারেটের মাধ্যমে নিকোটিনে আসক্ত হবে তারপর হয়তো সে অন্য নেশার দিকে অগ্রসর হবে। আর সিগারেট কোম্পনিগুলো এমনভাবে তরুণদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে যেন তারা মুনাফা লাভ করতে পারে। কিন্তু তাদের কি কি ক্ষতি হতে পারে সিগারেট কোম্পানিগুলো তা ভেবেও দেখে না। এজন্য আমরা বলি, এটাকে রোধ করা দরকার।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় সিগারেটের দোকান বন্ধের দাবি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম আধা কিলোমিটারের মধ্যে সিগারেটের দোকান না দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী। একইসঙ্গে তিনি তামাক কারখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হলে শাস্তির বিধান দ্বিগুণ করারও দাবি জানিয়েছিলেন। 

তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ফসলি জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে। তামাক সংক্রান্ত আইন সংশোধন করতে হবে এবং তা প্রয়োগ করতে হবে। তবে এই আইন যারা প্রয়োগ করবেন তাদেরই অনেক সময় ধূমপান করতে দেখা যায়। ২০৪০-এর মধ্যে আমরা তামাকমুক্ত দেশ গর্ব তার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এ সময় তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণের একটি সংশোধিত রোড ম্যাপ তৈরি এবং নিরপেক্ষ সেল গঠনের দাবি জানান এবং তামাক কারখানাগুলোকে লাল তালিকা ভুক্ত করারও আহ্বান জানান। তার মতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় সিগারেটের দোকান বন্ধ করা সম্ভব হলেই শিক্ষার্থীদের উপর থেকে মাদকের প্রভাব কাটানো সম্ভব হবে অনেকটা।

শিক্ষার্থীরা কি বলছেন

ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতি আক্তার। তিনি আমার সংবাদকে জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য মাদক খুবই ভয়াবহ। আর মাদকের প্রথম স্তরই ধূমপান। এই ধূমপান প্রথমেই বাধাগ্রস্ত করে শিক্ষার্থীর মানসিক ও দৈহিক বিকাশ। এছাড়া মাদক ধ্বংস করে দেয় শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এক পর্যায়ে তারা হতাশ হয়ে মাদকের দাসে পরিণত হয়। তাই আমাদের উচিত শিক্ষার্থীরা যেন ধূমপানে আসক্ত না হয়। এজন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে সিগারেট বেচাকেনা বন্ধ করতে হবে। এবং আইন করা উচিত যেন কোনো শিক্ষার্থীর কাছেই ধূমপান বিক্রি না করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আরিফ হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, ছোট থেকে বড় সবাই এখন ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে সিগারেটের দোকান থাকায় এখন ছেলে-মেয়ে যে কেউ সিগারেট কিনছে, যেন সবার কাছেই এটি একটি ফ্যাশান হয়ে গেছে। এর বড় কারণ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে বিড়ি-সিগারেটের দোকান থাকা। কারণ বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এসব দোকান থেকেই দেদারসে সিগারেট কিনে থাকে। যেহেতু দোকানগুলোতে কোনো নিয়ম-নীতি থাকে না তাই শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাঁধাই থাকে না। আগে এসব দোকান বন্ধ করতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম করতে হবে। তাহলেই কিছুটা কাজে দিবে।

অভিভাবকরা কি ভাবছেন

মুঠোফোনে কথা হয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি আমার সংবাদকে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের প্রবণতা যেভাবে বেড়ে চলেছে এতে করে দুশ্চিন্তা হয় কখন আমার ছেলেও সঙ্গদোষে খারাপ হয়ে যায়। কারণ আমার ছেলের সাথে একদিন তার ক্যাম্পাস দেখতে গিয়েছিলাম কিন্তু গিয়েই দেখি ক্যাম্পাসের আশেপাশের দোকানগুলোতে অনেকেই ধূমপান করছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটি জেনেও শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিষয়টি খুবই ভাবিয়ে তোলে আমাদেরকে। কারণ ধূমপানে আসক্ত থেকেই মাদকে জড়িয়ে যায় একজন ছেলে কিংবা মেয়ে। তাই আমাদের অভিভাবকদেরকে সচেতন থাকার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

আমার সংবাদের সাথে কথা হয় আরেক অভিভাবক জেসমিন নাহারের সাথে। তার মেয়ে পড়ছে ইডেন মহিলা কলেজের সমাজকর্ম বিভাগে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আজকাল ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে, বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। তার উপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে সিগারেটের দোকানগুলো উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। আমার মনে হয় স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এছাড়া ক্যাম্পাসগুলোতে মাদকবিরোধী ক্যাম্পেইন করা, শিক্ষার্থীদের সচেতনতা, শিক্ষক ও প্রশাসনের বেশি দায়িত্বশীল হওয়া ও নৈতিক ভাবে সচেতন হওয়া ছাড়া শিক্ষার্থীদের এই পথ থেকে ফেরানোর বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেন আমিন বলেন, দেশে বর্তমানে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক রোগগুলো উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মোট মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের কারণ এ সব অসংক্রামক রোগ। উচ্চ রক্তচাপ ও হূদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের জন্য ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার অন্যতম প্রধান ঝুঁকির কারণ। এই ঝুঁকি নির্মূলের জন্য বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী-২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই সমন্বিতভাবে সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গভীর উদ্বেগের সঙ্গে প্রচলিত তামাক পণ্যসমূহের বাইরে আধুনিক কিছু পণ্যের প্রচলন পর্যবেক্ষণ করছে এবং সময়োপযোগী যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে। সিগারেটের ব্যবহারে যেমন হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপে বৈষম্যের সৃষ্টি হয় তেমনি গর্ভবতী নারী ও শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে নিকোটিন শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।

রাকিব/আরএস


 

Link copied!