ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

১৫ আগস্টের নৃশংসতা ও পরবর্তী দিনগুলো

আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত

আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত

আগস্ট ১৬, ২০২২, ০৮:০৭ পিএম

১৫ আগস্টের নৃশংসতা ও পরবর্তী দিনগুলো

সদ্য স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মানচিত্র তৈরী করেছে বাংলাদেশ। যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত এই দেশের ক্ষত মেটাতে রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু ও তাদের সহচররা মিলে। স্বাধীনতা বিরোধীরা যে সেদিনও ওৎ পেতে বসে থাকবে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসে ছিল না। আমার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি হিসেবে নয়, বরং এক নীতিবান রাজনৈতিক নেতা ও দেশপ্রেমিক হিসেবে অত্যান্ত আস্থাভাজন ছিলেন। একদিকে দলের ভেতর তার সাংগঠনিক ক্ষমতা, অন্যদিকে নৈতিকতা জাতির জনককে বিমোহিত করেছিল। কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাই নয় শুধু ওই সময়ে তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ও সামলাচ্ছিলেন। বাবাকে খুব কাছে থেকে পেয়েছি আমি। বাবাও আমাকে রাজনৈতিক জ্ঞানের গল্প, মামা বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতার ঘটনাগুলো বলতেন একটু কাজের ফাঁক পেলেই। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম তার কথা। বন্ধবন্ধুর অতি আস্থাভাজন হিসেবে ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারও ঘাতকদের টার্গেট হয়। প্রাণ দিতে হয় আমার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতসহ আমাদের পরিবারের অনেককেই। সৃষ্টিকর্তার অশেষ মহিমায় গুলিবিদ্ধ হয়েও সেদিন বেঁচে যাই আমি। 

স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকদের এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ছিল দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। ঘটনার দুই দিন আগে ফিরতে হবে। ১৪ আগস্ট ছিল আমার দাদীর মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩ আগস্ট তাই সপরিবারে দাদীর মৃত্যুদিন পালনের জন্য আমাদের বরিশাল যাওয়ার কথা। কিন্তু বাবার ব্যক্তিগত সচিব জানালেন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। বাবার কাছে দুনিয়ার সব কাজের আগে থাকতো দেশের হয়ে তিনি যে দায়িত্ব পালন করছেন, সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করা। তাই আমাদের বরিশাল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। ঘরোয়া পরিবেশে ১৪ আগস্ট আমাদের মিন্টো রোডের বাসায় (সরকারি বাসভবন) একটি মিলাদের আয়োজন করলেন। সেখানে আমাদের নিকট আত্মীয়দের বলা হলো। দুপুরের পর থেকেই বাড়িতে নিমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে থাকেন। দোয়া মাহফিল হলেও ঢাকার প্রায় সকল আত্মীয়রা একত্রিত হওয়াতে আনন্দমুখর পরিবেশ ছিল। সেদিন আমার মামী অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, সুলতানা কামাল, শেখ রাসেল, শেখ মনি, আরজু মণি, শেখ পরশ, শেখ তাপস, শেখ জামাল, রোজি জামাল, শেখ আবু নাসেরসহ অনেকেই সন্ধ্যার মিলাদে উপস্থিত ছিলেন আমাদের বাসায়। আমরা পারিবারিক বন্ধনে দারুণ সময় উপভোগ করি। আমাদের আড্ডা-গল্প চলে রাত ১১-১২ টা পর্যন্ত। এর পর অতিথিরা তাদের বাসার উদ্দেশ্যে চলে যান। খুবই স্বাভাবিক ছিল সে সময়টি।

সবাই চলে যাওয়ার পর আমরা সেদিন একটু বেশি রাতেই ঘুমাতে যাই। আনুমানিক ভোর ৪টা থেকে ৫ টার মধ্যে হবে তখন বাইরে গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। ঘাতকরা তাদের পরিকল্পনা সফল করতে হেভি মেশিনগান সংযোজিত দ্রুতগতির জিপ, প্রচুর পরিমাণে এমুনিশন ও গুলিসহ এক প্লাটুন ল্যান্সার সৈন্য নিয়ে শুরু করে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ। গুলির শব্দে বাড়ির সকলের ঘুম ভেঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে পরেন। আমরা ভাই-বোনেরা নিজেদের রুম থেকে বের হয়ে আমার বাবার রুমে যাই। তখন আমার বাবাকে দেখলাম খুবই বিচলিত এবং আমার মা (বঙ্গবন্ধুর বোন) বলেন, ভাইজানকে ফোন দাও। বাবা তখন মামাকে (বঙ্গবন্ধু) ফোন দিয়ে পরিস্থিতি তুলে ধরেন তখন ফোনের অপরপ্রান্তে থেকে মামা (বঙ্গবন্ধু) বলেন, তিনি বিষয়টি দেখেতেছেন। আমিসহ আরও অনেকেই আমার বাবার রুমে ভীতসন্ত্রন্ত হয়ে উপস্থিত হলাম। খানিক পরেই কয়েকজন সেনা সদস্য আমাদের বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা সশস্ত্র অবস্থায় আমার বাবাসহ সকলকে নিচের তলায় নামার জন্য বলে। আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি এবং তাদের নির্দেশে আমরা নিচতলার ড্রয়িং রুমে জড়ো হই। আমার বাবা তখন তাদের কমান্ডিং অফিসার এর বিষয়ে জানতে চান। আমাদের পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের ঘাতকরা একটি কক্ষে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

এসময় আমার মা ঘাতকদের জিজ্ঞেস করেছিলেন-‘বাবা তোমরা কি আমাদের মাইরা ফেলবা’ এর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ঘাতকদের নির্মম ব্রাশফায়ার। আমার পায়ে এসে গুলি লাগে এবং আমি লুটিয়ে পড়ি। আমার দুপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায় আমার বোন বেবি সেরনিয়াবাত এবং ভাই আরিফ সেরনিয়াবাত। দুজনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরেন বাবা, মা, ভাবী সাহান আরা বেগম, ভাই শহীদ সেরনিয়াবাত ও কোলে থাকা ৪ বছরের ভাতিজা সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতসহ অন্যরা। কোমরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাহান আরা বেগমসহ অন্যরা কাতরাচ্ছিলেন। ঘাতকরা এ অবস্থায় চলে যায়। এ সময় আহত বিউটি সেরনিয়াবাত রক্তাক্ত অবস্থায় বাবাকে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলে ঘাতকরা ফিরে এসে দ্বিতীয় দফায় গুলি চালায়। ঘাতকের নির্মম ১৬টি বুলেট বিদ্ধ হয় আমার বোন বেবী সেরনিয়াবাতের শরীরে। যখন আমার মনে হলো সেনা সদস্যরা আমাদের বাসা থেকে প্রস্থান করেছে তখন আমি উঠে দেখি, আমার বাবা -মা, ছোটভাই, বোন সহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে স্থানীয় থানার একটি পুলিশের গাড়ি আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং আহতদের রুম থেকে বের করে নিয়ে যায়।

আমি তখন বাইরে বের হয়ে দেখি সকাল হয়েছে। হয়েছে। আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়েছে। কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। নিরাপদ কোথাও ছুটে যেতে চাচ্ছিলাম। উৎসুক জনতা ছিল, এর মধ্যে কয়েকজন আমাকে রিক্সায় তুলে দিল। আমি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমার বড় ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এর মেয়ে কান্তা এবং ছেলে সাদিককে (বসিক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ) নিয়ে একটি রিক্সায় চড়ে পুরান ঢাকায় চলে আসি সেখানে এক আত্মীয়ের বাসায় কান্তা এবং সাদিককে নিরাপদে রেখে আমি আমার বোনের শ্বশুড় বাড়ি পক্ষের এক আত্মীয়ের ‍‍`ইউনিভার্সাল‍‍` নামে একটি প্রিন্টিং প্রেসে আশ্রয় গ্রহণ করি। কোনো আত্মীয়ের বাসার চেয়ে আমার এই জায়গাটাকেই নিরাপদ মনে হয়েছিল। যেহেতু আমার পায়ে গুলি ছিল, সেখানে আমার চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়ে। গোপনে ডাক্তার ডাকা হলো। আমার পায়ে মূলত দুটি গুলি লাগে। ডাক্তার একটি বের করতে পারলেন, আরেকটি গুলি বের করা সম্ভব হয় না। আমি সপ্তাহখানেক সেখানে অবস্থান করি এবং আমার বোন জামাই মাঝে মাঝে এসে খুব গোপনে খাবার দিয়ে যেতেন। আমার দিন চলে অর্ধাহারে-অনাহারে। আমার সাথে বাড়তি কাপড়ও ছিল না। এক কাপড় পরতে থাকলাম। তখন সারা দেশে কার্ফিউ জারি করা হয়। সেখান থেকেই আমি চট্টগ্রামে চলে যাই।

আমার এক গণিত শিক্ষক আমার বোন মারফাত খবর পেয়ে আমাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে কাঠ পরিবরহন করা একটি ট্রাকে আমি এবং আমার গণিত শিক্ষক রাতে চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে রওনা করি। আমার শিক্ষক মূলত যাওয়ার বন্দোবস্ত করেন। ১৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া ঘটনার ১৮ দিন পর আমার ঢাকার বাইরে যাত্রা করা। আমরা সকালের দিকে চট্টগ্রামের মীরসরাই নামি। সেখান থেকে গ্রামের সরু রাস্তা ধরে গ্রামের ভিতর প্রবেশ করি এবং আমার শিক্ষক এর পরিচিত একজনের বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করি। সেখানে থেকে কয়েকদিন পর ফেনী নদীর পাশে আলীপুর নামক এক গ্রামে ৮-১০ দিন অবস্থান করি। তারা আমার পরিচয় হয়তো জানতে না পারলেও কিছুটা অনুমান করতে পেরেছিল বলে আমার মনে হয়। এছাড়া দেশব্যাপী সেনাবাহিনী কিন্তু আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের খুঁজতে তল্লাশি শুরু করে ফলে আমি নিজেকে অনিরাপদ বোধ করি। যে বাড়িতে অবস্থান করছিলাম সে বাড়ির এক যুবক ছেলে নাম সবুজ, তার সহযোগিতায় কলাগাছের মাধ্যমে সাঁতার কেটে ফেনী নদী পার হয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া এসে এক বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করি। পরবর্তীতে আবার চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে নিউমার্কেট এর পাশে সুখতারা হোটেলে অবস্থান করি এবং আমার সেই শিক্ষক এর সাথে সাক্ষাত করি। আমার ওই শিক্ষক আমাকে ভারত যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং তিনি নিজেই আমার যাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেন।

তার পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে ৪-৫ দিন পর ফেনীর ছাগলনাইয়া ফিরে এসে অক্টোবর এর ১২-১৩ তারিখ বর্ডার অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করি এবং ভারতের নলুয়া নামক স্থানে বিএসএফ এর হাতে আটক হই এবং আমার পরিচয় দেওয়ার পর তারা আমাকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এর একদিন পর বিএসএফ আমাকে আগরতলা নিয়ে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি করে আমার গুলিবিদ্ধ পা এর অপারেশন করে অপর একটি গুলি বের করে। হাসপাতালে ২২-২৩ দিন কাটানোর পর কার্গো বিমানে করে কলকাতা আসি এবং দমদম বিমানবন্দর থেকে বরিশালের চিত্তরঞ্জন সুতার কলকাতার বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করি।

আমি কলকাতা যাওয়ার পূর্বে অন্যদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো না। যদিও সেদিনের হামলার বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম। আমার দু‍‍`বোন হেনা সেরনিয়াবাত এবং বিউটি সেরনিয়াবাত সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যায় আজও তারা গুলির ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে। আমি তাদের সাথেও সেভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি।আমার মামা বঙ্গবন্ধু সহ তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব,শেখ কামাল, সুলতানা কামাল, শেখ রাসেল,শেখ জামাল, রোজি জামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় এবং আমার ছোট মামা শেখ আবু নাসেরও ঘাতকের বুলেটে মারা য়ায়। এছাড়া আমার বোন আরজু মণির বাড়িতে আক্রমণ হয় এবং আমার বোন আরজু মণি এবং আমার বোন জামাই শেখ ফজলুল হক মণি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় যা আমি প্রেসে অবস্থানকালে জানতে পারি।আমার বোনের পরিবার এবং বিশেষ করে আমার ভাগ্নে শেখ পরশ (বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান)  এবং শেখ তাপস (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র) তাদের মায়াবী মুখ মনে পড়ছিল যা আমাকে আরও বেশি ব্যাথিত করে তোলে। ঘটনা জানলেও যোগাযোগ না থাকার কারণ হলো আমি তখন নিজের জীবন বাঁচানোর শঙ্কা নিয়ে অনেকটা আত্মগোপনে ছিলাম।

কলকাতা যাওয়ার পর কলকাতার নর্দান পার্ক চিত্তরঞ্জন এর বাড়িতে শেখ সেলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত হয় এবং কলকাতা থিয়েটার রোডে আমার বড়ভাই থাকতেন তার সাথে সাক্ষাত হয়। কলকাতার লেক টাউনে বিএফএফ এর ক্যাম্পে ৫ম এবং ৬ ষ্ঠ তলা দুটি ফ্লোরে বাংলাদেশ থেকে আমরা যারা রাজনৈতিক আশ্রয় এর জন্য এসেছিলাম তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে দিলি­তে ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি, সেলিম ভাই এবং শেখ মারুফ দিল্লি যেয়ে হাসিনা আপা এবং রেহানার সাথে সাক্ষাত করি তখন এক হৃদয়-বিদারক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অন্যরা দিল্লি থেকে চলে গেলেও আমি হাসিনা আপা এবং রেহানার সাথে দিল্লিতে ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত একসাথে অবস্থান করি।

তখনকার সময়ে চলমান সংকটে আমি বা আমাদের পরিবারের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ এর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্তদের পরিস্থিতি অনেকটা সংকটকালীন সময়ের মতো ছিল ফলে অনেকের আমাদের সহযোগিতা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে ইউনিভার্সাল প্রেসে অবস্থানকালে টেলিভিশন সংবাদের মারফতে জানতে পারি তৎকালীন খন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রীসভায় আওয়ামী লীগের প্রায় ৬০-৭০ জন মন্ত্রীসভায় যোগদান করে যা আমাকে ব্যথিত করে। আমার মনে আছে, নানু (বঙ্গবন্ধুর মা) মারা যাওয়ার পর আমি মামার (বঙ্গবন্ধু ) সাথে করে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। মামার সাথে মোশতাক ছিল। সেদিন লঞ্চে মামাকে জড়িয়ে কি অঝরে কেঁদেছিল লোকটা! মামাকে হত্যার পর তার এমন রূপ দেখবো ভাবিনি।

১ বছর কেটে গেল জীবনের চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। তখন দিলি­তে শেখ হাসিনা আপা এবং রেহানার সাথে আমিই ছিলাম। কারোরই মনের অবস্থা ভালো নেই। আপার কথামতোই আমি হাসিনা আপা এবং রেহানা একসাথে আজমীর শরিফ গেলাম। সেখানে প্রথম ১৫ আগস্ট উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। খাদেম কলিমউদ্দিন আমাদের নিয়ে দোয়া করেন। সেদিন রেহানা ও আমি কান্না করছিলাম। শেখ হাসিনা আপাকেও দেখি কান্না করতে। তবে তিনি বারবার আমাদের থেকে লুকাতে চান আর সান্তনা দেন।

আমি রাজনৈতিক আশ্রয় শেষে ৪ বছর পর দেশে ফিরে আসি। আমি প্রথমে ঢাকা আসি এর পর বরিশাল এর কালিবাড়ি আমাদের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি কিন্তু তখন জিয়াউর রহমান বাড়িটি সিজ করে নেয় ফলে আমাদের বাড়িতে আমাদের প্রবেশাধিকার না থাকায় সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এবাড়ি-ওবাড়ি করে আমাকে নিদারুণ কষ্টে সময় পার কারতে হয়েছিল। আমার বাবা নীতিবান রাজনীতিক হওয়ায় আমাদের জন্য বিশেষ ধন-সম্পদ রেখে যেতে পারেননি। স্বভাবতই অর্থনৈতিক চাপ এসে পড়ে।  জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমি খুলনাতে নিজের পরিচয় গোপন রেখে ব্যবসা শুরু করি। এছাড়া তৎকালীন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকায় আমাদের পরিবার এর উপর যথেষ্ট চাপ ছিল। স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারছিলাম না।

সেখান থেকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের মাধ্যমে আজকের বাংলাদেশ। এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে, বারবার প্রমাণ করেছে। যে মানুষগুলোকে সেদিন আমরা হারিয়েছি, ঘাতকরা হয়তো তাদের নাম, স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে চেয়েছিল সেদিন। কিন্তু তাদেরকে আরও মৃত্যুঞ্জয়ী করে গেছে। বঙ্গবন্ধু তার সুযোগ্য কন্যাদ্বয় রেখে গেছেন। তার জ্যেষ্ঠ কন্যা সামনে দাঁড়িয়ে পিতার সোনার বাংলা বাস্তবায়নে নিজেকে উজার করে দিচ্ছেন। বাবার মতোই জনদরদী এমন নেত্রী দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেওয়ার ব্রত গ্রহণ করেছেন। শেখ পরিবার এবং সেরনিয়াবাত পরিবার সেদিন পথভ্রষ্ট কিছু সেনা কর্মকর্তা দ্বারা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা কোনোদিনও পূরণ হওয়ার নয়। সেদিনের একজন ভুক্তভোগী হয়েও সর্বদা এদেশের মঙ্গল কামনা করি। দেশের যেকোনো প্রয়োজনে নিজেকে উজাড় করে দিতে সর্বদা বদ্ধপরিকর। এই মাটিকে ভীষণ ভালোবাসি।
 

Link copied!