Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

রাগ নিয়ন্ত্রণে ইসলামিক কয়েকটি উপায়

নাজমুল হাসান সাকিব

নাজমুল হাসান সাকিব

জুন ২৬, ২০২২, ০২:১৫ পিএম


রাগ নিয়ন্ত্রণে ইসলামিক কয়েকটি উপায়
ছবি-প্রতীকী

রাগ, গোস্বা, ক্রোধ মূলত একই অর্থবোধক শব্দ। স্বার্থহানি বা করো থেকে তিরস্কৃত হওয়ার কারণে প্রতিশোধ গ্রহণের ইচ্ছায় মানুষের মাঝে যে আবেগ আর উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তাকে ক্রোধ বা রাগ বলে। আল্লামা ইমাম বায়যাবী রহ. রাগ গোস্বার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-অর্থাৎ- ‘প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় সংকল্পের সময় অন্তরে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তাকেই ক্রোধ বলে’। (সূরা ফাতিহার ৭নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।)

গোস্বার হাকীকত: রাগ-গোস্বা। এটি মানুষের একটি স্বভাবগত বিষয়। যা মানুষের অন্তরে সৃষ্টি হয়ে থাকে। ফলে তার বহিঃপ্রকাশ হয় কখনো হাত পা থেকে, আবার কখনো মুখ থেকে অশ্লীল কথা আর কটুবাক্যের মাধ্যমে, আবার কখনো কাজে-কর্মে, আখলাক-চরিত্রেও এর প্রকাশ হয়।

ক্রোধগ্রস্থ ব্যক্তি মোট চার প্রকার: হাদিস শরীফে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার রাগ সম্পর্কে আলোচনাকালে বলেন যে, ক্রোধগ্রস্থব্যক্তি চার ধরনের। যাদের প্রথম ও দ্বিতীয়জন না প্রশংসনীয়, না নিন্দনীয়। কেননা তাদের রাগ আসা ও যাওয়া উভয়টির ধরণ এক। অর্থাৎ- প্রথমজন হলো এমন যে, তার রাগ আসে তাড়াতাড়ি আবার তাড়াতাড়ি চলে যায়। আর দ্বিতীয়জন হলো এমন যে, তার রাগ আসা ও যাওয়া উভয়টিই হয় বিলম্বে। তবে হ্যাঁ এই চার ব্যক্তির মধ্যে যার রাগ আসে দেরীতে কিন্তু যায় তাড়াতাড়ি; সেই সর্বাধিক উত্তম। পক্ষান্তরে যার রাগ আসে তাড়াতাড়ি কিন্তু যায় দেরীতে; সে সর্বাধিক নিকৃষ্ট। (আহমাদ: ৮/৪৬-১১৫২৫)

নবীজি সা. এর নম্রতা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের সাথেও ইনসাফের আচরণ করতেন। দাওয়াত ও ইসলাহের ময়দানে তাদের লাঞ্ছনা ও কটু কথা, নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করতেন। তাদের সব ধরনের মন্দ আচরণ উপেক্ষা করে চলতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অর্থ: ‘আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি’। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭) হজরত আয়েশা রাযি. বলেন, ইহুদীরা একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল আর বলছিল, ‘আস-সা মু আলাইকুম’ (আপনার মৃত্যু হোক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কী করলেন! তিনি ক্রোধান্বিত না হয়ে শান্ত ভাষায় বললেন, ‘ওয়া আলাইকুম’। কিন্তু আয়েশা রাযি.-এর সহ্য হলো না। তিনি তাদের কথা শুনে ক্রোধ সংবরণ করতে পারলেন না। তিনি বললেন, ‘আস-সা মু আলাইকুম’ (তোমাদের বরং মৃত্যু হোক) আল্লাহ তোমাদের অভিশপ্ত করুন এবং তোমাদের প্রতি ক্রোধের আচরণ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আয়েশা! শান্ত হও। ধৈর্য ধারণ কর। সবার সঙ্গে নরম ও কোমল আচরণ করতে হবে। কঠোরতা ও নিন্দনীয়তা থেকে বিরত থাকতে হবে।  আয়েশা রাযি. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি শুনেননি তারা কী বলেছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের কথার উত্তরে আমি কী বলেছি সেটা কি তুমি শুননি? আমি তাদের কথা তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছি। অর্থাৎ- তোমাদের জন্যও সে দোয়াই কবুল হোক যা তোমরা আমার জন্য করেছ। আর আমার দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন, তাদের দোয়া নয়। কটু কথার জবাবে কটু কথা বলার কী প্রয়োজন আছে? আল্লাহ তায়ালা কি বলেননি যে, অর্থ: ‘মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে’। (সূরা বাকারা, আয়াত: ৮৩)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রাগ: অবশ্য কখনো-কখনো আবার কঠোর হতে হয়। এমনকি দ্বীন ধর্মের ক্ষেত্রে অলসতা ও উদাসীনতা পরিলক্ষিত হলে কখনো রাগ করাটাই হয় প্রজ্ঞার দাবি। তখন রাগ না করলে, কঠোর না হলে সচেতনতা জাগ্রত হয়না। বস্তুত কোমলতার স্থানে কোমলতা আর কঠোরতার ক্ষেত্রে কঠোরতা। তথা প্রতিটি বিষয়কে তার যথাস্থানে রাখার নামই হলো হিকমত বা প্রজ্ঞা। মহানপ্রভু ঘোষণা করেন, অর্র্থ: ‘তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভ‚তিশীল’। (সূরা আল ফাতহ, আয়াত: ২৯) 

রাগ না করার উপদেশ: হাদিসে শরীফে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে আরজ করলেন, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ করো না’। লোকটি উপদেশ কয়েকবার কামনা করলে রাসূল সা. প্রত্যেক বারই বললেন, ‘রাগ করো না’। (বুখারী: ২/৯০৩- ৬১১৬)

রাগের লাভ-ক্ষতি: রাগ করো না! উত্তেজনা অবস্থায় ধৈর্যকে নিজের সম্বল বানাও। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, “ঈমান ও পরিতৃপ্ত থেকেই আসে শান্তিসাহায্য। আর সন্দেহ ও ক্রোধ থেকে আসে দুশ্চিন্তা-দুঃখ ও কষ্ট। তিনি আরও বলেন, আর ধৈর্যশীলরাই সর্বোত্তম লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।” আরেকটি কথা হলো, আপনি প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছায় রাগের বশীভূত হয়ে কাউকে হত্যা করে কিসাসের বিচার থেকে নিরাপদ থাকবেন। রাগ করো না! তোমার আকল-বিবেক হলো তোমার সুখ্যতি, তোমার দ্বীনদারী। কিন্তু এখন যদি তুমি রাগের মাথায় কারো সাথে তর্কে লিপ্ত হও, আর সাথে সাথে লাগামহীনভাবে গাল-মন্দ শুরু করো তাহলে আর তোমার এসবের কিছুই বাকী থাকল না।   রাগ করো না! কারণ তুমি সুস্থতায় রয়েছ, নিরাপদে আছো এবং মানসিক স্থিরতায় জীবন-যাপন করছ। সুখ-সমৃদ্ধিতে বেঁচে আছো। পক্ষান্তরে রাগ হলো জলন্ত কুন্ডলীর ন্যায়, যা দাউ-দাউ করে জ্বলে। এতে তোমার জীবন পুরে জ্বলে যাওয়ার আশক্সক্ষা আছে। রাগ-গোস্বা অসুস্থতা ডেকে আনে। রাগ করো না! কারণ রাগের সাথে বহু রোগ মিশ্রিত। যেমন: বহুমুত্র, রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি।  রাগ করো না! কারণ যারা রাগ দমন করে আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, এবং তাদেরকে খাঁটি মুমিন বলে সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অর্থাৎ ‘যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন’। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)

সুতরাং কেউ এই কামনা করে না যে, আমি একমুহূর্তের চাহিদা পুরণ করে সারা জীবন বরবাদ ও নষ্ট করি, বরং সবার কামনা যে, সফলতা অর্জন করি। যাকে অল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন তারচেয়ে আর সফল কে? রাগ করো না! কারণ জীবন সংগ্রামে আমরা সবাই ভাই-ভাই। সুতরাং ভাই ভাইয়ের সাথে পরস্পরে দন্ধ কিসের?  আল্লাহ পাক বলেছেন, অর্থ: ‘মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই; সুতরাং তোমরা ভ্রাতৃগণের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর’। (সূরা হুজরাত, আয়াত: ১০) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অর্থাৎ “এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই।” (আহমাদ: ৪/২৩২- ৫৬৪৬) কেননা আমরা সবাই একই মা-বাবা তথা আদম আ. ও হাওয়া আ. থেকে এসেছি। সুতরাং তুমি রাগ-জেদ দ্বারা এই ভ্রাতৃত্বকে নষ্ট করো না। রাগ করো না! কেননা সবধরনের আক্রমনাত্মক, হিংসাত্মক কার্যাবলী থেকেই রাগ সংঘটিত হয়। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে, অর্থ: ‘(আশ্রয় চাই) অনিষ্ট হতে হিসুকের, যখন সে হিংসা করে।’ (সূরা ফালাক, আয়াত: ০৫)

আর মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববী রহ. হাসাদ বা ঈর্ষা প্রসঙ্গে বলেন, ‘অন্যের প্রাপ্ত নেয়ামতের অপসারণ কামনা করাই হলো, হাসাদ বা ঈর্ষা। আর এটি হারাম।’ হাদিসেপাকে এসেছে, অর্থাৎ ‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা পরস্পরে হিংসা করো না এবং পরস্পরের থেকে স্বীয় মুখ ফিরিয়ে রেখো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করোনা; বরং তোমরা এক আল্লাহর বান্দা ও পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও’। (মুসলিম: ২/৩১৬- ২৫৬৩) আর কোন মুসলমানের পক্ষে অন্য মুসলমান ভাইয়ের প্রতি তিন দিনের বেশী সময় সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখা জায়েয নেই। (মুসলিম: ২/৩১৬- ২৫৬০) অন্য একটি হাদিসে আছে, অর্থাৎ ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, হিংসা মানুষের সৎকর্ম সমূহ এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেমন খেয়ে ফেলে আগুন (খড়-খুটা) কাঠকে’। (ইবনে মাজাহ: পৃ. ৩১০)

রাগ দমন করার লাভ: সুন্দরী হুর পুরস্কার: হাদিস শরীফে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার নিজের রাগকে সংযত করে রাখে এমন অবস্থায় যে, সে নিজের রাগ দ্বারা নিজের মনোবৃত্তিকে চরিতার্থ করতে পারে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে সৃষ্টিকুলের সম্মুখে ডাকবেন এবং তার পছন্দমতো যে হুরকে সে নিতে চায়, সে হুরকেই বেছে নেওয়ার জন্য তাকে অনুমতি দেওয়া হবে।” (তিরমিযী: ২/২২- ২০২১) হাদিস শরীফে এসেছে হজরত উসমান ইবনে আবু ত্বালেব রা. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, অর্থাৎ ‘বেহেশতের হুরগণ এক জায়গায় সমবেত হয়ে বুলন্দ আওয়াজে এমন সুন্দর লহরীতে গাইবে, সৃষ্ট জীব সেই ধরনের লহরী কখনো শুনতে পায়নি। তারা বলবে, ‘আমরা চিরদিন থাকবো, কখনো ধ্বংস হবো না। আমরা সর্বদা সুখে-সানন্দে থাকবো, কখনো দুঃখ ও দুশ্চিন্তায় পতিত হবো না। আমরা সর্বদা সন্তুষ্ট থাকবো, কখনো নাখোশ হবো না। সুতরাং তাকে ধন্যবাদ, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি।’ (তিরমিযী: ২/৮৪-২৫৬৪, হাদিসটি দূর্বল।)

ক্রোধ দমনে নূর অর্জন হয়: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রাগ-গোস্বাকে প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখা  সত্তে¡ও তা দমন করে, আল্লাহ তায়ালা তার বিনিময়ে তার অন্তরে ঈমান ও আমান তথা ঈমানের জ্যোতি ও প্রশান্তি দ¦ারা পরিপূর্ণ করে দেন। (আবু দাউদ: ২/৬৫৯)
প্রকৃত বীর: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদের জিজ্ঞেস করলেন, অর্থাৎ তেমরা কি জানো প্রকৃত বীর কে? (সাহাবায়ে কেরাম বলেন) আমরা বললাম, যে লোকদেরকে ধরাশায়ী করে সেই প্রকৃত বীর। নবীজি বললেন, না; বরং যে নিজেকে রাগের সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সেই প্রকৃত বীর। অর্থাৎ- ব্যক্তি যখন খুব রাগান্বিত হয়, চেহারা লাল হয়ে যায়, লোম দাঁড়িয়ে যায়, অতঃপর উক্ত রাগকে দমন করে। (ইবনে কাসির: ১/৪০৫, সূরা আলে ইমরানের ১৩৪ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।) অপর এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন সেই ব্যক্তি প্রকৃত শক্তিশালী বীর নয়, যে মানুষকে আছাড় দেয়; বরং সেই ব্যক্তিই প্রকৃত শক্তিশালী বীর, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম। (বুখারী: ২/৯০৩-৬১১৪)  অর্থাৎ শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রসংশনীয় বীরত্বের মাপকাঠি দৈহিক শক্তির নাম নয়। বরং ক্রোধ-গোস্বা সংযম করার আত্মিক শক্তিই হলো মাপকাঠি। যেমনটি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণিত। কেননা, শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ-লড়াই করার চেয়ে নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা বেশি কঠিন।

রাগ দমন করার পন্থা: কোরআন এবং হাদিস থেকে উৎঘাটিত কিছু দোয়া এবং পদ্ধতি যা দ্বারা রাগ নিয়ন্ত্রণ হয়। নিম্নে তার কিছু উল্লেখ করা হলো-

১.তাআউয পড়া: যেমনটি আল্লাহ তায়ালা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে শিক্ষা দিয়েছেন। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বর্ণনায় এসেছে, অর্থ: বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্র্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা হতে।’ (সূরা মু’মিনূন, আয়াত: ৯৭) তাছাড়াও বুখারী শরীফের টিকায় উল্লেখ আছে, ‘শয়তানের কলা-কৌশল দূর করার জন্য সবচেয়ে ধারাালো তরবারী হলো তাআউয পড়া।

২.ঠান্ডা পানি পান করুন, অজু কিংবা গোসল করুন। হাদিসেপাকে স্পষ্ট এসেছে, হজরত আতিয়্যাহ ইবনে উরওয়াহ সা’দী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘রাগ শয়তানের পক্ষ হতে আসে এবং শয়তানকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায়। সুতরাং যখন তোমাদের কারো রাগ আসে, তবে সে যেন অজু করে’। (আবু দাউদ: ২/৬৬০)
অর্থাৎ রাগ হলে মানুষের শরীরে একটা উত্তাপ সৃষ্টি হয়। শিরা-উপশিরা ফুলে ওঠে। উত্তপ্ততা অগ্নিরই একটি রূপের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আর আগুন পানি দ্বারা নির্বাপিত হয়। অতএব, কারো রাগ সৃষ্টি হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা নিবারণের জন্য সাথে-সাথে অজু করার নির্দেশ দিতেন।

৩.রাগী দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে পড়বে, আর বসা থাকলে শুয়ে পড়বে। যেমনটি হাদিস শরীফে এসেছে, হজরত আবু যর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘যখন তোমাদের কারো রাগ বা ক্রোধ হয়, তখন সে যেন বসে পড়ে। তাও যদি রাগ না কমে তবে সে যেন চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে’। (আবু দাউদ: ২/৬৫৯) 

রাগের সময় দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে যাওয়া কিংবা শুয়ে পড়ার নির্দেশ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, শয়তানের প্ররোচনা বা স্বভাবগত প্রতিক্রিয়া হলো, গর্ব-অহংকার সৃষ্টি করা। আর বসা কিংবা শোয়ার মধ্যে ইঙ্গিত হলো, মাটির সাথে মিশে নিজেকে বিনয়ের সাথে মাটি করে ফেলা এবং সাথে-সাথে মনের মধ্যে এ ধারণা সৃষ্টি করা যে, আমি তো মাটিরই তৈরী। মাটির স্বভাব তো নি¤œগামী। কাজেই রাগ-ক্রোধ যা শয়তানের স্বভাবগত প্রক্রিয়া সেটি আমার মাঝে রাখা উচিত নয়। 

৪.যার উপর রাগ হয় তাকে নিজ সম্মুখ হতে সরিয়ে দিন অথবা নিজেই অন্যত্রে সরে যান।

৫.রাগী এ চিন্তা করবে যে, সে আমার নিকট যতটুকু অপরাধী এর চেয়েও বেশি আমি আল্লাহর নিকট অপরাধী। অতএব, আমি যেমন কামনা করি আল্লাহ তায়ালা আমাকে ক্ষমা করে দিক ঠিক তেমনি সেও কামনা করে যেন আমি তাকে ক্ষমা করে দেই। এরকম একটি চিন্তা সে মনে মনে করবে। 
আর মহান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার বাহিরে কিছুই হয় না। সুতরাং যা কিছু হয়েছে আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছায়ই হয়েছে। বিধায় আল্লাহ্র ইচ্ছার বিরুদ্ধে সংঘর্ষ করার আমি কে?

৬.ক্রোদ্ধ অবস্থায় চুপ থাকুন। যাতে করে রাগ আপনার উপর বিজয়ী না হতে পারে। অন্যথায় আপনার শ্রেষ্ঠত্ব রইলো কোথায়? এবং সর্বদা রাগ দমনকারীদের পুরস্কারের কথা স্মরণ করুন। তাছাড়া এক হাদিসে এসেছে, অর্থাৎ- যখন তুমি ক্রোদ্ধ হবে তখন চুপ থাকবে। (আল-আদাবুল মুফরাদ, হা. ১৩২০)

লেখক: প্রাবন্ধিক ও শিক্ষার্থী, (ইফতা ২য় বর্ষ) আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ (এ এম আই)।
 

Link copied!