ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

অজ্ঞান পার্টির তিন টার্গেট

এম এইচ তানভীর

এম এইচ তানভীর

জুলাই ৪, ২০২২, ০২:৫১ এএম

অজ্ঞান পার্টির তিন টার্গেট

আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশেই সক্রিয় হয়ে উঠছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা। কোরবানির পশু ব্যবসায়ী ও ক্রেতারাই এদের প্রধান টার্গেট। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিংসেন্টারের আশপাশেও ওঁৎপেতে থাকে সংঘবদ্ধ চক্রগুলো। 

ঈদ উপলক্ষে কোরবানির পশুসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার জন্য অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকা বহন করেন। এমন ব্যক্তিদেরই টার্গেট করে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা বা মূল্যবান সম্পদ। এতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন অনেক ভুক্তভোগী। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। 

সম্প্রতি ঈদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অজ্ঞান পার্টির ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে চক্রের আরও শতাধিক সদস্য। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা চক্রের সদস্যরাই আসন্ন ঈদে ছিনতাইয়ের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। 

এদিকে কোরবানি ঈদ সামনে রেখে তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। একই সাথে পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে জাল মুদ্রার কারবারিদের ঠেকানোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি সদর দপ্তরে সভা ডেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। 

এর আগেই র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয় মলম পার্টি ও ছিনতাই চক্রের ২৬ সদস্য। গ্রেপ্তারকালে  তাদের কাছ থেকে অজ্ঞান ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহূত বিষাক্ত মলম, নগদ টাকা ও দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। র্যাব জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় ঘোরাফেরা করে সংঘবদ্ধ এ চক্রের সদস্যরা। সহজ সরল যাত্রীদের টার্গেট করে কখনো তাদের ডাব, কোমল পানীয় কিংবা পানির সাথে বিষাক্ত চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। 

আবার কখনো যাত্রীবেশে বাস ও ট্রেনে চড়ে যাত্রীদের পাশে বসে তাদের নাকের কাছে চেতনানাশক ওষুধ ভেজানো রুমাল দিয়ে অজ্ঞান করে টাকা-পয়সা লুটে নেয়। এ ছাড়া কখনো ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মুখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুঁড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে যন্ত্রণায় কাতর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়।

সর্বশেষ রাজধানীর গুলিস্তানে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সামাদ (৩৪)। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। চক্রটি আব্দুস সামাদের সাথে থাকা মোবাইল ও প্রায় ২০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। শ্যামলী থেকে শুভযাত্রা পরিবহনে গুলিস্তান যাওয়ার সময় বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন তিনি। 

এর আগে বুধবার রাজধানীর ওয়ারী থানার কাপ্তানবাজার এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে কবির হোসেন (২৬) নামে এক ডেলিভারিম্যান সাড়ে তিন লাখ টাকা খুইয়েছেন। কবির হোসেন কুইক লিংক আইটি কোম্পানিতে ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করেন। ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জ থেকে কালেকশন করে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে উৎসব পরিবহনে কাপ্তানবাজারে নামেন। পরে তাকে কাপ্তানবাজার থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে পাকস্থলী ওয়াশ করতে হয়। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে ঢামেকে শতাধিক ব্যক্তি অজ্ঞান ও মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত ২৭ জুন রাজধানীর বাড্ডা ও শাহবাগ এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া তিনজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। 

এর আগে ২৬ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে এসে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় বাস কাউন্টারের সামনে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন মোহাম্মদ ইদ্রিস নামের সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। পরে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। এ ছাড়া গত ২২ জুন মিরপুর এলাকায় কাপড় কিনতে এসে মো. ফারুক (৪৩) নামে এক ব্যবসায়ী অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তিন লাখ টাকা খুইয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ফারুক সাভারের জিরাবো বাজার এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করেন। কাপড় কেনার জন্য তিন লাখ টাকা নিয়ে মিরপুরে এসে অজ্ঞান পার্টি চক্রের খপ্পরে পরেন তিনি। 

এর একদিন আগেই বনানীর কাকলিতে ছোট ভাইয়ের বিদেশে যাওয়ার টাকা জমা দিতে এসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামে এক কৃষক। তার কাছে থাকা দুই লাখ টাকা নিয়ে যায় প্রতারক চক্রটি। শফিকুল ইসলাম ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। 

শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, অজ্ঞান পার্টি বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে সারা দেশেই। গত ২৮ জুন ফরিদপুরের গোয়ালন্দ ঘাট থানাধীন এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টি চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে র্যাব-৮ এর সদস্যরা। এই চক্র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসে চলাচলরত যাত্রীসহ গরু ব্যবসায়ীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করত। 

এর আগে ২২ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢাকার তিতুমীর কলেজের ছাত্র ইউসুফ রেজা ওরফে রথি (২৪) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ওই দিন দুপুরে বাসা থেকে মোটরসাইকেলযোগে ইউসুফ রেজা পূবালী ব্যাংকের দাউদকান্দি শাখায় ৫০ হাজার টাকা তুলতে যান। 

পরে বিকালে তাদের এলাকার মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পাশে পড়ে ছিল তার মোটরসাইকেলটি। এ সময় ইউসুফের মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছিল। ওই দিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢামেকে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ এসব ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও ঈদকেন্দ্রিক ছিনতাইয়ের ঘটনা যাতে ঘটাতে না পারে সে জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং সবকটি চক্রের সদস্যকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। গোয়েন্দা নজদারি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অজ্ঞান পার্টির চক্রগুলোকে আইনের আওতায় আনতে বিভিন্ন অভিযান চালাচ্ছেন তারা। 

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় কোরবানির পশুর হাটগুলোতে গরু আসতে শুরু করেছে। এই মোক্ষম সুযোগটি কাজে লাগাতে মরিয়া অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির সদস্যরা। তারা গরুর বেপারীদের টার্গেট করে মাঠে নেমেছে। এ ছাড়াও পশুর হাটকেন্দ্রিক অনেকে নগদ টাকা বহন করে থাকেন। তাই এই সময়ে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টি চক্রের অপরাধীদের অপতৎপরতাও বেড়ে যায়। সুযোগ বুঝে মানুষকে বিষাক্ত পানীয় সেবন করিয়ে বা বিষাক্ত স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। 

এসব বিষাক্ত মেডিসিনে অনেক সময় ভুক্তভোগীরা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তানভীর ইসলাম বলেন, ‘এ চক্রগুলো মানুষকে অচেতন করতে অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে তরল খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এছাড়াও ডায়াজিপামসহ বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ব্যবহার করা হয়। সমস্যা হলো, দ্রুত অবচেতন করার জন্য তারা মাত্রাতিরিক্ত মেডিসিন ব্যবহার করে। কিন্তু তারা জানে না এর ফলাফল কী হতে পারে। ওভার ডোজে ভুক্তভোগীদের মৃত্যুরও আশঙ্কা থাকে।’

অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সামাজিক অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ সব অপরাধ সবসময় বেড়ে থাকে। এর অন্যতম কারণ এ সময়গুলোতে নগদ টাকার ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। পশু কেনাটাকা বা ঈদের নানা সামগ্রী কেনাকাটাসহ নানা কারণে প্রায় সবার কাছেই কমবেশি মোটা অঙ্কের টাকা থাকে। ফলে ঈদসহ এ ধরনের উৎসবগুলোকে বেশি টার্গেট করে থাকে পেশাদার অপরাধীরা।’ 

তিনি বলেন, ‘এ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে কিছু দিন পরপরই অভিযান চালানো হয়, গ্রেপ্তার হয় ও জেলেও পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের সঠিকভাবে পুনর্বাসন করা হয় না। তারা বের হয়ে আবার কোনো না কোনোভাবে এই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ছিনতাইসহ এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধের পাশাপাশি তাদের সঠিকভাবে পুনর্বাসন করতে হবে। আর এলাকায় এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিং শক্ত করা দরকার। সাধারণ মানুষেরও সচেতন হওয়া দরকার। মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সাবধানে চলাফেরা করা প্রয়োজন। 

তবে আসন্ন ঈদে দেশজুড়ে পশুরহাট কিংবা ব্যাংক ও বিভিন্ন মার্কেট এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা রোধে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের কোনো রকমের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কি-না কিংবা দেশজুড়ে এসব চক্রের অপতৎপরতা রোধের বিষয়ে জানতে চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) কামরুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি বিদেশে আছেন জানিয়ে বক্তব্য দেয়া সম্ভব নয় বলে জানান।

Link copied!