Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪,

অসুস্থ খালেদায় মহাশঙ্কা

আবদুর রহিম

মে ৩, ২০২৩, ০৯:৩৮ এএম


অসুস্থ খালেদায় মহাশঙ্কা
  • হাঁটার সক্ষমতা নেই খালেদা জিয়ার। চলাফেরা হুইলচেয়ারে। রয়েছে লিভার সিরোসিসও। এ পরিস্থিতিতে আবারও তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে
  • সারা দেশে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ আওয়ামী লীগের

সরকার খালেদা জিয়াকে নিয়ে গভীর চক্রান্ত করছে
—মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপি মহাসচিব

সরকার জিয়া পরিবারকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
—মো. শরীফুল আলম
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, বিএনপি

খালেদা জিয়ার এই পরিস্থিতির পেছনে সরকার দায়ী
—রেহেনা আক্তার রানু
নির্বাহী সদস্য, বিএনপি

ভালো নেই সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আবারও তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে। ৭৭ বছরের বেশি বয়সি খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা না হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা শঙ্কিত রয়েছেন। দেশের মানুষও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। অনেক আগে থেকেই তিনি হাঁটার সক্ষমতা হারিয়েছেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে হুইলচেয়ারই তার একমাত্র ভরসা। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারছেন না। এর মধ্যে তার লিভার সিরোসিসও ধরা পড়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে—  চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা দেশের চিকিৎসায় সম্ভব নয়। তার ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ প্রয়োজন। মেডিকেল বোর্ড পরিবারকে ঝুঁকির বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। গত বছর নভেম্বরে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে বলে জানায় মেডিকেল বোর্ড। তখন তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ৮১ দিন টানা চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর থেকেই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। সার্বক্ষণিক চিকিৎসকদের নজরে থাকতে হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বারবার হাসপাতালে আনতে হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তিনি গৃহবন্দি রয়েছেন। যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সর্বশেষ তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ৭৭ বছর বয়েসি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারসহ নানা রোগে ভুগছেন। এ নিয়ে সম্প্রতি রাজনীতিতেও বািবতণ্ডা চলছে।

সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে আছেন। তার হূৎযন্ত্র, লিভার (যকৃৎ) ও কিডনির বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। আরও কিছু পরীক্ষার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেসব পরীক্ষা করানোর প্রক্রিয়া চলছে। নতুন পরীক্ষাগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরপর জানা যাবে খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে কবে বাসায় ফিরতে পারবেন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করছে। তারা এখন রাজনীতির আর কোনো ইস্যু খুঁজে পাচ্ছে না। তাই সুস্থ খালেদা জিয়াকে অসুস্থ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, আসলে সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। এ জন্য তাকে বন্দি রেখে তিলে তিলে শেষ করে দিতে চায়। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও সুস্থতায় ফিরতে দিতে চায় না সরকার। এমন অসুস্থতায় তাকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাধা দেয়ায় সরকারের গভীর ষড়যন্ত্রও দেখছে দলটি। এদিকে নেত্রীর অসুস্থতায় সারা দেশের নেতাকর্মীর মাঝেও মহাদুশ্চিন্তার চাপ পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই নেত্রীকে নিয়ে আবেগাপ্লুত ও সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও  কিশোরগঞ্জ বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়া ভালো নেই। তিনি অনেক অসুস্থ। আমরা যারা দলীয় নেতাকর্মী রয়েছি, তারা বিষয়টি নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। আমরা বারবার বলেছি খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। মেডিকেল বোর্ডও বলেছে, তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অনেক ধরনের জটিলতা রয়েছে; তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু এ সরকার সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করছে। আসলে সরকার জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য বড় ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। খালেদা জিয়াকে আদালতকে ব্যবহার করে গৃহবন্দি করে রেখেছে, চিকিৎসাসেবাও দিচ্ছে না।  অন্যদিকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও দেশে আসতে দিচ্ছে না।  একের পর এক মামলা দিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চায়।  আসলে এই সরকার কী করতে চায়, এটি এখন সারা দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট। এ সরকার চায় খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে। এ ব্যাপারে  আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে শিগগিরই বিদায় করা হবে। খালেদা জিয়া-তারেক রহমান আবারও এই দেশের মানুষের নিরাপত্তা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবেন বলে জানান এই নেতা। 

বিএনপি নির্বাহী কমিটির সহ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য রেহেনা আক্তার রানু আমার সংবাদকে বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। এটা দেশবাসী জানে। তার এমন পরিস্থিতির পেছনে এ সরকারই দায়ী। এ সরকারের কারণে খালেদা জিয়া দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না। আল্লাহ না করুক, আমাদের নেত্রীর যদি কোনো ধরনের অঘটন ঘটে, তাহলে এ সরকারকে এবং আওয়ামী লীগকে সব দায় বহন করতে হবে। সত্যি বলতে ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে ভয় পায় বলে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়ার ওপর অমানবিক নির্যাতন করছে। এ সরকার এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেউলিয়া সরকার নেতিবাচক কথা বলবেই।  সব ধরনের নিয়মকে বৃদ্ধাঙুল দেখাবে— এটাই স্বাভাবিক।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, রোগীর অসুস্থতা সম্পর্কে মিডিয়ায় বলা ঠিক নয়। খালি এটুকু জানানো যেতে পারে যে, তার (খালেদা জিয়া) কিছু শারীরিক অসুস্থতা, হার্টের জটিলতা, লিভার-কিডনির জটিলতা ছিল, এখন তা আরও বেড়েছে। এছাড়া, লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানসহ অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান জাহিদ হোসেন।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেশ অসুস্থ। আজকে নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। আপনারা জানেন, একবার তাকে চার মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে এবং তখনও আপনাদের বারবার বলেছি তিনি খুব জটিল কিছু রোগে ভুগছেন। তার মধ্যে লিভার-সংক্রান্ত জটিলতা আছে, হূদরোগ ও ডায়াবেটিসের জটিলতা আছে। এ বিষয়গুলো সবাই জানেন। এরপরও যদি তারা (সরকার) এসব কথাবার্তা বলে, অপপ্রচার করে, তাহলে এসবের অর্থই হচ্ছে তারা আবারও কোনো গভীর চক্রান্ত করছে। যে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে তারা আবার কারাগারে নিতে পারে কি না— সেই পরিকল্পনা-চক্রান্ত হয়তো চলছে। এসব বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
 

Link copied!