Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ঘরোয়া ফুটবলে মাঠে দর্শকখরা

আহমেদ হৃদয়

আহমেদ হৃদয়

মে ২৭, ২০২৩, ১১:৫৫ এএম


ঘরোয়া ফুটবলে মাঠে দর্শকখরা
  • ঝুলে আছে নারী ফুটবলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ
  • ফেডারেশনের সঙ্গে ‘কে স্পোর্টসের’ আর্থিক জটিলতা

ফেডারেশন ঘরোয়া লিগকে ব্র্যান্ডিং করতে পারছে না। মানুষকে জানানো তাদেরকে মাঠে নিয়ে যাওয়া, মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া— এসব ফেডারেশনের দায়িত্ব। এদিক থেকে ফেডারেশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
—আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার সমালোচনা যেন বাংলাদেশের ফুটবলের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে আছে। তাইতো একের পর এক সমালোচনায় টালমাটাল দেশের ফুটবল অঙ্গন। যদি কোনো দর্শককে প্রশ্ন করা হয়, ফুটবলে ঘরোয়া লিগের দল কয়টি? হয়তো অধিকাংশ লোকই ভড়কে যাবে। তবে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা-লিগার ম্যাচ কবে কখন; তা হয়তো অধিকাংশ খেলাপ্রেমীই চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবেন। তবে বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগের খেলা কোথায় হয়, কখন হয়— তা হয়তো অনেকেই জানেন না। অথচ এ দেশের মানুষ ফুটবলকে কতটা ভালোবাসে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটা সময় ছিল, বড় দলের খেলার সময় আবশ্যিকভাবে ‘স্টেডিয়াম’ নামের একটা পত্রিকা বের হতো। খেলা শুরুর আগেই ১০ হাজারের অধিক কপি কেবল গ্যালারির মধ্যে এবং বাইরে বিক্রি হয়ে যেত। মফস্বল শহরের যুবকরা দল বেঁধে বাস রিজার্ভ করে ঢাকায় চলে আসত খেলা উপভোগ করার জন্য। গ্যালারিভর্তি ছিল দর্শক। স্টেডিয়ামের আনাচে-কানাচে সব স্থানে নামত দর্শকদের ঢল। কিন্তু ফুটবলের সেদিন আজ আর নেই। এখনকার স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের কাছে সেগুলো ইতিহাসের কিছু ঘটনা বলে মনে হতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এমন দিন আসবে, যখন আমাদের তরুণ সমাজ আদৌ বিশ্বাস করবে না লাল-সবুজের এ দেশের ফুটবল ঐতিহ্যের কথা। একটি খেলা দেখতে গ্যালারিতে দর্শকের ঢল নামবে, লম্বা লাইন হবে, টিকিট কালোবাজারি হবে, লাইন ধরে গ্যালারিতে ঢুকতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি হবে, হুড়োহুড়ি হবে, চেঁচামেচি হবে, তবেই না ফুটবল দেখার আসল মজা। প্রকাশ পাবে খেলার প্রতি ভালোবাসা। তবে এখন আর সেরকম কিছুই নেই। বর্তমানে ঘরোয়া লিগের ফুটবলে মাঠে দেখা যায় না দর্শক। অনেকটা ফাঁকা মাঠেই অনুষ্ঠিত হয় খেলাগুলো। 
এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু আমার সংবাদকে বলেন, ভালো খেলা হয় না; ভালো খেলোয়াড়ের অভাব। যার জন্য দর্শক মাঠে যেতে চায় না। যদি খেলোয়াড়রা ভালো খেলত, তাহলে অবশ্যই মাঠে দর্শক যেত। তিনি আরও বলেন, মাঠে দর্শক যাবে কী করে! দর্শকরা তো জানেই না কখন ম্যাচ হবে, কোথায় হবে। কারণ দর্শকদের কাছে এ খবরটা পৌঁছে দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। সঠিকভাবে প্রচার করতে পারছে না। এটা অবশ্য ফেডারেশনের ব্যর্থতা। ফেডারেশন ঘরোয়া লিগটাকে ব্র্যান্ডিং করতে পারছে না। তাদের কোনো স্পন্সর নেই। বাফুরের অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য এখন আর কেউ ফুটবলে স্পন্সর করতে চায় না। তাদের টাকার অভাব। সবকিছু মিলিয়ে ফুটবলটাকে একেবারে ব্যাকফুটে নিয়ে গেছে তারা। চুন্নু বলেন, ফেডারেশনের দায়িত্ব এগুলো গুরুত্বসহকারে করা। কিন্তু ফেডারেশন এসবে কোনো কর্ণপাত করছে না। মানুষদের জানানো, তাদের নিয়ে যাওয়া, মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া— এসব ফেডারেশনের দায়িত্ব। এদিক থেকে ফেডারেশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে তারা হঠাৎ হঠাৎ খেলা চালায়; আবার হঠাৎ হঠাৎ খেলা বন্ধ করে দেয়; ফিকশ্চারের পরিবর্তন— সবকিছু মিলিয়ে একটা অগোছালোভাবে চলছে সব। তারা এখন নিজেদেরই নিজেরা সামলাতে পারছে না; ফুটবলকে সামলাবে কী করে। এদিকে চার দল নিয়ে গত ১৫ মে শুরু হওয়ার কথা ছিল উইমেনস সুপার লিগের খেলা। তবে সেটাও এখন ঝুলে আছে। এর আগে বসুন্ধরা কিংস টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। শুধু তা-ই নয়; বসুন্ধরার মাঠে খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তারা মাঠ  দেবে না। সবকিছু মিলিয়ে উইমেনস সুপার লিগের খেলাও এখন অনিশ্চিত। অন্যদিকে বকেয়া আড়াই কোটি টাকা পরিশোধ না করলে উইমেনস সুপার লিগ আয়োজনে ‘কে স্পোর্টস’কে অনুমতি দেবে না ফুটবল ফেডারেশন। বাফুফে বলছে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে পরবর্তী বোর্ড সভায়। ঢাকঢোল পিটিয়ে পয়সা খরচ করে পাঁচতারকা হোটেলে উইমেনস সুপার লিগ আয়োজনের জানান দিল কে স্পোর্টস। কিন্তু আসর সফল করার জন্য ফেডারেশনের সঙ্গে যে আর্থিক জটিলতা তৈরি হয়ে আছে, তা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। ১৩ মার্চের সে ঘোষণার পর দেশের ফুটবলে হয়েছে পটপরিবর্তন। একই মঞ্চ শেয়ার করা বাফুফে সাধারণ সম্পাদক নিষিদ্ধ হয়েছেন দুবছরের জন্য। এ ঘটনায় টালমাটাল ফেডারেশন। সে পরিস্থিতি উত্তরণের একটা মাধ্যম হতে পারত ডব্লিউএসএল। তবে সেটাও এখন অন্ধকারের পথে।
 

Link copied!