Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

সংলাপ ডাকে বিএনপির ভাষ্য

আগে পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক

আবদুর রহিম

জুন ৭, ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম


আগে পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক

২০১৪ ও ২০১৮ তে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবার আশ্বাসেও বিশ্বাস নেই বিএনপির

যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা ধরে নিয়েই আ.লীগে দলীয় বার্তা সংলাপ প্রস্তুতি 

 সরকার যদি বলে পদত্যাগ করব তখন সিদ্ধান্ত নেবো
—মির্জা ফখরুল ইসলাম  
 

আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্ন কথা নিয়ে বিএনপি ভাবছে না
—আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী  


পাতানো ফাঁদে পা দেবো না তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলন চলবে
—শামা ওবায়েদ

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও দলটির হাইকমান্ড এতদিন বলে আসছে, বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। হঠাৎ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে, সংলাপের বিকল্প নেই। মুখোমুখি আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ খুঁজতে হবে। তবে বিএনপি এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তারা বলছে— সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তাদের আন্দোলন চলছে। এ দুই দাবি মেনে নিলে তখন চিন্তা করা হবে। অতীতে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সংলাপের কোনো কথাই আ.লীগ রাখেনি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আ.লীগের অধীনে দুটো নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ দেখেছে তারা। 

বিএনপি বলছে, দুই নির্বাচনেই আ.লীগ প্রমাণ করেছে, তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনে কী করেছে, তা সবার জানা। ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করেছে। পুরো নির্বাচনের সময় তারা অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, পুলিশ দিয়ে হয়রানি— সব কিছু করেছে। বিএনপিকে তারা নির্বাচনে দাঁড়াতেই দেয়নি। তাই এবার সরকারের পদত্যাগ ব্যতীত কোনো সংলাপে যাবে না। 

তবে আ.লীগ সূত্রগুলো বলছে— রাজনৈতিক কৌশলে একটি সরকার পদ্ধতি শেখ হাসিনার অধীনে হতে পারে। এ ছাড়া দলটি যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাবে না ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ে। তারা স্বীকার করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আ.লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আ.লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে। সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপের অতীত ধরনও চালিয়ে যাবে। সমপ্রতি আ.লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জাতিসংঘের মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপ করতে হবে— এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট দেশে এখনো তৈরি হয়নি। আমাদের দেশ আমরা আলোচনা করব— এটি নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব।’ অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘সংলাপের মাধ্যমে সব কিছু সমাধান হতে পারে। আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।’ 

এ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সংবাদকে বলেন, ‘দেখুন আমাদের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১৮ সালে আমাদের সঙ্গে দু’বার বসে যে কমিটমেন্টগুলো আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, তার কোনোটিই রক্ষা করেনি। সেখানে আমির হোসেন আমুও ছিলেন। তাই আ.লীগের ওপর আস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই। সে জন্য আমরা পরিষ্কার বলছি, অন্য কোনো বিষয়ের ওপর আলোচনার কোনো সুযোগই নেই। একমাত্র নিরপেক্ষ সরকার কীভাবে হতে পারে, তারা যদি রাজি হয়, হ্যাঁ— নিরপেক্ষ সরকার করব, সরকার যদি বলে— আমরা পদত্যাগ করব, আমরা নিরপেক্ষ সরকারের ব্যাপারে আলোচনা করব কি-না, সেটি আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেবো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্ন কথা নিয়ে বিএনপি ভাবছে না। তারা যদি দলীয়ভাবে ঘোষণা দেয় তখন বিএনপি  আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবের জবাব দেবে। বিএনপি সরকারের পদতাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করছে, মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্য আমলে নিচ্ছে না। সংলাপের বিষয়বস্তু কী। লিখিত জানাক, তখন জবাব দেয়ার বিষয় চিন্তা করা হবে।’ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘দেখুন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণা হওয়ার পর আওয়ামী লীগের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা কখন কি বলছে নিজেরাই বুঝতে পারছে না। 

প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ভিসানীতির কারণে তাদের কিছু যায় আসে না।  যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া লাগবে না। অথচ দেখুন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের লাখ লাখ মানুষ কাজ করছে,  পড়াশোনা করছে। দেশের এত সংখ্যক লোকজন নিয়ে আ.লীগ কিছুই ভাবছে না। কিন্তু আবার তাদের সিনিয়র নেতারা বলছেন, এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে হলে আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন। জাতিসংঘের অধীনে হলেও আলোচনায় বসার কথা বলছে। তাদের উদ্দেশ্যে কখনোই ভালো নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘অগণতান্ত্রিক সরকার দীর্ঘসময় আমাদের সভা-সমাবেশ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে আসছে। সমপ্রতি আমরা যে তারুণ্য সমাবেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম সেখানেও আ.লীগ সংঘাত তৈরি করার চেষ্টা করেছে। কর্মসূচি ঘোষণার দুদিন পর আমাদের নির্দিষ্ট তারিখে যুবলীগ কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিএনপির সঙ্ঘাত চায় না বলে এখন আবারও তারিখ পরিবর্তন করে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলছি, সরকারের পাতানো ফাঁদে আমরা পা দেবো না। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। সরকার যদি তত্ত্বাবধায় সরকার ইস্যুতে বসতে চায়, পদত্যাগ করে; তাহলে আমাদের দলীয় ফোরাম তখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে— ভেবে দেখবে।’
 

Link copied!