Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

সাফে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ

আহমেদ হৃদয়

আহমেদ হৃদয়

জুলাই ১০, ২০২৩, ০১:৪৮ পিএম


সাফে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ

মানুষের যা প্রত্যাশা ছিল, বাংলাদেশ তার চেয়েও বেশি পূরণ করেছ
—আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু
সাবেক ফুটবলার

বাংলাদেশ  দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতেছে। ওই জায়গাটিতে একটি বিরাট পরিবর্তন এসেছে
—গোলাম সারোয়ার টিপু
সাবেক ফুটবলার
 

২০০৩ সালে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এটিই বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা। এরপর সর্বশেষ ২০০৯ সালে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এরপর আর সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। সর্বশেষ পাঁচটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। দীর্ঘ ১৪ বছর পর এবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের শুরুটা ভালো না হলেও পুরো টুর্নামেন্টে দাপট দেখিয়েছে জামাল-তপু-মোরসালিনরা।

এবারের টুর্নামেন্টে শেষ পর্যন্ত সমীকরণটা এমন দাঁড়ায়, মালদ্বীপের বিপক্ষে লেবাননের জয়ে সেমি-ফাইনালের সমীকরণটা সহজ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। ড্র তো বটেই, এক গোলে হারার বিলাসিতাটাও ছিল তাদের সামনে। কিন্তু কোনো সমীকরণে না গিয়ে ভুটানকে সরাসরি হারিয়েই সেমির টিকিট কেটেছিল জামাল ভূঁইয়ারা। ১৪ বছর সাফের সেমি-ফাইনালে লাল-সবুজ বাহিনী। প্রথম ম্যাচ শক্তিশালী লেবাননের কাছে হারলেও পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। মালদ্বীপের সাথে পিছিয়ে পড়েও দাপট দেখিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় কাবরেরার দল। গ্রুপের শেষ ম্যাচেও শুরুতে পিছিয়ে পড়েছিল। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভুটানকে ৩-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে। 

দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ এই আসরে একমাত্র শিরোপাটি ২০০৩ সালে জিতেছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০০৫ সালে ফাইনালে খেলেছিল তারা। আর ২০০৯ সালে সর্বশেষ সেমি-ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর বাকিটা কেবলই আক্ষেপের গল্প। ১৪ বছর পর সেই আক্ষেপে কিছুটা প্রলেপ দিয়েছিলে জামালরা। তবে শক্তিশালী কুয়েতের বিপক্ষে লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। ১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে উঠে দারুণ উজ্জীবিত ছিল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে শক্তিশালী কুয়েতের বিপক্ষে তাই প্রথম কয়েক মিনিটে দারুণ আক্রমণও করেছিল হাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যরা। তেমন একটি আক্রমণ থেকে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে কুয়েতের গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন মোরসালিন। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে সুযোগ মিস করেন তিনি। সেই মিসের আক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত পুড়তে হলো বাংলাদেশকে। 

অতিরিক্ত সময়ে গোল খেয়ে সুবর্ণ সুযোগ হারাল রাকিব-মোরসালিনরা। ম্যাচের ১০৬ মিনিটে কুয়েতের পক্ষে জয়সূচক গোল করেন আব্দুল্লাহ আম্মার বলৌসি। তবুও পুরো টুর্নামেন্টে আলো ছড়িয়েছেন তরুণ ফুটবলার মোরসালিন। সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন বাংলাদেশের আনিসুর রহমান জিকো। তাই তো বাংলাদেশের খেলার প্রশংসা করেছেন সাবেক ফুটবলাররাও। 

বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু আমার সংবাদকে বলেন, প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। মানুষ এতটি আশা করেনি, এবার যে ফুটবল খেলেছে তা একেবারে অপ্রত্যাশিত। মানুষের যা প্রত্যাশা ছিল, বাংলাদেশ তার চেয়েও বেশি পূরণ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেমিফাইনালে হেরেছে এটি আমাদের ব্যাড লাক। তবে যেভাবে তারা খেলছিল; তাতে ফাইনালে গেলে হয়তো চ্যাম্পিয়নও হতে পারত কিন্তু এই খেলাটিই মানুষ দেখতে চায়। মোরসালিনের বিষয়ে তিনি বলেন, মোরসালিন একজন উঠতি খেলোয়াড়। 

প্রত্যেক ফুটবলার পেলেন দেড় লাখ টাকা

গত বছর থেকেই আমি তাকে ফলো করছি, ও ভালো খেলছে। ওর ভেতরে প্রতিভা আছে, লং রেঞ্জে শুট করার দক্ষতা আছে, মধ্যমাঠে বলটাকে খেলানোর একটা দক্ষতা আছে। সব কিছু মিলে যদি এভাবে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে যায় তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। আরেক সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু আমার সংবাদকে বলেন, সাফে বাংলাদেশ যে দুটি ম্যাচ জিতেছে, সেই দুটি ম্যাচই কিন্তু পিছিয়ে থেকে জিতেছে। শুরুতে পিছিয়ে পড়েছিল, পরে কিন্তু তারা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতেছে। ওই জায়গাটিতে একটি বিরাট পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হয়েছে। কিছু কোয়ালিটিসম্পন্ন খেলোয়াড় পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে এত ভালো না হলেও একেবারে মেধাশূন্য নয়। আর আগে থেকে কিছু খেলোয়াড় ছিল, যেমন— সোহেল রানা, তপু বর্মন, বিশ্বনাথ— এরা মোটামুটি ভালোই ছিল। আরগুলো মেধাশূন্য ছিল। সেই জায়গায় এবার কিছু নতুন খেলোয়াড় যোগ হয়েছে। যেমন— রাকিব, মোরসালিন এরা খুব ভালো খেলেছে। সব মিলিয়ে একটি উজ্জীবিত দলকেই আমরা দেখতে পেয়েছি।

তিনি বলেন, এমনিতে যদি বলি তাহলে কিন্তু আমরা ফাইনালই খেলেছি। কারণ কুয়েত আর লেবানন কিন্তু থাকার কথা ছিল না। দক্ষিণ এশিয়ার যে দুটি দলের বিপক্ষে আমরা খেলেছি তাদেরকে কিন্তু আমরা হারিয়েছি। তবে এটি ব্যাড লাক যে, ফাইনালে যেতে পারিনি। তবে সেমি-ফাইনালের শুরুতে মোরসালিন যে মিসটা করেছে, এটি আমি বলব ও ইয়াং ফুটবলার; একটু এক্সাইটেড ছিল সে কারণে হয়তো সে মিস করেছে। গোলাম সারোয়ার টিপু আরও বলেন, বর্তমানে আমরা এখানে কেন থাকব; আমরা ফাইনাল খেলব না; কেন চ্যাম্পিয়ন হবো না। এভাবে যদি বলি তাহলে বলব একসময় আমরা খুব ভালো খেলতাম। দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর বিপক্ষে আমরা অনায়াসেই জিততে পারতাম। আর হারলেও সেই হারের ব্যবধান খুব বেশি হতো না। অন্য দলগুলো বর্তমানে অনেক এগিয়ে গেছে। সেখানে আমরা এত বছর ধরে ফুটবল খেলি, আমাদের একটা ফুটবল কালচার আছে তারপরও আমাদের এই অবস্থা কেন? 

তিনি আরও বলেন, আমাদের মফস্বলে কোনো খেলা নেই। কোনো টুর্নামেন্ট নেই। যারা আছে তাদেরকে নিয়েই ক্যাম্প করা হয়। নতুন কোনো ফুটবলার কিন্তু এখানে উঠে আসছে না। আর নতুন খেলোয়াড় উঠে আসবে কীভাবে? যেখানে ঢাকার বাইরে কোনো খেলা নেই, তাহলে নতুন ফুটবলার আমরা পাবো কীভাবে। ওই জায়গাটিতে বাফুফের কোনো উদ্যোগ নেই। এ সময় মার্টিনেজ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন সাবেক এই ফুটবলা। 

তিনি বলেন, মার্টিনেজ বাংলাদেশে এসেছিল; এতে বাফুফের কোনো উদ্যোগ ছিল না। অন্তত ১৫-২০ জন্যও তো একটি অনুষ্ঠান করা যেত। ধরে নিলাম যে মার্টিনেজ মাঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না কিংবা সময় ছিল না। অন্তত এয়ারপোর্টে তো তাকে একটা ছোটখাটো অভ্যর্থনা দেয়া যেত বাফুফের পক্ষ থেকে। এখানে বাফুফের কোনো উদ্যোগই ছিল না। তবে এখানে একটি জিনিস হয়েছে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে বাফুফের রাডারে যত গোলকিপার ছিল অন্তত তাদেরকে নিয়ে তো ১০ মিনিটের জন্য একটু কথা বলতে পারত। তাও করেনি, মানে বাফুফের কোনো উদ্যোগই ছিল না।

আরএস
 

Link copied!