Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

লিগে বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব

আহমেদ হৃদয়

আহমেদ হৃদয়

জুলাই ২৭, ২০২৩, ০৫:১৯ পিএম


লিগে বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব

ঘরোয়া লিগে বিদেশি  কোটা কমিয়ে আনলে দেশের ফুটবলাররা বেশি খেলার সুযোগ পাবে

গোলাম সারোয়ার টিপু 
সাবেক ফুটবলার, বাংলাদেশ জাতীয় দল

সদ্যই শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগের এবারের মৌসুম। তবে প্রতিবারের মতো এবারও আলোচনায় রয়েছে লিগে বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটা। সামনের মৌসুমে ঘরোয়া লিগে কয়জন বিদেশি ফুটবলার রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন; ছয়জন নাকি চারজন? এর আগে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি বৈঠক করেছে বাফুফে সভাপতির সঙ্গে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম দাবি হচ্ছে লিগে বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটা কমাতে হবে। এর আগে ছয়জন বিদেশির রেজিস্ট্রেশন চেয়ে ফেডারেশনকে চিঠি দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। তারপরই নড়েচড়ে বসে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি।

এএফসি কাপ কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার সর্বোচ্চ ছয় বিদেশি একাদশে খেলতে পারবে। নিবন্ধন নিয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। এটি বিবেচনা করে প্রিমিয়ার লিগে ছয় বিদেশি নিবন্ধন ও একাদশে আগের মতো চারজন খেলানোর জন্য চিঠি দেয় কিংস। খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি ঘরোয়া ফুটবলে চার বিদেশি নিবন্ধন ও একাদশে তিন বিদেশি খেলানোর পক্ষে। তবে এএফসি কাপের জন্য বিদেশি খেলোয়াড় নিবন্ধন বা খেলানো নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। 

খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাবেক ফুটবলাররা বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে বিদেশি কোটা কমানোর পাশাপাশি আরও কিছু দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে অন্যতম কাউন্সিলরশিপ। বাফুফের নির্বাচনে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি থেকে দুটো কাউন্সিলরশিপ চাওয়া হয়েছে। যদিও সব অধিভুক্ত সংস্থা একটি কাউন্সিলরশিপ পায়। বাফুফে সভাপতি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির কোটার দাবির বিষয় নিয়ে লিগ কমিটির সভায় এবং কাউন্সিলরশিপ বিষয়টি নির্বাহী কমিটিতে উত্থাপন করার কথা জানান। 

এ বিষয়ে জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু আমার সংবাদকে বলেন, লিগে ছয় বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটা কমিয়ে যদি চারজন করা হয়; তাহলে দুটি দিক থেকেই ভাবার বিষয়। এখানে লাভ এবং ক্ষতি দুটোই আছে। তবে আমাদের জাতীয় দলের যে অবস্থা; তাতে লিগে বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটা যদি কমিয়ে আনা হয় তাহলে দেশের ফুটবলারদের জন্যই ভালো হবে। 

তিনি বলেন, ছয় বিদেশি ফুটবলার দলে থাকলে অবশ্যই আমাদের দেশের ফুটবলাররা দলে সুযোগ কম পায়। সেদিক থেকে চিন্তা করলে বিদেশি ফুটবলারের কোটা চারজন করলে দেশের ফুটবলাররা খেলার সুযোগ পাবে। তবে এর উল্টো দিকও রয়েছে। যদি চারজনই মাঠে খেলার সুযোগ পায়; তার মধ্যে দুজন ফরোয়ার্ড এবং দুজন ডিফেন্ডার যদি থাকে তাহলে কিন্তু দেশি ফুটবলারদের তেমন কোনো লাভ হবে না। আবার খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির প্রস্তাব চারজন রেজিস্ট্রেশন এবং তিনজন খেলতে পারবে। সেক্ষেত্রেও আসলে অনেক কিছু ক্লাবের ওপর নির্ভর করে। অন্যদিকে অনেকেই আবার চিন্তা করেন যে মৌসুম শেষে তো টাকা পাচ্ছি; ক্ষতি কী বেঞ্চে বসে থাকতে। 

গোলাম সারোয়ার টিপু বলেন, এখানে আরও কিছু বিষয় রয়েছে। এটা সত্যি যে আমাদের বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটা কমিয়ে আনলে দেশের ফুটবলাররা উন্নতি করতে পারবে। তবে এখানেও কিছু কথা রয়েছে, এই বিষয়গুলোও আসলে পরিস্থিতি এবং ক্লাবগুলোর ওপর অনেকটা নির্ভর করে। অন্যদিকে ছয় বিদেশি নিবন্ধন নিয়ে ইতোমধ্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে দেশের ফুটবলাঙ্গন। জাতীয় দলের কথা চিন্তা করে বরং বিদেশি নিবন্ধন কমানোর দাবি ফুটবলারদের। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় দলের সাবেক এক ফুটবলার আমার সংবাদকে বলেন, পুরো বাফুফে ভবনটাই দুর্নীতির একটি আখড়া। আসলে যতদিন বাফুফে ভবন দুর্নীতিমুক্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত দেশের ফুটবলের কোনো উন্নতি সম্ভব নয়। তবে আমি ছয়জনের পরিবর্তে চারজন বিদেশি খেলোয়াড় নিবন্ধনের পক্ষেই থাকব। তাতে করে অন্তত দেশি ফুটবলাররা খেলার সুযোগ পাবে। চার বিদেশি নিবন্ধনের যে প্রস্তাব লিখিত আকারে দিয়েছে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি, তাতে সায় মেলেনি সালাউদ্দিনের। আগের মতো বিদেশি কোটা পাঁচ নাকি ছয়জন হবে, তা লিগ কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় বর্তমানে পাঁচ বিদেশি নিবন্ধনের সঙ্গে মাঠে নামতে পারেন চারজন। বদলি হিসেবে বিদেশি নন, অন্য কেউ নামতে পারেন। এই নিয়ম যদি থাকে, তাহলে ছয় বিদেশিতে আপত্তি নেই অধিকাংশ ক্লাবের। অনেকের দাবি চূড়ান্ত স্কোয়াডে ২৩ জনের চারজনের বেশি বিদেশি খেলোয়াড় নয়। ছয় বিদেশি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও বসুন্ধরা কিংসও অবশ্য ঘরোয়া লিগে ম্যাচে চার বিদেশি খেলার পক্ষে। 

কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাবের আর্থিক অবস্থা সমান নয়। যে কারণে ক্লাব চালাতে যারা হিমশিম খায়, তারা ছয় বিদেশির বিপক্ষে।  জানা গেছে, বিদেশি ফুটবলারদের পেছনে বেশ ভালো অর্থ ব্যয় করতে হয় ক্লাবগুলোর। চারজনের বেতন দিতেই হিমশিম খাচ্ছে অনেক ক্লাব। কিছু ক্লাবের চিন্তা আর্থিক বিষয় নিয়ে। অন্যদিকে ফুটবলারদের আক্ষেপ খেলায় সুযোগ না পাওয়া নিয়ে।
 

Link copied!