Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪,

খালেদার সমস্যা জটিল হচ্ছে

আবদুর রহিম

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম


খালেদার সমস্যা জটিল হচ্ছে

উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক অঙ্গন

লিভার সমস্যা মারাত্মক জ্বর, বমি, প্যারামিটার ওঠানামা, পেটে পানি আসা, প্রোটিন কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতায় ওষুধ প্রয়োগে চিকিৎসকরা চিন্তিত

কর্তৃত্ববাদী সরকার খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা করতে দিচ্ছে না
—এমরান সালেহ প্রিন্স
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক

সরকার খালেদাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে
—কর্নেল (অব.) অলি আহমদ প্রেসিডেন্ট, এলডিপি

সাঈদীর চিকিৎসা ত্রুটি ছিল খালেদার বিষয় ত্রুটিমুক্ত থাকুক
—মা. আবদুল হালিম
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি

হঠাৎ করেই সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি। জটিল হচ্ছে লিভারের সমস্যা। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ডায়াবেটিস, প্রেশারসহ বিভিন্ন প্যারামিটার ওঠানামা করছে। পেটে পানি চলে আসছে। শরীরে প্রোটিন কমে যাচ্ছে। পায়ের বাতের ব্যথা বাড়ছে। হার্টের সমস্যায়ও ঝুঁকিতে রয়েছেন। লিভার সমস্যার কারণে ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসে, বমি হচ্ছে। শরীরের একাধিক জটিল সমস্যার কারণে সব ধরনের ওষুধও প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। 

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্লোজ মনিটরিংয়ে রেখে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার শারীরিক জটিলতা অনুযায়ী বাংলাদেশে সব ধরনের চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট পেতে হলে দেশের বাইরে নেয়া আবশ্যক। চিকিৎসকরা পরিবারকে সামগ্রিক বিষয়গুলো জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতারা বলছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের অন্যান্য ব্যক্তিরা সর্দিকাশি হলেও দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চলে যান। 

কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠকারীর স্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী এবং তিনি নিজেও তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একবার বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন। তাকে চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে যেতে না দেয়া দেশের রাজনীতিতে খারাপ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও তাকে সরকারি খরচে বিদেশে যেতে দেয়া আবশ্যক।  খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে দলীয় নেতাকর্মীরা সুস্থতায় দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করছেন। মসজিদে দোয়ার ব্যবস্থা করছেন। গত ৯ আগস্ট থেকে ২৮ দিন অসুস্থ অবস্থায় টানা হাসপাতালের বিছানায় রয়েছেন তিনি। এর আগে গত ১০ জুন মধ্যরাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে ২৪ জুন বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হূদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হূদরোগে ভুগছেন। তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য আমার সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়া ভালো নেই। দেশে আর তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। জরুরিভিত্তিতে বিদেশ নেয়া আবশ্যক। একাধিক জটিলতার কারণে সব ধরনের ওষুধও প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। একটি সমস্যার ওষুধ প্রয়োগ করলে অন্য সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আগে তার লিভার ট্রিটমেন্ট আবশ্যক তারপর ধারাবাহিক চিকিৎসায় যেতে হবে।  

জানতে চাইলে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসকদের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ রয়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা বোর্ডের পরামর্শে তার চিকিৎসকরা চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে চিকিৎসা বোর্ড থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, তার চিকিৎসা দেশে আর সম্ভব হচ্ছে না। তাকে বাইরে নিতে হবে। চিকিৎসা বোর্ড থেকে এ কথা জানানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম যে রুমে আছেন, সেই রুমে তাকে ক্লোজ মনিটরিংয়ে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। তার স্বাস্থ্য বিষয়ে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তার জন্য জনগণ ও নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন। সবাই তার সুস্থতা কামনা করছেন।’

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। খালেদা জিয়াকে আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। ওনার জটিল সমস্যাগুলোর চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। চিকিৎসকরা বিষয়গুলো পরিবারকে জানিয়েছেন। 

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেন , দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আমাদের দাবি করতে হচ্ছে, আন্দোলন করতে হচ্ছে। এটাই মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। আপনারা জানেন, খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, তারা সুচিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখানে আর তার চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। খালেদা জিয়া রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার। কর্তৃত্ববাদী এই সরকার খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা করতে দিচ্ছে না। এ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে যেতে দিচ্ছে না। আমরা সরকারকে আবেদন জানাবো যাতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও খালেদা জিয়ার পরিবার ও চিকিৎসকদের দাবি অনুযায়ী তার সুচিকিৎসায় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অন্যথায় খালেদা জিয়ার কিছু হলে এই সরকারকে তার দায়ভার গ্রহণ করতে হবে।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম আমার সংবাদকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। তার লিভার জটিলতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের হাসপাতালে এ রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিন, ওষুধসহ সবকিছুর অভাব রয়েছে। সুচিকিৎসার জন্য তাকে ইউকে, সিঙ্গাপুর, জার্মান, আমেরিকা, লন্ডন ছাড়া আপাতত সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। বহুদিন যাবৎ ডাক্তাররা বলছেন, উনাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে, তার উন্নত চিকিৎসা আবশ্যক। এমন পরিস্থিতিতে সরকার তাকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি মনে করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। মানবিক দিকগুলো তারা বিবেচনা করবে। জরুরিভিত্তিতে বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারি খরচে লন্ডনে পাঠানো হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, সর্দিকাশি হলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বছরে একাধিকবার লন্ডনে গিয়েছেন। আজকে বেগম খালেদা জিয়া একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী, স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী এবং তিনি নিজেও তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একবার বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন, সবকিছু বিবেচনা করে সরকারকে অবশ্যই সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত বলে মনে করি। মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানো উচিত। সারা দেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম আমার সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা পাওয়া আবশ্যক। বেগম জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান, সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী, দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা অন্যতম ব্যক্তি। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে সহানুভূতিশীল হওয়া আবশ্যক। রাজনৈতিক দল হিসেবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ওনার উন্নত চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা পাওয়া আবশ্যক। খালেদা জিয়ার ও সুস্থতার বিষয়টি এখন অন্যতম আলোচনার বিষয়। আমাদের আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী দুনিয়ার সফর শেষ করে চলে গেলেন। 

কিন্তু চিকিৎসার ত্রুটি ছিল বলে প্রশ্ন রয়েছে। তাই অন্তত খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিয়ে যেতে পারা আবশ্যক। মানুষ যাতে বলতে পারে খালেদা জিয়া সুচিকিৎসা পেয়েছেন। সে সুযোগ সরকারের দেয়া উচিত। মানুষ যাতে বলতে পারে চিকিৎসা পেয়ে খালেদা জিয়া সফর শেষ করেছেন। এই আস্থাটা তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব। এখন সরকারের পদক্ষেপ জরুরি, দেশের বাইরে চিকিৎসার সুযোগ পেলে তিনি ভালো থাকবেন বলে মনে করছি। তিনি কী রাজনৈতিক কারণে চিকিৎসা পাচ্ছেন না এমন প্রশ্নগুলো রয়েছে। এখানে সরকারের একগুয়েমি রয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে সব রাজনৈতিক বিষয়ের ঊর্ধ্বে ওনাকে রাখা উচিত বলেও মনে করছি।
 

Link copied!