Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

সার উৎপাদন বন্ধ ১০ মাস

মহিউদ্দিন রাব্বানি

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩, ১১:১৬ পিএম


সার উৎপাদন বন্ধ ১০ মাস

গ্যাস সংকট ও কারিগরি ত্রুটির কারণে ১০ মাস ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহত্তম সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির লিমিটেডের (সিইউএফএল) উৎপাদন বন্ধ। এর আগেও যান্ত্রিক ত্রুটি, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে এ কারখানায় সার উৎপাদন বন্ধ ছিল। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত সারকারখানাটিতে গত বছর ২২ নভেম্বর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে বয়লারে আগুন লাগার পর থেকে সিইউএফএলে সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। উৎপান বন্ধ থাকায় প্রতিদিন তিন কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। সে হিসাবে ১০ মাসে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। 

সূত্র জানায়, গত বছর ২২ নভেম্বর আগুন দুর্ঘটনার পর কারখানায় সার উৎপাদন বন্ধ রাখে কোম্পানিটি। এরপর গত ৫ মে পর্যন্ত চলে বয়লার মেরামত কাজ। সার কারখানাটি এখন উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হলেও গ্যাস সংকটে যেতে পারছে না উৎপাদনে। এ ছাড়া কারখানায় ডেনমার্কের সহায়তায় চলেছে সারের ক্যাটালিস্ট রিডাকশন প্রকল্পের কাজ। এটি শেষ করতে এক মাসের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে ৪২ এমএমসিএফডি গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ক্যাটালিস্ট রিডাকশনের কাজও শেষ হয়নি। পুড়ে যাওয়ার পর মেরামত কাজ করতে ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। কাজ চলে যুক্তরাজ্যের একটি বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে।

তথ্য মতে, কারখানাটি চালু থাকলে দৈনিক এক লাখ টন অ্যামোনিয়া ও এক হাজার ৭০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম। বর্তমানে কারখানায় গ্যাস সংকটসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন কমেছে। বিগত বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হয়েছে। সিইউএফএলের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, কারখানার ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে পূর্ণ উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪৭-৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু কারখানার পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করলে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। এদিকে গ্যাস সংকটে সিইউএফএলের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছে পার্শ্ববর্তী বহুজাতিক সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো)। এতে সিইউএফএলের শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, যথাসময়ে কারখানাটি চালু করা না হলে ব্যয়বহুল এই পরিবর্তন কোনো কাজে তো আসবেই না, নতুন করে আবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন উৎপাদনে না থাকায় কারখানটির মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ ফের চালু হলেও উৎপাদনে যাবেন যেতে হিমশিম খাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সার উৎপাদন কারখানাটি। 

সিইউএফএল জানায়, যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সংকটে প্রায় ১০ মাস কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েও গ্যাস দিচ্ছে না। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ক্যাটালিস্ট রিডাকশনের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এতে রিডাকশনের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। তেমনটি হলে এই কারখানা দীর্ঘমেয়াদে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হবে। এ ছাড়া নষ্ট হবে সার উৎপাদনের উপযোগিতা। এর আগে গত বছর ১৫ অক্টোবরও সিইউএফএলে গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছিল সার উৎপাদন। পাশাপাশি কাফকো নামের সার কারখানাটিও বন্ধ রাখতে হয় একই কারণে। এক মাসেরও কিছু বেশি দিন পর একই বছর নভেম্বরে অগ্নিকাণ্ডের পর পুরোপুরি এই কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে সার কারখানাটিতে উৎপাদন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বিভাগের আট জেলায় আমন বোরো মৌসুমে ইউরিয়ার সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। যদিও কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যাপ্ত সার মজুত আছে। তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হবে। তারা বলছে, চাষাবাদে সারের কোনো ঘাটতি হবে না। তবে সার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতি বছর কোনো না কোনো অজুহাতে সিইউএফএল সার কারখানা বন্ধ রেখে দেশকে সার আমদানিনির্ভর করে তুলতে চাচ্ছে একটি অসাধু চক্র।

এ বিষয়ে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, গ্যাস সংকটসহ নানান কারণে কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকলে যন্ত্রাংশে মরিচা পড়ে ও বিকল হয়ে যায়। এতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গ্যাস সরবরাহের জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। তবে তারা কবে নাগাদ সরবরাহ করতে পারবে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। মিজানুর রহমান আরও বলেন, ক্যাটালিস্ট রিডাকশনের দ্বারা অ্যামোনিয়া উৎপাদন করা হয়। যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানির মাধ্যমে সিইউএফএল প্ল্যান্টে স্থাপন করা হয়েছে। এটি স্থাপন করতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এমডি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে সরকার ও বিসিআইসি থেকে নির্দিষ্ট বরাদ্দ রয়েছে। সে অনুযায়ী সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহের নির্দেশ এলে গ্যাস দেয়া হবে।
 

Link copied!