অক্টোবর ১৯, ২০২৩, ১২:৩৩ এএম
আলোচিত-সমালোচিত ভারতের আদানির বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে চালু হয় গত এপ্রিলে। এর আগে গত মার্চে শুরু হয় পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। এ দিকে দেশে ডলার সংকটের কারণে পিডিবি নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে কয়লা সংকটে ছয় মাসের মাথায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় আদানির প্রথম ইউনিটের। দ্বিতীয় ইউনিটও বন্ধের মুখে। সূত্র জানায়, মার্চ মাসে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও ৬ এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে আদানি। তবে দ্বিতীয় ইউনিট চালুর পর জুলাই থেকে নিয়মিত এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল আদানি। যদিও হঠাৎ ৮ অক্টোবর থেকে কয়লা সংকটে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ইউনিটও চলছে আংশিক।
পিডিবির দেয়া তথ্য মতে, আদানি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপরই সরবরাহে ঘটে বড় ধরনের ছন্দপতন। ওই দিন সকাল ৭টায় ৫২৭ মেগাওয়াট কমে সর্বনিম্ন ৮২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কোম্পানিটি। এ ছড়া ওই দিন রাত ১২টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সেখানেও নিয়মিত সরবরাহ থেকে অন্তত ১৯৫ মেগাওয়াট কমেছে সরবরাহ। ৮ অক্টোবরও সকাল ১০টা পর্যন্ত দুটি ইউনিট চালু ছিল। ওই সময় কেন্দ্রটি থেকে এক হাজার ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে। এরপরই কয়লা সংকটে বন্ধ হয়ে যায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট।
এদিকে দ্বিতীয় ইউনিটও আংশিক বন্ধ রয়েছে। এতে ৮ অক্টোবর সকাল ১০টার পর থেকে সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াটেরও কম বিদ্যুৎ পাওয়া যায় কেন্দ্রটি থেকে। ৯ অক্টোবর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াটের মধ্যেই ছিল। গতকালও কেন্দ্রটিতে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এতে গতকাল পিক আওয়ারে (রাত ৯টায়) আদানির কেন্দ্রটির সক্ষমতার মধ্যে ৯৬০ মেগাওয়াটই বন্ধ ছিল।
সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর থেকে আগস্ট পর্যন্ত তারা বাংলাদেশকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিদ্যুৎ দিয়েছে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাব করলে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ৭০ মিলিয়ন ডলার বা ৭৭০ কোটি টাকা। ফলে এখনো বকেয়া তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। বকেয়া না দেয়ায় তারা কয়লা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এতে উৎপাদন কমে গেছে। আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে এমন সময়ে যখন দেশে তীব্র ডলার সংকট। রিজার্ভ ফুরিয়ে যাচ্ছে। অনেক জরুরি পণ্য আমদানি করতেও হিমশিম খাচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ দেশি-বিদেশি ছয় ব্যাংকে যোগাযোগ করেও এলসি খুলতে ব্যর্থ হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে পিডিবি। পরে গভর্নরের নির্দেশে সোনালী ব্যাংক এলসি খুলতে সম্মত হয়। তবে ডলার সংকটে বিল পরিশোধ বিলম্বিত হচ্ছে। পরীক্ষামূলক সময়ের ১৭ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সূত্র থেকে জানা যায়, এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিল বকেয়া পড়েছে কোম্পানিটির।
এদিকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিল জমা দিয়েছে আদানি। এর মধ্যে শুধু ৭০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। যদিও আদানির বিলের জন্য আরও অর্থ সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। তবে ডলার সংকটে তা পরিশোধ করতে পারছে না ব্যাংকটি। এতে বাধ্য হয়ে ডলারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে লবিং করছে পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিকে বকেয়া গ্যাস বিল পরিশোধ শুরু করেছে পিডিবি। ইতোমধ্যে গ্যাসের বিপুল বকেয়া পরিশোধ করেছে বিপিডিবি। পেট্রোবাংলার সরবরাহ করা গ্যাসের অন্তত ৬০ শতাংশই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে অনেক দিন ধরেই বিল দিতে পারছিল না পিডিবি। সমপ্রতি বকেয়া বিলের প্রায় অর্ধেক পরিশোধ করা হয়েছে, শিগগিরই বাকি বিলও পরিশোধ করা হবে বলে পেট্রোবাংলাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পিডিবি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের পৃথকভাবে এ খবর নিশ্চিত করেছে।
পিডিবির একজন সদস্য জানান, আমরা ধাপে ধাপে বিলগুলো দিতে শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সব পরিশোধ করা হবে। কয়লা সংকটের কথা স্বীকার করে পিডিবির সদস্য এস এম ওয়াজেদ আলী সরকার বলেন, আদানি আমাদের জানিয়েছে, কয়লা সরবরাহকারী কোম্পানি কয়লা না দেয়ায় তারা বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। তবে আমরা এস আলম ও মাতারবাড়ি থেকে পরীক্ষামূলক কিছু বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এগুলো দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব।’