Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১১ মে, ২০২৫,

গ্যাস সংকটে বিপাকে শিল্প খাত

মহিউদ্দিন রাব্বানি

অক্টোবর ২৯, ২০২৩, ১২:৩৯ এএম


গ্যাস সংকটে বিপাকে শিল্প খাত

চট্টগ্রামসহ সারা দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ কমেছে। ফলে আবাসিক ও শিল্প খাতে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল মেরামতের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য সব মিলিয়ে আরও দুই মাস গ্যাস সংকট থাকবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। এদিকে গ্যাস সংকটে বিপাকে পড়ছে অনেক শিল্প খাত। বিদেশি ক্রেতাদের সময় মতো পণ্য দিতে পারছেন না রপ্তানিকারক। ভয়াবহ গ্যাস সংকটে গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, মদনপুর, বন্দর, কাঁচপুর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, ফতুল্লার কাঠেরপোল, বিসিক শিল্পনগরীসহ জেলার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

এলএনজি টার্মিনাল দুটি থেকে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে কম সরবরাহ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আগে এ দুটি টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে মিলছে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সূত্র জানায়, আগামী নভেম্বর থেকে এ সংকট আরও বাড়তে পারে। এলএনজি সরবরাহকারী দুটি টার্মিনালের মধ্যে একটিকে মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরের ড্রাইডকে পাঠানোর কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী একটি টার্মিনাল পাঁচ বছর পরপর মেরামতের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী একটি টার্মিনাল ১ নভেম্বর থেকে মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরের ডকে পাঠানোর কথা রয়েছে। সে সময় একটি থেকে এলএনজি সরবরাহ করা হবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর থেকে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়। যার প্রভাব পড়েছে আবাসিকে রান্না থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা ও সিএনজি স্টেশনগুলোতে। দিনের বেশির ভাগ সময় আবাসিকে গ্যাস থাকছে না। থাকলেও চুলা জ্বলছে মিট মিট করে। সিএনজি স্টেশনগুলোর সামনেও প্রচুর যানবাহনের চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। করোনা অভিঘাত ও জ্বালানি সংকটের প্রভাবে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের শিল্পোৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এরপর সংকট থেকে কিছুটা উত্তরণ করা গেলেও শিল্প খাতে আবার ধস নামার বড় শঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। পোশাক কারখানগুলোতে প্রচুর বৈদেশিক ক্রয়াদেশ রয়েছে। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে রপ্তানিতে। গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে এ খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ২৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা হয়েছে ১২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান গ্যাস সংকট গত এক বছরের মধ্যে কখনোই ছিল না। ফলে বহু কারখানা পুরোপুরিই বন্ধ রয়েছে। গত ২০-২৫ দিন ধরে কোনো গ্যাসই নেই। এর ফলে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, মদনপুর, বন্দর, কাঁচপুর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, ফতুল্লার কাঠেরপোল, বিসিক শিল্পনগরীসহ জেলার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। যেখানে ১০ পিএসআই গ্যাসের প্রেসার থাকার কথা, সেখানে নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ থাকায় অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা। তাদের বেতন পাওয়া নিয়ে আছেন অনিশ্চয়তায়।

এদিকে সরবরাহকারীদের মূল্য পরিশোধের বিলম্বে গ্যাস সংকট আরও তীব্র হচ্ছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলমান ডলার সংকটের মধ্যে স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির বিল পরিশোধ দেরি হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও অস্থিতিশীল মুদ্রাবাজারের কারণে যখন ভোক্তাচাহিদা কমছে এবং সিমেন্ট, ইস্পাত ও পোশাক খাতসহ প্রায় সব শিল্পই যখন তাতে জর্জরিত তার মধ্যেই দেখা দিলো এ সংকট। তবে আসন্ন শীতের মাসগুলোয় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় চাহিদা কমলে, বিদ্যমান সরবরাহ দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে গ্যাসের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায় ছোট-বড় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিকল্প জ্বালানি দিয়ে উৎপাদন চালু রেখেছে। এতে জ্বালানি খাতে তাদের ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে তৈরি পোশাকের উৎপাদন কমে গেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাতপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের দুটি কারখানায় দৈনিক রড উৎপাদনের সক্ষমতা সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্টিক টন। চারটি বিলেট কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা দৈনিক ছয় হাজার মেট্টিক টনেরও বেশি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, কাঁচামাল সংকটের কারণে এমনিতেই উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন হচ্ছে। গ্যাস সংকটে যা আরো কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সংকট প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘স্পট মার্কেট থেকে আমদানি  বাড়াতে না পারায় এবং নতুন একটি সারকারখানায় উৎপাদন চালু হওয়ায় সবাইকে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, ‘গ্যাস সংকটের কারণে ফ্যাক্টরিগুলোর উৎপাদন অনেক কমে গেছে। উৎপাদন খরচ আরো বাড়ছে। শ্রমিকদের বেতন বাড়তে যাচ্ছে। এমন সময় আমরা যদি গ্যাস না পাই তাহলে বায়ারদের সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে না।’ তিনি বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পাওয়া গেলে নতুন শিল্প উদ্যোক্তারা যেমন মুখ ফিরিয়ে নেবে, তেমনি শিল্প কারখানা বন্ধ হলে লাখ লাখ শ্রমিক চাকরি হারাবেন।’
 

Link copied!