Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১১ মে, ২০২৫,

টানা চার মাস ঊর্ধ্বমুখী এলপিজির দাম

মহিউদ্দিন রাব্বানি

নভেম্বর ৩, ২০২৩, ১২:৩০ এএম


টানা চার মাস ঊর্ধ্বমুখী এলপিজির দাম

লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রান্নার কাজে বহুল ব্যবহূত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজির) দাম। টানা চতুর্থবারের মতো এলপিজির দাম বৃদ্ধি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। গত চার মাসে বিইআরসি ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম গ্রাহক পর্যায়ে ৩৮২ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। প্রতি মাসের মতো চলতি মাসের এলপিজির দাম গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করে কমিশন। নভেম্বর মাসে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৮ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৩৮১ টাকা নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। যা এতদিন এক হাজার ৩৬৩ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছিল। সে হিসাবে নভেম্বর মাসে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ঠিক করা হয়েছে ১১৫ টাকা ০৯ পয়সা, যা অক্টোবরে ছিল ১১৩ টাকা ৬১ পয়সা। 

এর আগে অক্টোবর মাসে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৭৯ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৩৬৩ টাকা নির্ধারণ করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। যা সেপ্টেম্বর মাসে এক হাজার ২৮৪ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছিল। আগস্ট মাসে যার দাম ছিল এক হাজার ১৪০ টাকা। তারও আগে জুলাই মাসে যার দাম ছিল ৯৯৯ টাকা। সৌদি আরামকো নভেম্বরের জন্য এলপিজির কাঁচামাল প্রোপেন ও বিউটেনের প্রতি টনের গড় মূল্য ঘোষণা করেছে ৬১৬ দশমিক ৫০ ডলার, যা আগের মাসে ছিল ৬০৯ দশমিক ৭৫ ডলার। সেই দর বিবেচনায় নিয়ে নতুন দর ঠিক করেছে বিইআরসি, যা গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর হয়।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় খবর নিয়ে জানা যায়, বিইআরসির বেঁধে দেয়া দামে কোথাও মিলছে না এলপি গ্যাস। গ্রাহকরা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার যদি দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে প্রতি মাসে এলপিজির দাম ঘোষণা করার মানে হয় না। নিত্যপণ্যের বাজারে যেতেই এখন বুক কাঁপে বলে জানান গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা শামসুল হক। তিনি বলেন, এর মধ্যে সরকার নির্ধারিত দামে সিলিন্ডার পেলেও কিছুটা বাঁচা যেত। প্রতি বোতলে ৩০০-৪০০ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে। একদিকে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। এরপর আবার বহুল ব্যবহূত এলপিজি কিনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। মুগদার বাসিন্দা রহমাত আলী নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস কিনতে পারেননি বলে জানান এ প্রতিবেদককে। বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়েই কিনতে হয়েছে তাকে। আক্ষেপ আছে, তবে অভিযোগ করতে রাজি না তিনি। বললেন, অভিযোগ করার কী আছে? এটা তো ওপেন-সিক্রেট। সরকার সবই জানে। সব জায়গায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘অনেক সময় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো থেকে দাম অতিক্রম করার ঘটনাটি ঘটে থাকে, যার প্রভাবে বাজারে দাম বাড়ে। সে জন্য লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ বিইআরসির উচিত রেগুলেটরি পদক্ষেপ নেয়া।’ 

দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় দেশেও দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছি। যার মধ্যে চারটি কোম্পানি ইতোমধ্যে নোটিসের জবাব দিয়েছে। তারা কেউ ভুল স্বীকার করেছে আবার কেউ কেউ ক্ষমাও চেয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির সৌদি কার্গো প্রাইস বা সিপি বিবেচনায় নিয়ে দেশের বাজারে মাসে মাসে এলপিজির দাম ঠিক করছে বিইআরসি। তখন বলা হয়, আমদানিনির্ভর এই জ্বালানির দাম নির্ধারণে সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হবে। ফলে সৌদির দর ওঠানামা করলে ভিত্তিমূল্যও ওঠানামা করবে। তবে এ ক্ষেত্রে অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে। সেই ঘোষণার পর থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি।

আরএস
 

Link copied!