নভেম্বর ৯, ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম
সাগরে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এটি দেশের বিদ্যুৎ খাতকে অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। ডেনমার্কের অর্থায়নে প্রথমবারের মতো এই কেন্দ্রে উৎপাদন হবে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে জ্বালানি আমদানির চাপ কিছুটা হলেও কমবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। দেশে ডলার সংকটে কয়লা, এলএনজি, জ্বালানি তেল আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে বায়ুবিদ্যুৎ কতটা কার্যকরী সেটি ভেবে দেখা দরকার। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণের ব্যাপারেও চিন্তা করা দরকার। কক্সবাজারে সাগরের ভেতরে (অফশোর) প্রস্তাবিত এলাকায় এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে তিন বছরের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর আগে গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি ডেনমার্কের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত উইনি এসট্রোপ পিটারসন বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করে। পাশাপাশি ব্লু ইকোনমিতে সহযোগিতা করতে ডেনিশ কোম্পানিগুলো আগ্রহী বলে জানিয়েছেন উইনি এসট্রোপ পিটারসন।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাইয়ে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনার্স (সিআইপি), কোপেনহেগেন অফশোর পার্টনার্স (সিওপি) ও বাংলাদেশের সামিট গ্রুপ এই বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রস্তাব জমা দেয়। সামিট গ্রুপ বলছে, এই বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের উপকূলবর্তী সম্পদের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের একটি ভালো সুযোগ। আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, জ্বালানি তেল ও এলএনজি) ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার সঙ্গেও এটি সঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের যৌথ উদ্যোগে নির্মিতব্য কেন্দ্রে ১.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। সমপ্রতি সরকারের প্রাথমিক সম্মতি মিলেছে। জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় দেশে দ্রুত বড় আকারে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি কক্সবাজার জেলায় সমুদ্রতীর থেকে দূরবর্তী স্থানে নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী সম্পদ ও ‘নীল অর্থনীতি’ ব্যবহারের জন্য এটি অনন্য সুযোগ হিসেবে দেখছে সামিট।
সামিটের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার সবুজ জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে যখন নতুন পথনকশা নিয়ে এগোচ্ছে, তখনই এমন একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানি এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল করে দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সমুদ্রে নির্মাণ করা প্রথম বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রাথমিক নিরীক্ষা অনুযায়ী, প্রকল্পটির নির্মাণকাজের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজারো চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটির প্রথম ৩০ বছরের পরিচালনাকালে উচ্চতর দক্ষ পদে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ গ্যাস আমদানি-নির্ভরশীল। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে ভালো; তবে বিদেশি অর্থায়নে হলে তা ঋণ নাকি অনুদান সেটি দেখতে হবে। ঋণ হলে পরে এর বোঝা গ্রাহকের ঘাড়ে চাপানো হবে। সাধারণ মানুষ এর চাপ সমাল দিতে পারবে না। আর বায়ুবিদ্যুৎ কতটা কার্যকরী সেটি ভেবে দেখা দরকার।’