ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত

মো. মাসুম বিল্লাহ

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ৯, ২০২৩, ১১:১০ পিএম

পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত
  • মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ
  • পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন
  • অর্ধশতাধিক কারখানা বন্ধ ঘোষণা 

২৩ হাজার টাকা মজুরি প্রয়োজন : সিসিসি

ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। গতকাল বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫০টিরও বেশি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় ও চান্দনা এলাকায় বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। তারা মহাসড়কে কাঠ, গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে টিয়ারশেল ছুড়ে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। 

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নকেন্দ্র নামে একটি সংগঠন শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে করে। তাদের পাঁচ দফা দাবি হলো— ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করে বৃদ্ধি করতে হবে, সব গ্রেডে একইহারে মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে, প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধির বিধান নিশ্চিত করতে হবে, ষষ্ঠ ও দশম গ্রেড বাতিল করে পাঁচটি গ্রেড করতে হবে এবং শিক্ষানবিশের বিধান বাতিল করতে হবে। এ সময় শ্রমভবনে মজুরি পুনর্নির্ধারণের জন্য একটি স্মারক লিপি জমা দেয়া হবে বলেও জানান তারা। কারখানা শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকালও সকাল থেকে শ্রমিকরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে সড়কে নামে। সকালে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা-শিববাড়ি সড়কে শ্রমিকরা সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করতে থাকে। খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে শ্রমিকদের সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তারা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ শ্রমিকদের লক্ষ করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে মহাসড়কের আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।

জানা যায়, অব্যাহত শ্রমিক আন্দোলনের কারণে চান্দনা, কোনাবাড়ি, ভোগড়া ও জরুন এলাকার অর্ধশতাধিক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ কাশিমপুর (জরুন) এলাকার কটন ক্লাব (বিডি) লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং সার্ভিস লিমিটেড, এমা সিনটেক্স লিমিটেড, রিপন নিটওয়্যার লিমিটেড, কাশিমপুর (নয়াপাড়) এলাকার কাইজার নিটওয়্যারস লিমিটেড, ইসলাম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ডেবোনেয়ার লিমিটেড, আরবিটেক্স নিটওয়্যার লিমিটেড, মণ্ডল ফেব্রিকস লিমিটেড, মনটেক্স নিটওয়্যার লিমিটেড, মনটেক্স ফেব্রিকস লিমিটেডসহ ৫০টিরও বেশি কারখানা ন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পোশাক শ্রমিকদের দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে মাসে ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরি প্রয়োজন বলে মনে করে ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন (সিসিসি)। ইউরোপভিত্তিক এই শ্রমিক অধিকার জোট বলেছে, সেটি না করে শ্রমিকদের মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা চূড়ান্ত করার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের আবারও পাঁচ বছরের জন্য বেঁচে থাকার সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয়া হলো। এক বিবৃতিতে ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন জানিয়েছে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শ্রমিকদের দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে ২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রয়োজন। বাংলাদেশের শ্রম আইন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আইন অনুসারে এই ন্যূনতম মজুরির দাবি করা হয়েছিল। অন্যদিকে মালিকপক্ষের যে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হলো, তার এ ধরনের ভিত্তি নেই। শ্রমিকরা ইতোমধ্যে ওভারটাইমের ওপর নির্ভর করে সংসার চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ঋণ করে বা একবেলা না খেয়ে তাদের জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। শ্রমিকদের মজুরি দারিদ্র্যসীমার নিচে হওয়ায় তারা কখনো কখনো সন্তানদের কাজে যেতে বাধ্য করেন। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটি আবার হয়েছে শ্রমিকদের কয়েক সপ্তাহ টানা আন্দোলন-সংগ্রামের পর। ক্যাম্পেইন মনে করে, ২৩ হাজার টাকাও মৌলিক চাহিদা মেটানোর মতো মজুরি নয়; বরং তা দিয়ে কোনোমতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেটানো যায়।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নকেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন বলেন, ‘গত ৭ নভেম্বর নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী যে মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে তা বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ধারা ১৪১-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ধারা ১৪১ অনুযায়ী শ্রমিকের জীবনযাপন ব্যয়, জীবনযাত্রার মান, উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত পণ্যের মূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ্য, দেশ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করে দেখার বিধান রয়েছে।’ 

তিনি আরও  বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি দিয়ে কোনোভাবেই শ্রমিকরা জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে পারবে না। এই মজুরিতে উৎপাদনশীলতা রক্ষা করা যাবে না বলে জাতীয় স্বার্থ খর্ব হবে।’ শ্রমিকনেত্রী জাহানারা বলেন, ‘যেখানে কোনো শ্রমিক আইডি কার্ড ছাড়া কারখানায় প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে রাজনৈতিক দলের লোকেরা মালিক পক্ষের সঙ্গে এক হয়ে আমাদের ওপর অত্যাচার করতে কারখানায় প্রবেশ করছে। এই অত্যাচার চালিয়ে আমাদের দমন করা যাবে না। আমাদের দাবি অন্যায় দাবি নয়। সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে নেয়, আমরা শ্রমিকরা আন্দোলন করব না।’ 

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বিক্ষোভকারী পোশাক শ্রমিকদের ওপর সহিংসতা চালানোর নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকাণ্ডকে অপরাধ সাব্যস্ত করার নিন্দা জানানো হচ্ছে।’

পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’ বেসরকারি খাতে যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের যুক্তিসঙ্গত মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ইউনিয়নের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে, তাদের প্রশংসা করা হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে।  পোশাক শ্রমিকদের জন্য যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মজুরি বৃদ্ধি এমনভাবে করতে হবে, যাতে শ্রমিক ও তাদের পরিবার ক্রমশ যে অর্থনৈতিক চাপে মুখে পড়ছে, তার সমাধান নিশ্চিত হয়। 

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ বলেন, সকালে চান্দনা এলাকায় একটি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শিল্প পুলিশ জানায়, গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর এবং কোনাবাড়িসহ আশপাশের এলাকায় বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেন পোশাক শ্রমিকরা। বিক্ষোভের কয়েক দিনে শ্রমিক নিহতের ঘটনাও ঘটে।
 

Link copied!