Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

মূলধন ঘাটতিতে ১৪ ব্যাংক

রেদওয়ানুল হক

ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩, ১০:৩৬ পিএম


মূলধন ঘাটতিতে ১৪ ব্যাংক

* তিনমাসে ব্যাংকগুলোর মুলধন  ঘাটতি বেড়েছে ৩ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা

* সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ ৩৭ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা


ব্যাংক খাতে তীব্র তারল্য সংকটের মধ্যেই মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১৪টি ব্যাংক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে আর্থিক হিসাবে এ সংকটের মুখোমুখি হয়েছে ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংক শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ট) দিতে পারবে না। তিন মাস আগে জুন প্রান্তিক শেষে সার্বিক মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। যা পরবর্তী তিনমাসে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। হিসাবে করে দেখা গেছে যে, তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ৩ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

বাংলাদেশে বর্তমানে মূলধন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের (রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেট) ১০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেই পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণে বাধ্য থাকবে। নীতিমালা অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে সেসব ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে আছে বলে বিবেচনা করা হয়। মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংক শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দিতে পারে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৪ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৩ হাজার ৩০ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ১২২ কোটি টাকা। সরকারি খাতের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের রেকর্ড ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের  ঘাটতি ২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। 

অপরদিকে বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৭১ কোটি টাকা, সিটিজেন ব্যাংকের ৯৫ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২ হাজার ২৪ কোটি টাকা এবং পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি ৬০৮ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতি ৪৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে যাওয়ায় মূলধন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সক্ষমতা দুর্বল হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর। আবার মূলধন ঘাটতি যত বাড়তে থাকবে, আমানতকারীদেরও ঝুঁকি বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। নানা অনিয়মের কারণেই এসব ব্যাংক ঘাটতিতে পড়ছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ঘাটতি পূরণের জন্য এসব ব্যাংককে সরকারি তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া হয়। এতে জনগণের অর্থ ঝুঁকিতে পড়ছে। কারণ ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী না হওয়ায় এখানে অর্থায়ন তলাবিহীন পাত্রে অর্থ ঢালার শামিল।’ অতিরিক্ত সহনশীলতার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যলয়ের সাবেক এ প্রধান অর্থনীতিবিদ।

আরএস

Link copied!