Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে ভিসির ইচ্ছামতো

মো. নাঈমুল হক

ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪, ০১:১৫ এএম


বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে ভিসির ইচ্ছামতো
  • ইউজিসি আইন লঙ্ঘন করে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
  • ব্যক্তিগত ইমেইলে নিয়োগ প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণ
  • আইন লঙ্ঘন করে ডিন ও বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ

এ বিষয়ে অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্ত করে দেখব 
—ড. হাসিনা খান, সদস্য, ইউজিসি
 

একটি শ্রেণি অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে 
—অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, ভিসি, জাককানইবি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক সৌমিত্র শেখরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ইউজিসি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছরের মধ্যে নিয়মনীতি না মেনে ইচ্ছামতো বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আইন না মেনে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন। শিক্ষকদের আবেদন গ্রহণ করেছেন ব্যক্তিগত ইমেইলে। বিভাগের ডিন ও বিভাগীয় প্রধান পদে নিয়োগে স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়েছেন। এমন সাতটি বিষয়ে অভিযোগ করেছেন ১৫ জন পরিবেশবিদ। তারা জাককানইবি ভিসির বিরুদ্ধে ইউজিসিতে লিখিত আকারে এসব অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে উপাচার্য বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। একটি শ্রেণির মানুষ অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। 

জানা যায়, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ সালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে একক হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। সম্প্রতি ১৫ জন পরিবেশবিদের ইউজিসিতে পাঠানো অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, গত বছরের ২৩ আগস্ট প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসির নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করেননি অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। বিজ্ঞপ্তিতে, এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ/সিজিপিএ ৪.০০ চাওয়া হয়েছে। যদিও ইউজিসির অভিন্ন চাকরির বিধিমালায় এ ধরনের কোনো নিয়মের কথা উল্লেখ নেই। এতে করে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছেন এমন প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন। এদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেও অনেক প্রার্থী আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। 

জ্যেষ্ঠতা আইন লঙ্ঘন করে ডিন এবং বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ : বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদে ছয়জন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে বাদ দিয়ে সপ্তম জন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. উজ্জল কুমার প্রধানকে ডিন হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৬ এর ২২(৫) ধারায় বলা হয়েছে, ভাইস-চ্যান্সেলর, সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে, প্রত্যেক অনুষদের জন্য তার বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্য থেকে, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে দুই বছর মেয়াদের জন্য ডিন নিযুক্ত করবেন। শর্ত থাকে যে, কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকলে সেই বিভাগের জ্যেষ্ঠতম সহযোগী অধ্যাপক ডিন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং কোনো বিভাগের একজন অধ্যাপক ডিনের দায়িত্ব পালন করে থাকলে ওই বিভাগের পরবর্তী পালাসমূহে অবশিষ্ট অধ্যাপকরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিন পদে নিযুক্তির সুযোগ পাবেন। 

একই ব্যক্তিকে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করেছেন এ উপাচার্য। তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ড. উজ্জল কুমার প্রধানকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেন। আইনের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, (২) বিভাগীয় অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিন বছর মেয়াদে ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হবে। (৩) যদি কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকেন তা হলে ভাইস-চ্যান্সেলর সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে একজনকে বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত করিবেন। এ ব্যাপারে ড. উজ্জল কুমার প্রধান কোনো কথা বলতে রাজি হননি। 

ব্যক্তিগত ইমেইলে আবেদন গ্রহণ : উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর তার ব্যক্তিগত ইমেইল  ঝপঢ়পফ্তঁমসধরষ.পড়স এ নিয়োগ প্রার্থীদের আবেদনপত্র গ্রহণ করেছেন। এতে করে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রভাবিত হওয়া এবং যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা জানা যায়। উপাচার্য তার হীন উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতেই এমনটি করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো অভিযোগের অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, আচার্যের সহকারী একান্ত সচিব, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সচিবের নিকট এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পাঠানো হয়েছে। জাককানইবির উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সদস্য ড. হাসিনা খান আমার সংবাদকে বলেন, ওনার বিরুদ্ধে এ অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্ত করে দেখব। তবে সুপার ভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছি। কয়েক মাস পর হলেও এর জবাব আমরা পাইনি। 

ইউজিসির সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে এ সদস্য বলেন, আমরা যেকোনো ঘটনার তদন্ত করতে পারি। তদন্তের পর অভিযোগ সত্য হলে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠাতে পারি। এরপর তেমন কিছু আমাদের করার থাকে না। অভিযোগের ব্যাপারে জাককানইবির ভিসি অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। এক শ্রেণি অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। ইউজিসির আইনে এসএসসি ও এইচএসসি রেজাল্ট উল্লেখ না থাকলেও আমরা চেয়েছি যোগ্য প্রার্থী নিতে। সে জন্য রেজাল্টের কথা উল্লেখ করেছি। চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন জমা দিয়েছে। 

নিয়োগে আবেদনপত্র ব্যক্তিগত ইমেইল এ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাকআপ হিসেবে ব্যক্তিগত ইমেইলে নিয়েছি। ডিন নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে ভিসি বলেন, এ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার প্রয়োজন নেই, যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হবে, আমরা তাই করেছি।
 

Link copied!