Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

এহসানুল কবিরের নেতৃত্বে বেড়েছে মুনাফা ও উৎপাদন সক্ষমতা

ওষুধশিল্পে ইডিসিএলের চমক

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

এপ্রিল ১, ২০২৪, ১০:০৪ এএম


ওষুধশিল্পে ইডিসিএলের চমক
  • ইডিসিএল এখন রাষ্ট্রীয় লাভজনক প্রতিষ্ঠান —বলছেন সংশ্লিষ্টরা  
  • ভ্যাকসিন উদ্ভাবনেও তৈরি হচ্ছে গবেষণার সুযোগ  

ইডিসিএল দেশের মানুষের সম্পদ, এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করাই আমার দায়িত্ব
—অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইডিসিএল  

জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন ওষুধ। আর ওষুধ যদি হয় সরকারি, তাহলে মানুষ খুঁজে পায় বিশুদ্ধতার বিশ্বাস। দেশের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ ওষুধ তৈরির একমাত্র নির্ভরযোগ্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড-ইডিসিএল। রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান যখন পরিচালন ব্যয় মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে; ঠিক তখনই মুনাফা করে চমক দেখাচ্ছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবিরের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ প্রস্তুতকারক এই প্রতিষ্ঠানটি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেবা সংস্থা যখন ভর্তুকি নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে, তখন ইডিসিএল বছরে মুনাফা করছে শতকোটি টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানটির লাভজনক অবস্থান সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে তার নিরলস পরিশ্রম। তার দক্ষ নেতৃত্ব আর কঠোর পরিশ্রমেরই ফসল ওষুধশিল্পে চমক দেখানো বর্তমান ইডিসিএল।

১৯৬২ সালে সরকারি ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণাগার হিসেবে যাত্রা শুরু ইডিসিএলের। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদন ইউনিট হিসেবে নামকরণ করা হয়। কোম্পানি আইনের অধীনে ১৯৮৩ সালে ইডিসিএল নামে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ক্রয় ও বণ্টন সংস্থা হিসেবে কাজ করার কিছুদিন পরই চিকিৎসাপণ্য উৎপাদন শুরু করে ইডিসিএল। বর্তমানে ছয়টি প্লান্টের চারটিতে বিভিন্ন ওষুধ আর দুটিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রস্তুত সহায়ক বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হয়। সরকারি চাহিদা মিটিয়ে যা এখন এসএমসির মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সরকারকে ১২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করছে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদক ছাড়িয়ে গেছে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। বর্তমানে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে ওষুধ। 

শুরু থেকে অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত ওষুধ সারা দেশের সরকারি হাসপাতাল, সিভিল সার্জন অফিস, সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মতো অলাভজনক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির তেজগাঁও কারখানাটি বহু বছরের পুরোনো হওয়ায় মানিকগঞ্জে ৩১.৫ একর জমির ওপর নতুন আঙিকে সাজানো হবে বলে জানা গেছে। এতে বাড়বে ইডিসিএলের কার্যপরিধি। শুধুমাত্র ওষুধ উৎপাদন বা বিপণন নয়। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও দেশের একমাত্র সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস লিমিটেড (ইডিসিএল) এগিয়ে চলেছে  ধারাবাহিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ঝুঁকির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরলস কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানের সব পর্যায়ের কর্মীরা। করোনা মহামারির সময় টিকা আমদানিতে সরকারি অর্থের ব্যয় কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জে দেশে প্রথম ভ্যাকসিন প্লান্ট তৈরির উদ্যোগ নেন।

 প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে ইডিসিএলের মাধ্যমে কোভিড ও ডেঙ্গুসহ ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদন করা যাবে। ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো মহামারি বা অতিমারি মোকাবিলায় নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি হবে। আর আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বমানের গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের টিকা রপ্তানিও করা যাবে। একইসাথে দেশের সর্বজনীন টিকা কার্যক্রম (ইপিআই) শক্তিশালী হবে। আর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে তৈরি হবে গবেষণার সুযোগ।
ইডিসিএলে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিসহ সার্বিক সক্ষমতার কারিগর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির। 

ইডিসিএলের চলমান অগ্রযাত্রা বিষয়ে জানতে চাইলে আমার সংবাদকে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে সবার আগে প্রয়োজন শৃঙ্খলা। প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর আস্থা রেখে সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়ার পর আমি সবার আগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি। সবগুলো বিভাগকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এসেছি। এতে করে কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি যখন ২০১৪ সালে দায়িত্ব নিয়েছি তখন বার্ষিক উৎপাদন ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। এখন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি। বার্ষিক উৎপাদন বাড়ার পেছনে আমি বাজার সমপ্রসারণকে গুরুত্ব দিয়েছি। সরকারি চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সাথে বেড়েছে আাামদের দায়িত্ব। সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, কারা কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে আমাদের ওষুধ। আমি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক মেশিন নিয়ে এসেছি। ওষুধের কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা রেখেছি। এতে করে অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। 

ইডিসিএলকে নিয়ে নেতিবাচক কোনো সংবাদে বিব্রত হন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি সততা ও ন্যায়ের পথের মানুষ। আমি জানি আমি কি কাজ করছি। ইডিসিএল দেশের মানুষের সম্পদ। এ সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের কল্যাণ করাই আমার দায়িত্ব। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ করোনা মহামারির সময়ে একদিনের জন্যও ইডিসিএলের উৎপাদন বন্ধ ছিল না। করোনা ভাইরাস সংশ্লিষ্ট জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো অধিক পরিমাণ উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত থাকে। যা দেশের মানুষের জন্যই আমরা করেছি।
 

Link copied!