Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

শহরে বাড়ছে অটিজম আক্রান্ত শিশু

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

এপ্রিল ২, ২০২৪, ১১:৪৭ এএম


শহরে বাড়ছে অটিজম আক্রান্ত শিশু
  • নারীর চেয়ে পুরুষের অটিজমের হার বেশি
  • দেশে চিকিৎসা পর্যাপ্ত নয়
  • জেনেটিক কারণে জন্ম নিচ্ছে অটিজম শিশু

শিশু জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে অটিজম শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসায় অনেকাংশে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব
—অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সামনে আড়াই বছর বয়সি শিশুকে নিয়ে ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে আছেন আয়েশা আক্তার। তার সাথে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, জন্মের পর থেকেই তার শিশু স্বাভাবিক নয়। সব সময় চুপচাপ বসে থাকে। কথা বললে সাড়া দেয় না। চিকিৎসক বলেছেন শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে দিয়ে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। কিন্তু আশানুরূপ কোনো ফল পাচ্ছেন না। আয়েশা আক্তারের শিশুর আক্রান্ত রোগটিকে অটিজম বলা হয়। অটিজম হচ্ছে মস্তিষ্কের বা স্নায়ুবিক সমস্যা। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজ-অর্ডার বলে। 

সরকারের ডিজ্যাবিলিটি ইনফরমেশন সিস্টেমের তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ৮৬ হাজার ১৪২ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ৫২ হাজার ৮৩৮ জন, মেয়ে ৩৩ হাজার ৫২০ জন এবং হিজরা ৫৪ জন। অন্যদিকে ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমের (ইপনা) তথ্য বলছে, গ্রামের চেয়ে শহরে অটিজম শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে ১৪ জন এবং শহর এলাকায় প্রতি ১০ হাজারে ২৫ শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। মেয়ে শিশুর চাইতে ছেলে শিশুর মধ্যে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি। 

এছাড়া দেশে ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সি শিশুদের মধ্যে অটিজম বিস্তারের হার প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন। বৃহৎ এই অটিজম আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার জন্য দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রম চলমান থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। দেশে আট বিভাগে ৩৪টি শিশু বিকাশ কেন্দ্রে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হয়। অটিজম চিকিৎসার সংকটের মধ্যেই সারা বিশ্বের মতো আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম আক্রান্ত মানুষ সমাজে এখনও অবহেলার শিকার। অটিজম নিয়ে সমাজে প্রচলিত রয়েছে কুসংস্কার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজমের মধ্যে তিনটা মাত্রা আছে- মৃদু মাত্রা, মধ্যম মাত্রা ও অতিমাত্রা, এই তিন ধরনের অটিজম থাকতে পারে। অটিজমের বাচ্চাদের মধ্যে মেধার কোনো কমতি থাকে না। 

কিন্তু তাদের আচরণগত সমস্যা থাকে। অটিজম কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। অটিজম মূলত মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতাজনিত রোগ। এটি মানুষের হরমোনজনিত সমস্যার বহিঃপ্রকাশ। এটির প্রতীকী রং নীল। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য যেমন আলাদা; তেমনি তাদের প্রতিভাও ভিন্ন। কেউ হয়তো ভালো ছবি আঁকতে পারছে, কেউ বা নিজের কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারে। এসবই অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সাফল্য বলে খুশি থাকতে হবে। তারা আরও বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্য কেবল মাকে নয়, বাবাকেও কোয়ালিটি সময় দিতে হবে। জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুলে সপ্তাহে অন্তত একদিন বিশেষ শিশুদের জন্য সুযোগ রাখা প্রয়োজন। অভিভাবকদের কাউন্সিলিং দরকার। কারণ এই শিশুদের অভিভাবকরা ভালো থাকলে তাদের সন্তানটিও ভালো থাকবে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু অটিজমের কারণ হিসেবে বলেন, অটিজম একটি জেনেটিক সমস্যা। যেসব বাচ্চার জেনেটিক সমস্যা থাকে সেসব শিশু এ ধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মায়। শৈশবে ব্যবস্থা নেয়া গেলে অটিজম নিয়ে জন্ম নেয়া শিশু প্রাপ্তবয়সে অনেকটাই স্বাভাবিক হতে পারে। শৈশবে ব্যবস্থা নেয়া বলতে বোঝায় জন্মের ১৮ মাস থেকে ৩৬ মাস বয়সের মধ্যে অটিজম শনাক্তকরণ ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে শিক্ষা পরিকল্পনার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিশুকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া। এ ধরনের শিশুর প্রধান চিকিৎসা স্পিচ থেরাপি, নিওরোবিহেভিওরাল থেরাপি।

 অতিরিক্ত আচরণগত সমস্যা, ঘুমের সমস্যা ও শারীরিক সমস্যার জন্য মেডিকেল চিকিৎসা এবং বিশেষ স্কুলে শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। গ্রামের বাচ্চাদের চেয়ে শহরের বাচ্চাদের মধ্যে এই প্রবণতাগুলো বেশি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্রামের শিশুরা অন্য শিশুদের সঙ্গে সহজে খেলার সুযোগ পায়, তাদের মোবাইল ফোনে খেলার সুযোগ কম, রেডিয়েশন আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম, ফলে গ্রামের বাচ্চাদের মধ্যে এই সমস্যা কম।
 

Link copied!