নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:২০ এএম
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাত দফা দাবিতে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশ আজ শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুপুর ২টায় শুরু হওয়া এই সমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি। এ লক্ষে সারা দেশেই চালানো হয় ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রচার-প্রচারণা।
জামায়াত বলছে, এটি হবে দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় রাজনৈতিক জনসমাগম। দেশব্যাপী মিছিল, সভা, লিফলেট বিতরণ, পোস্টার, ব্যানার, মাইকিং ও সাংস্কৃতিক প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সমাবেশে অংশগ্রহণে আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারের ঝড় তুলেছিল জামায়াত। আজকের সমাবেশে দলটি সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরবে।
দাবিগুলো হলো- ১. ২০২৪ সালের ৫ আগস্টসহ পূর্ববর্তী সব গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা।
২. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে মৌলিক সংস্কার আনা।
৩. ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন।
৪. জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন।
৫. পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন।
৬. প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
৭. রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।
জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ আরও কয়েকটি দল। বিএনপিকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কি না- সে বিষয়ে দলটি স্পষ্ট অবস্থান না নিলেও কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি নেতারাও আমন্ত্রিত থাকবেন।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসান মাহবুব জোবায়ের জানিয়েছেন, প্রায় ১০ হাজার বাস, কয়েকটি স্পেশাল ট্রেন ও নৌযান রিজার্ভ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে প্রায় ১,৫০০ বাস, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী থেকে ট্রেন এবং লঞ্চে করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাঠ প্রস্তুতির বিষয়েও জানানো হয়, প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক থাকবে যাদের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট পোশাক ও ডিউটি কার্ড। আগতদের গাড়ি রাখার জন্য ১৫টি পার্কিং স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে।
উদ্যানের ভিতরে ও বাইরের জন্য ১৫টি মেডিকেল বুথে থাকবে এমবিবিএস ডাক্তার, ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্স। ড্রোন ও আধুনিক ক্যামেরায় সমাবেশের পুরো কার্যক্রম ধারণ করা হবে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরাসরি সমপ্রচার করা হবে। মাঠে বড় এলইডি স্ক্রিন বসানো হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। রাজধানীর শপিং মল, পাড়া-মহল্লা, মার্কেট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার, লিফলেট, পোস্টার ও ভ্রাম্যমাণ মাইকিং চলছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা গান, নাটিকা ও পথনাটকের মাধ্যমে জনগণকে সমাবেশে আগ্রহী করে তুলছেন। সকল প্রস্তুতির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য—একটি শান্তিপূর্ণ, শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং রাজনৈতিকভাবে বার্তাবাহী সমাবেশ অনুষ্ঠিত করা, যা বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
দুর্ভোগের জন্য অগ্রিম ক্ষমা প্রার্থনা জামায়াতের
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ অনুষ্ঠেয় জাতীয় সমাবেশের কারণে রাজধানীতে দুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় অগ্রিম ক্ষমা প্রার্থনা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল শুক্রবার বিকালে সমাবেশ স্থল পরিদর্শনের পর দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা জানান।
তিনি দাবি করেন, রাত থেকে দলের লাখ লাখ নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নিতে ঢাকায় আসবেন। সমাবেশে জামায়াতের ছাড়াও অন্যান্য দলের নেতারা অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান পরওয়ার। সমাবেশ স্থলে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার বোতল পানির সরবরাহ করা হবে। আগতদের জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা, অজু করার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান জামায়াত সেক্রেটারি।
তিনি বলেন, মঞ্চে অন্তত তিনশ জন অতিথি থাকবেন, এতে বিগত জুলাই আন্দোলনের শহীদ, আহতদের পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন। সমাবেশ থেকে দলের সাত দফা কর্মসূচিসহ আরও কিছু জরুরি রাজনৈতিক দাবি সামনে আসবে বলে উল্লেখ করেন পরওয়ার। এসময় নায়েবে আমির মজিবুর রহমানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।