নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১৭, ২০২৫, ১২:১৫ এএম
বিদ্যুৎ চুক্তিতে ক্যাপাসিটি চার্জ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে বিগত সরকারের আমলের বিদ্যুৎ চুক্তিগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পর্যালোচনা করছে। আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির মধ্যে থাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বা পেমেন্ট বাদ দেয়া বা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে গ্যাস ও তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট প্রতি কিলোওয়াট প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ মার্কিন ডলার আর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর জন্য প্রতি কিলোওয়াট প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ মার্কিন ডলার। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গ্যাস বা তরল জ্বালানিভিত্তিক এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার কেন্দ্রে বছরে ১২০ থেকে ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে বার্ষিক ২৪০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। সেগুলো সরকারের ভর্তুকির হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তবে তা কমানোর সুযোগ রয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কারে সরকার গত বছর আইপিপি ও যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনা করতে কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি বর্তমানে বিদ্যমান পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) পরীক্ষা করছে। যাতে এ ধরনের চার্জ থেকে বিপিডিবির আর্থিক বোঝা কমানোর উপায় খুঁজে বের করা যায়। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি সব পিপিএ পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে এরই মধ্যে করা হয়েছে বেশ কিছু সংস্কার কাজ। তার মধ্যে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর রিটার্ন অব ইক্যুইটি (আরওই) ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করে পিডিবি বছরে ৩১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, নওপাজেকো (৬টি প্লান্ট) ১৩৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা, এপিএসসিএল (৫টি প্লান্ট) ৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ইজিসিবি (৩টি প্লান্ট) ৩২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, আরপিসিএল (৪টি প্লান্ট) ৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং বিআরপিএল (২টি প্লান্ট) ২৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সাশ্রয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাছাড়া স্থায়ী পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওঅ্যান্ডএম) চার্জ কমিয়ে ৪৩২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ১০ শতাংশের কম প্লান্ট ফ্যাক্টরে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সংশোধিত স্থায়ী ওঅ্যান্ডএমের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধের সীমা নির্ধারণ করে ৫৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং যৌথ উদ্যোগের কোম্পানিগুলোর প্রকল্প নির্মাণকালে ইক্যুইটির ওপর আয় পরিশোধ বাতিল করে ৬৮৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সাশ্রয় করা। পাশাপাশি প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ১০০ কিলোক্যালোরি তাপ হার কমিয়ে ৫৩৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। তাছাড়া বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) ছাড়া বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) জন্য প্রকৃত হারে ওঅ্যান্ডএম শুল্ক যৌক্তিকীকরণ করে ১৬৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। পাশাপাশি আদানি পাওয়ারের কয়লার দাম কমানোরও কাজ শুরু হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বিদ্যুতের মূল্যের স্বচ্ছতার জন্য পিপিএর অসঙ্গতিগুলো সংশোধন করা জরুরি। পিডিবি প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ ১২ টাকায় কিনে ৮ টাকা ৯৫ পয়সায় বিক্রি করে। ফলে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় তিন টাকা পাঁচ পয়সা লোকসান দিতে হচ্ছে। যা ভর্তুকির মাধ্যমে মেটানো হয়। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ হাজার মেগাওয়াট, যেখানে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে স্বেচ্ছায় তাদের পিপিএ পুনর্বিবেচনা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, আইপিপিগুলোর সঙ্গে ট্যারিফ নেগোসিয়েশন চলমান রয়েছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলোতে ক্যাপাসিটি পেমেন্টের যে অপশন রয়েছে, তা নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করা হচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জ তো শতভাগ বাদ দেয়া যাবে না। কমিয়ে আনতে কাজ চলছে। আর ক্যাপাসিটি চার্জ কমিয়ে আনতে পারলে বিদ্যুতের দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত শুক্রবার এক পোস্টে জানানো হয়, সরকার আইপিপিদের সঙ্গে চুক্তি পর্যালোচনা করছে, যাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্টের ধারা বাদ দেয়া যায়। যা দীর্ঘকাল ধরে প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করেছে।