আমার সংবাদ ডেস্ক
আগস্ট ৯, ২০২৫, ১২:১০ এএম
ভারতের কলকাতা লাগোয়া উপনগরীটাতে শত শত বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, রাত-দিন লাখ লাখ মানুষের ভিড় সেখানে। ব্যস্ত এই এলাকায় একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে এমন কয়েকজন যাতায়াত করছেন, যাদের কয়েক মাস আগেও সেখানে দেখা যেত না। বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করেন, এমন বেশিরভাগই চেনেন না এই নবাগতদের, চেনার কথাও নয়।
তবে এদের অনেকেই মাত্র এক বছর আগেও বাংলাদেশের সব থেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তারা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলির শীর্ষ এবং মধ্যম স্তরের নেতা। তারা যে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সটিতে যাতায়াত করছেন কয়েক মাস ধরে, সেখানেই ‘দলীয় দপ্তর’ খুলেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এই পার্টি অফিসটি নতুন।
এর আগে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরের কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা ভারতে অবস্থান করছেন, তারা নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বৈঠক বা দলীয় দপ্তরের কাজকর্ম চালাতেন নিজেদের বাসাবাড়িতেই। বড় বৈঠকগুলো অবশ্য করতে হত কোনো রেস্তরা বা ব্যাঙ্কয়েট হল ভাড়া করে। সেকারণেই একটা নির্দিষ্ট ‘পার্টি অফিসে’র দরকার ছিল বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
কীরকম সেই ‘পার্টি অফিস’? বাণিজ্যিক পরিসরটির পেছনের দিকের ভবনটির ৮ তলায় লিফট দিয়ে উঠে বাঁদিকে গেলেই বাণিজ্যিক সংস্থার দপ্তর। করিডোরের দুদিকে হালকা বাদামী রঙের একের পর এক দরজা। তারমধ্যেই একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস।
শুধু বাইরে কেন, পাঁচশ বা ছয়শ স্কয়ার ফুটের ঘরটিতে উঁকি মারলেও কেউ বুঝতে পারবেন না যে এই ঘরটির সঙ্গে কোনোভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত আছে।
কোনো সাইন বোর্ড, শেখ হাসিনা অথবা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি কোথাও নেই ঘরটির বাইরে বা ভেতরে। ‘বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি খুবই সচেতনভাবে। আমরা চাইনি যে এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দপ্তরে যেসব ফাইল থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না।
নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার, টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি।’
বলছিলেন একজন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনিই জানালেন, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এই দপ্তরেই হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনো হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো, যেখানে শ দুয়েক নেতাকর্মী হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাঙ্কয়েট হল বা কোনো রেস্তরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেয়া হয়।
কারা যাতায়াত করেন ‘পার্টি অফিসে’? গত বছরের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রীই কলকাতা বা তার আশপাশের অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।
এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও চলে এসেছেন ভারতে। মাস ছয়েক আগে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছিল যে অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়রসহ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় ২০০ জন কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে থাকছেন।
এদের কেউ সপরিবারে থাকেন, আবার কোথাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কারও পরিবার মাঝে মাঝে বাংলাদেশ থেকে এসেও কিছুদিন কাটিয়ে যান। ‘এখন যে সংখ্যাটা খুব বেশি বেড়েছে তা নয়। বর্তমানে দ্বাদশ সংসদের ৮০ জনের মতো সংসদ সদস্য এবং তারও আগে সংসদ সদস্য ছিলেন, এমন ১০-১২ জন নেতা আছেন এখানে। আবার এমনও কয়েকজন এসেছেন যারা কলকাতায় এসে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন।’
বলছিলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও থাকেন কলকাতার আশেপাশেই। কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বাস করছেন, তাদের প্রায় সবাই ‘পার্টি অফিসে’ যাতায়াত করে থাকেন।
‘তবে অফিস খোলার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যেরকম প্রয়োজন, সেরকমই আসেন নেতারা। আবার রোজই যে সবাই আসেন, তাও নয়। আসলে প্রয়োজনীয়তা ছিল একটা নির্দিষ্ট জায়গা গড়ে তোলা, সে জন্যই এই পার্টি অফিস।’
জানাচ্ছিলেন ওই নেতা। আওয়ামী লীগের এই নতুন পার্টি অফিসের ব্যাপারে ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ যে কিছু জানবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। দলেরও কোন স্তরের নেতাকর্মীরা এই অফিসের ব্যাপারে কতটা জানেন, সেটা জানা যায়নি। কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ভারতীয় গোয়েন্দারা এই অফিসের ব্যাপারে জানেন এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া এই দলীয় অফিস থেকে আওয়ামী লীগের কাজকর্ম চলতে পারত না।
যেভাবে দল চলছে এক বছর ধরে : গত এক বছরের কিছুটা কম সময় ধরে ভারত থেকেই আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির কাছাকাছি কোথাও থাকেন, আর বড় অংশ থাকেন কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চলে।
তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলছিলেন, ‘এই ধারণাটা ঠিক নয় যে ভারত থেকে দল চলছে। মূল দল বা সহযোগী সংগঠনগুলোর কতজন নেতাই বা ভারত অথবা অন্যান্য দেশে রয়েছেন? বেশিরভাগ তো এখনো বাংলাদেশেই আছেন।’
কিন্তু দলের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে আছেন বলে সেখান থেকেই যে রাজনৈতিক দিশা-নির্দেশ দেয়া বা দলীয় অবস্থান চূড়ান্ত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবুও দু সপ্তাহ আগে পর্যন্তও শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি দল নেত্রীর। গত ৩১ জুলাই শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজনকে দিল্লিতে এক বৈঠকে ডেকেছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ওই বৈঠকের বিষয়টি বিবিসি বাংলার কাছে নিশ্চিত করেছিলেন, তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোথায় বৈঠক হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ওই নেতারা।
দলের নেত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকটি ছাড়া এবং নিজেদের মধ্যে সশরীরে দেখা সাক্ষাৎ এবং বৈঠক ছাড়া দলটির বাকি সব কাজই চলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের জন্য আলাদা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ ইত্যাদি গড়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মিতই লাইভ অনুষ্ঠান করে থাকে দলটি। এরকম লাইভ অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝেই যোগ দেন শেখ হাসিনা নিজেও। সেসব আলোচনাগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা যেমন হয়, তেমনই আবার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী- যারা বাংলাদেশেই থেকে গেছেন, তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়ে থাকে। সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলছিলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারছি, তাদের মতামত জানতে পারছি, কী করণীয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারছি।’
‘ভার্চুয়াল মাধ্যমে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের। কোনো একটা ব্যবস্থা বদলানোতে এই তরুণ প্রজন্মের বড় ভূমিকা থাকে। আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাদের কাছেই পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। বলছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ।
‘কর্মীরা দেশে মার খাচ্ছেন, নেতারা কেন ভারতে?’ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মাঝে মাঝেই এই প্রশ্ন ওঠে যে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা যখন দেশে মার খাচ্ছেন, গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাচ্ছেন, তখন শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ কেন ভারতে পালিয়ে আছেন। সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলছিলেন, ‘এই প্রশ্ন ওঠা যে খুব অযৌক্তিক তা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হল, ১৯৭১-এ যদি তখনকার নেতৃত্ব ভারতে চলে এসে প্রবাসী সরকার গঠন না করতেন, তাহলে কী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হত? আমি ৭১-এর সঙ্গে তুলনা করছি না বর্তমান সময়ের, কিন্তু এরকম উদাহরণ আমাদের দেশেও রয়েছে, অন্যান্য দেশেও আছে যে বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করে, শক্তি সঞ্চয় করে দেশে ফিরে ক্ষমতা দখল করেছেন নেতারা। পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ বা বেনজির ভুট্টো বলুন বা আমাদের দেশের তারেক রহমান। সবাই তো বিদেশ থেকেই দল পরিচালনা করেছেন বা এখনও করছেন।’ তার প্রশ্ন, ‘দেশে থাকলে হয় জেলে থাকতে হত, মেরেও ফেলতে পারত। কিন্তু তাহলে আমাদের যে রাজনৈতিক কাজকর্মু বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা, দলকে আবারও সংগঠিত করা; সেগুলো কি আমরা করতে পারতাম?’, বলছিলেন সাবেক ওই সংসদ সদস্য।
নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা : ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতারা দলের নেত্রীর সঙ্গে আলোচনাক্রমেই দলের রাজনৈতিক অবস্থান ঠিক করেন। যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তার প্রথম বর্ষপূর্তি পালন করছে, সেই সময়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের ‘ব্যর্থতা’গুলোকেই তুলে ধরার অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন প্রচার করেছিল এই সরকার, তাতে তারা গত একবছরে সব দিক থেকেই ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতি ফেইল করেছে, বিচারব্যবস্থা প্রহসনে দাঁড়িয়েছে। আর সবক্ষেত্রেই তাদের ব্যর্থতার জন্য তারা শেখ হাসিনা আর ভারতের ওপরে দায় চাপাতে ব্যস্ত। একটা যেন ইন্ডিয়া ফোবিয়া, হাসিনা ফোবিয়া হয়ে গেছে তাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘একবছর পরে তাদের নিয়ে সেই উন্মাদনা কিন্তু আর নেই। তাদের মুখের কথায় মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছে না, বিভ্রান্ত হচ্ছে না। সবাই বাস্তবতার নিরিখে মূল্যায়ন করছে সরকারের। তাদের এই ব্যর্থতার জন্য বহু মানুষ বলছেন শেখ হাসিনার সময়েই ভালো ছিলাম।
নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতিও ভারতে : বাংলাদেশে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভারতে অবস্থান করছেন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে।
তিনি বলছিলেন, ‘গত একবছর ধরে ক্যাম্পাসটা খুব মিস করি। দেশে থাকলেও যে গত এক বছরে ক্যাম্পাসে যেতে পারতাম তা নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাজার হাজার ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থক তারা তো দেশে থেকেও ক্যাম্পাসে যেতে পারছেন না একবছর ধরে। তাদের ক্লাস করতে দেয়া হয় না, তারা পরীক্ষা দিতে পারেন না, পাশ করলেও সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে না। এদের সবার শিক্ষাক্রমটাই শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’
ছাত্রলীগের এই নেতা আরও বলেন, এটা যে শুধু ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে করা হচ্ছে, তা নয়। আওয়ামী লীগ করেন বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এমন পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও এই একই ঘটনা হচ্ছে। শুধু যে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে, তা-ও নয়। এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি বহু ছাত্রছাত্রী। শুধুমাত্র তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিবারের সন্তান বলে।
অর্থায়ন কীভাবে হচ্ছে? ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলীয় প্রচার প্রচারণার জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না ঠিকই, কিন্তু খরচ তো আছে। আবার যেসব নেতাকর্মীরা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের ব্যক্তিগত খরচও চালাতে হয়। কীভাবে সেসবের জন্য অর্থের সংস্থান হচ্ছে? আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিবিসিকে বলেছেন, দেশে, বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরাই তাদের খরচ চালাচ্ছেন।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের কথায়, ‘সাংগঠনিকভাবে আগস্টের পরে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেই অন্ধকার অতিক্রম করা কঠিন কাজ। যেসব নেতাকর্মী দেশে বা বিদেশে আছেন, তারাই এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসছেন, অর্থ সাহায্য করছেন। কর্মীরা এখানে কষ্ট করেই আছেন, তবে মনোবলই আমাদের সম্বল।’
আরেক নেতা নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলছিলেন, দেশ থেকে তার পরিবার-পরিজন এবং সহকর্মীরা প্রয়োজন মতো অর্থ পাঠিয়ে দেন। ‘তবে এই এক বছরে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে, বলছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ। তার কথায়, ‘আমরা যে এখানে মানবেতর জীবন যাপন করছি, বা ৭১-এর যুদ্ধের সময়ের মতো শরণার্থী শিবিরে থাকছি তা নয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে যাদের মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত জীবনযাত্রা ছিল, সে সবই পরিবর্তন করতে হয়েছে। যারা ঢাকায় হয়তো গাড়ি ছাড়া চলতেন না, তাদের এখন কলকাতার গণপরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেমন আমি একটি ফ্ল্যাটে আরও তিনজনের সঙ্গে থাকি। বাসে, ট্রেনে বা মেট্রো রেলে যাতায়াত করি। আবার সহকর্মীদের মোটরসাইকেল বা বাইকেও চেপে ঘোরাঘুরি করি। যদি কয়েকজন মিলে একসঙ্গে কোথাও যেতে হয়, তখন হয়তো ট্যাক্সিতে উঠলাম। ভাড়াটা ভাগাভাগি করে নিলে গায়ে লাগে না। আসলে সঞ্চিত অর্থে যতটা স্বল্প খরচে চলা যায়।
কিন্তু কতদিন থাকবেন তারা দেশ ছেড়ে? ওবায়েদুল কাদের বলছেন, ‘দিনক্ষণ ঠিক করে ওভাবে তো রাজনৈতিক লড়াই হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।’