নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১২, ২০২৫, ১২:১১ এএম
হৃদরোগের চিকিৎসাসেবার ব্যাপ্তি বাড়ানো এবং খরচ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। প্রতি বছর হৃদরোগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অবকাঠামো এবং অর্থসংকটের কারণে সঠিক চিকিৎসার অভাবে দুই লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।
বলা যায় অসংক্রামক রোগ হিসেবে দেশে মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর অন্যতম হৃদরোগ ও রক্তনালির রোগ। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্টেন্টের দাম কমানো, নতুন করে কিছু ক্যাথেটারাইজেশন ল্যাব (ক্যাথল্যাব) স্থাপন, বন্ধ থাকা ক্যাথল্যাব চালু করা, কয়েকটি হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্টের পদ সৃষ্টি, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে হৃদরোগ চিকিৎসার ডিভাইসের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করার জন্য কাজ করছে সরকার। ওসব পদক্ষেপের আওতায় চিকিৎসার খরচ কমানোর পাশাপাশি ঢাকার বাইরে বেশ কিছু জেলায় হৃদরোগের চিকিৎসাসেবার ব্যাপ্তি বাড়ানো হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশের বিপুলসংখ্যক হৃদরোগী পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৪২টি কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট রয়েছে, যার মধ্যে ৩২টিতে কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি করার ব্যবস্থা আছে।
বর্তমানে মাত্র তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি হয়। সিলেট, রংপুর, খুলনায় ক্যাথল্যাব আছে। সেখানে এনজিওগ্রাম হয় কিন্তু সার্জারি হয় না।
প্রতিবছর দেশে ১০-১২ হাজার কার্ডিয়াক সার্জারি হয়। কিন্তু প্রায় ২৫ হাজার সার্জারির প্রয়োজন। আর হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য ক্যাথল্যাব অত্যন্ত জরুরি। ওই ল্যাবে এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি, পেস-মেকার বা আইসিডি ইমপ্লান্টেশনসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়।
সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৮৭টি ক্যাথল্যাব রয়েছে। তার মধ্যে রাজধানীতে ৫৮টি স্থাপন করা হয়েছে। আর দক্ষ জনবলের অভাবে আটটি ক্যাথল্যাব সারা দেশে পড়ে আছে। তাছভাড়া ঢাকায়ও অনেক হাসপাতালে অচল ক্যাথল্যাবে যন্ত্র।
সূত্র জানা, বিভিন্ন ধরনের হৃদ্রোগে দেশে প্রায় ৪ লাখ শিশু ভুগছে। প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার শিশু জন্মগতভাবে হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নেয়। প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। অথচ দেশে শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ৩০ জনের বেশি নয়। তাদের প্রায় সবাই ঢাকায় চিকিৎসাসেবা দেন। ফলে জরুরি সেবার অভাবে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে।
বর্তমানে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আরও একটি ক্যাথলাব স্থাপন করা হবে। ওই হাসপাতালে এখন সাতটি ক্যাথল্যাব রয়েছে, কিন্তু সবগুলো সবসময় কার্যকর থাকে না।
ফরিদপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ হাসপাতালে ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হলেও ব্যবহার শুরু হয়নি। দ্রুত এসব ক্যাথল্যাব চালু করার লক্ষ্য সরকারের রয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি বগুড়া, রাজশাহী ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
তাছাড়া ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে স্টেন্টের (হার্ট রিং) গড় মূল্য ও বাংলাদেশের কর কাঠামো পর্যালোচনা করে দেশে স্টেন্টের নতুন দাম নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কম দামি স্টেন্টের ক্ষেত্রে ওই পার্থক্য খুব বেশি না। কিন্তু ১ লাখ টাকার বেশি দামের স্টেন্টের ক্ষেত্রে পার্থক্য অনেক। সরকার বর্তমানের তুলনায় অন্তত ৫ হাজার টাকা হলেও দাম কমানোর কথা ভাবছে।
এদিকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, কয়েক মাস ধরেই হৃদরোগীদের চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। দেশের হাসপাতালগুলো রোগীদের এই বাড়তি চাপ সামাল দিতে সক্ষম হচ্ছে। কোনো হৃদরোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না। এখন স্টেন্টের মূল্যও একটি যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হবে। হৃদরোগের চিকিৎসায় কোথায় কী সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা করা হবে, যাতে রোগীদের ঢাকায় আসতে না হয়।