ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

ফরিদপুরে যেভাবে আশ্রয় নিয়েছিলেন মরিয়মের মা রহিমা বেগম

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২, ০৫:৫২ পিএম

ফরিদপুরে যেভাবে আশ্রয় নিয়েছিলেন মরিয়মের মা রহিমা বেগম

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লা (৬৯) খুলনার সোনালী জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন দীর্ঘদিন। সেই হিসেবে পরিচিত ও সম্পর্কের সূত্র ধরে তার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন খুলনার মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম (৫২)। ওই বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার পর রহিমা বেগম বলেছিলেন, সন্তানদের ওপর অভিমান করে তিনি বাড়ি ছেড়ে রাগ করে চলে এসেছেন। তিনি আর বাড়ি ফিরতে চান না। তিনি পূর্ব পরিচিত কুদ্দুস মোল্লার কাছে স্থানীয় জুট মিলে যে কোন একটা কাজের জোগাড় করে দিতেও অনুরোধ জানান। এছাড়াও তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি-জমা নিয়ে বিরোধের কথাও বলেছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার বাসিন্দা কুদ্দুস মোল্লা দীর্ঘদিন খুলনার সোনালী জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। প্রায় দশ বছর আগে ওই পাটকল বন্ধ হওয়ার পর কুদ্দুস মোল্লা বোয়ালমারীর সৈয়দপুরে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। এই বাড়ি থেকেই শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে খুলনা মহানগর পুলিশের একটি দল রহিমা বেগমকে উদ্ধার করেন।

এর আগে গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছিলেন সন্তানেরা।

গত শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত বারটার দিকে সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে সরেজমিনে জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে একটি বাসে করে রহিমা বেগম সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড নামেন। তখন তার হাতে একটি ব্যাগ ছিল। তিনি এসে ওই বাজারের মুদিদোকানদার ইউনুস বিশ্বাসের কাছে কুদ্দুস মোল্লার বাড়ির খোঁজ জানতে চান। তখন ইউনুস বিশ্বাস রহিমার পরিচয় জানতে চান।

রহিমা বেগম বলেন, তিনি বরিশাল থেকে এসেছেন, তিনি কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরার চাচাতো বোন। তখন ইউনুস এক শিশুকে সঙ্গে দিয়ে তাঁকে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

কুদ্দুস মোল্লার জামাতা নূর মোহাম্মদ বলেন, রহিমা বেগম কেন এবং কী কারণে বাড়িতে এসেছেন, তা তিনি তার শাশুড়ি হীরা বেগমের কাছে জানতে চান। হীরা বেগম জানান, তারা যখন খুলনা ছিলেন তখন রহিমার সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। সেই সূত্রে তিনি বেড়াতে এসেছেন।

কুদ্দুস মোল্লার মেয়ে সুমাইয়া বেগম বলেন, রহিমা বাড়িতে স্বাভাবিকভাবেই দিনগুলো কাটিয়েছেন। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন এবং সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। আশেপাশের বাড়িতে বেড়াতেও গিয়েছেন। তবে তার চোখের সমস্যা ছিল, চোখ দিয়ে পানি পড়ত। এ জন্য বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ে চিকিৎসকও দেখানো হয়।

রহিমা বেগম আমাদের জানান, জমি নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে তাদের ঝামেলা চলছে। এই ঝামেলার জন্য তাকে মারধর করা হয়েছে। তাই তিনি বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। যদিও তার শরীরে মারপিট করার কোনো আঘাত পাওয়া যায়নি। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। মাথায় কাটা দাগ দেখান।

এ ব্যাপারে কুদ্দুস মোল্লার আপন ভাগনে মোহাম্মদ জয়নাল বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং বিভিন্ন অনলাইনে ও মিডিয়াতে তিনি রহিমা বেগমের ছবি দেখতে পান। ওই ছবিটি দেখানো হলে রহিমা বেগম ছবিটা নিজের বলে শনাক্ত করেন।

এরপর তিনি লোকজনকে বলেন, তার সন্তানরা তাকে অপছন্দ করেন। এ কারণে তিনি আর বাড়িতে ফিরতে চান না। তিনি বাড়ি গেলে তাকে মেরে ফেলবে বলেও জানান রহিমা বেগম। রহিমা বেগম জানিয়েছিলেন, তিনি মৃত স্বামী মান্নানের কাছ থেকে দুই কাঠা জমি পেয়েছেন। তার ছেলে-মেয়েরা এই জমি বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ছেলে-মেয়েরা জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে চান। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। তিনি তাই রাগ-অভিমান করে প্রাণে বাঁচার জন্য চলে এসেছেন।

জয়নাল মোল্লা আরও জানান, এ ঘটনা জানার পর কুদ্দুসের ছেলে আল আমিন ফেসবুকে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে কমেন্ট করেছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ ছাড়া ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করে তিনি রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজের মোবাইল নম্বর পেয়ে মোবাইলে ফোন দেওয়ার পর ফোনটি এক নারী ধরেন। ওই নারী ধমক দিয়ে বলেন, এই নম্বরে আর ফোন দেবেন না। এ কথা বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। এরপর রহিমা বেগমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এরপর শনিবার সকালে স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. মোশারফ মোল্লাকে বিষয়টি জানানো হয়। ইউপি মেম্বার মোশারফ মোল্লা খুলনা সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলের সহযোগিতায় বিষয়টি খুলনা পুলিশকে জানান। মোশারফ মোল্লার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ নিশ্চিত হয় রহিমা বেগম সৈয়দপুর গ্রামে আছেন। পুলিশ রহিমা বেগমকে নজরে রাখতে বলেন।

পুলিশ জানায়, যেকোনো মুহূর্তে তারা সৈয়দপুর আসবে। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইউপি মেম্বার মোশারফ মোল্লা আমাকে ফোন করে বলেন খুলনা থেকে লোকজন এসেছে। এরপর খুলনা মহানগর পুলিশের এডিসি আবদুর রহমানের সঙ্গে একজন নারী পুলিশ সদস্যসহ চার-পাঁচজন কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে প্রবেশ করেন। এডিসি আবদুর রহমান গিয়ে রহিমা বেগমের সামনে দাঁড়ান। আবদুর রহমান তাকে বলেন, আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন কি না, আমি আবদুর রহমান। এ সময় রহিমা বেগমকে আরও কিছু প্রশ্ন করেন তিনি। তবে তখন কোনো প্রশ্নের উত্তরই রহিমা বেগম দেননি। পুলিশ আসার আগে রহিমা বেগম বাড়ির সবার সঙ্গে গল্প করছিলেন। পুলিশ দেখে তিনি একেবারে চুপচাপ হয়ে যান। পরে রহিমা বেগমকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরা বেগম (৬০), ছেলে আল আমিন (২৫) ও কুদ্দুসের ভাইয়ের স্ত্রী রাহেলা বেগমকেও (৪৫) নিয়ে যায় পুলিশ।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনের চৌচালা ঘরবিশিষ্ট এই বাড়িতে চারটি কক্ষ রয়েছে। যার একটি কক্ষে রহিমা বেগম থাকতেন। নূর মোহাম্মদ জানান, রহিমা বেগম প্রথম প্রথম একাই ওই কক্ষেই থাকতেন। তবে শুক্রবার রহিমা বেগমের বিষয়টি জানার পর হীরা বেগম তার সঙ্গে থাকতেন।

ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন মোল্লা বলেন, কুদ্দুস মোল্লা বর্তমানে স্থানীয় জনতা জুট মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরিবারটি অত্যন্ত নিরীহ। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। শনিবার রাতে রহিমা বেগমের সঙ্গে কুদ্দুসের স্ত্রী-পুত্রসহ তিনজনকে নিয়ে যায় পুলিশ। বিকেল পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

কেএস

Link copied!