Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৪,

জয়পুরহাট-২ আসন

হারানো আসন পুনরুদ্ধার চায় গৃহদ্বন্দ্বে আওয়ামীলীগ- বিএনপি

গোলাপ হোসেন, জয়পুরহাট প্রতিনিধি:

গোলাপ হোসেন, জয়পুরহাট প্রতিনিধি:

মার্চ ১৪, ২০২৩, ১১:১২ এএম


হারানো আসন পুনরুদ্ধার চায় গৃহদ্বন্দ্বে আওয়ামীলীগ- বিএনপি

এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল জয়পুরহাট-২ আসন। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করায় আসনটি হারাতে হয়। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচন করলেও হেরে যান দলটির হেভিওয়েট প্রার্থী টানা চারবারের এমপি আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। আগামী নির্বাচনে কোনো ভুল করতে চায় না বিএনপি। আসন ফিরে পেতে এখন থেকেই মাঠে বেশ তৎপর একাধিক নেতাকর্মী। তবে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের দখলেই আছে মাঠ। যদিও দলটিতে রয়েছে কোন্দল।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং জয়পুরহাট জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর

নির্বাচনে গেলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে গোলাম মোস্তফা। এরপরই যাঁর নাম বেশি আলোচিত, তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন। তালিকায় আছেন সাবেক এমপি খলিলুর রহমান, বিএনপির নেতা রওনকুল ইসলাম টিপু চৌধুরী, কামরুজ্জামান কমল, অধ্যক্ষ আলী হাসান মুক্তা ও লায়ন সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ।

জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী আবুল কাসেম রিপন এবং জেলা কমিটির সহসভাপতি আবু সাঈদ নুরুল্লাহ মাসুম মনোনয়ন চাইতে পারেন। জামায়াতে ইসলামী থেকে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন মাওলানা নুরুজ্জামান।
এরই মধ্যে মাঠে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন বর্তমান এমপি স্বপন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন তিনি। তবে মাঠে বেশ তৎপর গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সমাবেশ ও আলোচনা সভায় তিনি এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মর্মে ঘোষণা দেন। এ নিয়ে স্বপনের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বও এরই মধ্যে প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।

হুইপ স্বপনের পক্ষে কথা বলেন কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনফুজুর রহমান মিলন। তিনি সাংবাদিককে বলেন, ‘বড় দল হওয়ায় এই আসনে আরও দু-একজন মনোনয়ন চাইতে পারেন। কিন্তু সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের চাওয়া—আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আবারও এমপি হোক।’ তবে গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর বলেন, ‘তিনি (স্বপন) তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি নির্বাচনী এলাকার অসহায়, দুস্থ ও অসুস্থ রোগীদের মাঝে ১ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেছি, যা আমার সুপারিশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়েছেন। বর্তমানে আমি জোরেশোরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনে জনসমর্থন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত আমার পক্ষেই থাকবে।’

বিএনপির নেতা-কর্মীরা ২০১৪ সালের সরকারকে ‘অবৈধ সরকার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আর ২০১৮ সালের সরকারকে তাঁরা ‘আগের রাতের ভোট ডাকাতির সরকার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা (বিএনপি) বর্তমানে কিছু দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সফল হলে দলটি নির্বাচনে যাবে।

বিএনপির গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন এলাকার উন্নয়নে জনগণের জন্য কাজ করেছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থেকেছি। ফলে তাদের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যা এখনো বহাল। আগামী নির্বাচনে বিএনপি আমাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবে বলে আমি বিশ্বাসী।

ওবায়দুর রহমান চন্দন বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি থেকে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছে। সেই দাবি সফল করতে এখন কাজ করছি। আপাতত এমপি, মন্ত্রী হওয়ার কথা ভাবছি না। দলই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে বলে আমি আশাবাদী।’

জাপার কাজী আবুল কাসেম রিপন বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে অংশ নিয়েও চাপের মুখে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। এলাকায় আমার বা জাতীয় পার্টির কত লোক, তা জানতে পারিনি। তাই জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি আর ভোট নিয়ে খেলা-খেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চাই না।’

নির্বাচন বিষয়ে ভাবনা জানতে চাওয়া হয় বেশ কয়েকজন ভোটারের কাছে। তারা বলেন, বিগত নির্বাচনে তাঁরা সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এবার হারানো ভোটাধিকার ফিরে পেতে চান। কেননা সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারায় তাঁরা অবহেলিত, ন্যায়বিচারক থেকে বঞ্চিত। সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে তারা জিম্মি। তাই ভোটারদের প্রত্যাশা, শুধু ভোটের সময় নয়, নির্বাচিত এমপি সারা বছরই তাঁদের গ্রাম-মহল্লায় আসবেন।

আরএস

Link copied!