Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

নান্দাইলে আশ্রয়ণের নতুন ঘরে পড়ছে বৃষ্টির পানি

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

জুন ১০, ২০২৪, ০৬:৩৫ পিএম


নান্দাইলে আশ্রয়ণের নতুন ঘরে পড়ছে বৃষ্টির পানি

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ প্রদানের জন্য সেমিপাকা একক গৃহ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হতে না হতেই আশ্রয়ণের ঘরে পড়ছে বৃষ্টির পানি। নতুন ঘর পেয়েও নানাবিধ দুর্ভোগে উপকারভোগীরা। 

এছাড়া উক্ত ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী সহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ৫ম পর্যায়ে জরাজীর্ণ ব্যারাক প্রতিস্থাপনে নান্দাইল উপজেলায় নতুন ১৮২টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণে ৫ কোটি ৫৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি একক গৃহের প্রাক্কলনের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা। নান্দাইলে ২০০১ সালে নির্মিত চর মহেষকুড়া, বারোপাড়া, মেরাকোনা ও ভাটি পাঁচানী গ্রামে ব্যারাকের প্রতিস্থাপনে মোট ১৮২টি নতুন সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলায় চর মহেষকুড়া আবাসন প্রকল্পে ১০৯টি, মেরাকোনায় ৫৪টি ও বারোপাড়ায় ১৯টি টিনের ঘরকে সেমিপাকা ঘরে রূপান্তর করা হয়। এছাড়া মালামাল পরিবহণ খাতে রয়েছে আরও ৫ হাজার টাকা করে। অভিযোগ রয়েছে নান্দাইলের ইউএনও কমিটির কারোর কোন মতামত না নিয়ে একাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের সমস্ত কাজ করিয়েছেন।

সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, নুতন ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। অপরিপক্ব ইউকিপ্টাস গাছের কাঠ। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যেই জানালার পার্ট খুলে পড়ে গেছে। ধসে যাচ্ছে দেওয়ালের প্লাস্টার, দরজা জানালায় ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের প্লেনশীট। তাছাড়াও প্রতিটি শীট জোড়ার রয়েছে ফাঁকা জায়গা। সেখান দিয়েও ঘরে পানি ঢুকছে। কয়েকটি নব নির্মিত ঘরের ভিটের দেওয়াল ও ওয়ালে ফাটল ধরেছে। নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করায় ইতিমধ্যে অনেক ঘর ও বারান্দার চাল নিচের দিকে ঝুলে গেছে। কাঠ বেকা-তেড়া হওয়ায় ঘরের চালের নাট অটোমেটিক ছুটে যাচ্ছে। মেঝে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেবার কথা থাকলেও কাদামাটিতে মাত্র দেড় ইঞ্চি ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। পিলারে ১২ এমএম রড দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ১০ এমএম। পিছনের বারান্দায় কাঠ বাঁচাতে গিয়ে চালের টিন এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে একটু বৃষ্টিতেই ঘরে পানি ঢুকছে।

বারোপাড়া’র আশ্রিতা কোকিলা, অজুপা, শামছুন্নাহার, চান বানু জানান, আমাদের আগের ঘরেই ভালো ছিল। নতুন ঘরে উঠেও শান্তি নেই, বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে। এছাড়া দরজা ও জানালা লাগে না। কোথাও ছিটকেরি নেই। অটোমেটিক খুলে পড়ে যাচ্ছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশে যেসব ভূমিহীন পরিবার রয়েছে তাদের ঘর বরাদ্দ না দিয়ে দূর দূরান্তের সচ্ছল পরিবারকে টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ দেবার অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ।

খারুয়া আবাসন প্রকল্পের সভাপতি আবদুর রহিম ও মুশুল্লী আবাসন প্রকল্পের সভাপতি বকুল মিয়া জানান, প্রতিটি ঘরে সর্বোচ্চ ২ ল থেকে ২ ল ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, নিম্নমানের ইট, টিন, কাঠ, কম বালি সিমেন্ট ব্যবহার করায় কাজের মান খুব খারাপ হয়েছে। প্রতিবাদ করলে ইউএনও রেগে গিয়ে হুমকি দিতেন। এছাড়া কোন টেন্ডার না দিয়ে পুরাতন প্রতিটি পুরাতন ঘরও ভালো দামে বিক্রি করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানের দামি দামি গাছও কেটে নিয়ে গেছেন। সে টাকা কোথায় এবং কোন খাতে জমা হয়েছে সে বিষয়টিও তারা অবগত নন।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল অত্র প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সদস্য সচিব এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে সদস্য করে ৪ সদস্যের কমিটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন।

এ বিষয়ে কমিটির সদস্য খারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসনাত ভূইয়া মিন্টু জানান, তিনি কমিটিতে আছেন তা শুনেছেন কিন্তু কাজের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। ইউএনও স্যার কাজ করাচ্ছেন সবকিছু তিনিই(ইউএনও)বলতে পারবেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও) ও কমিটির সদস্য সচিব আহসান উল্লাহ জানান, তিনি কমিটির সদস্য সচিব হওয়াতে কাজের সকল দায়ভার তাঁর হলেও কাজ করিয়েছেন ইউএনও স্যার। 

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও)অরুণ কৃষ্ণ বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীকে সাথে নিয়ে কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত কাজের মান নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি, পেলে বিষয়টি দেখব।

আরএস

 

Link copied!