মে ১৫, ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম
* অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ প্রায় ৯১ হাজার কোটি টাকা
ব্যাংকিং উৎস থেকে ঋণের মাত্রা বাড়িয়েছে সরকার। একক মাস হিসেবে শুধু এপ্রিলেই নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। আগের মাস মার্চে এ অঙ্ক ছিল ১১ হাজার কোটি টাকা। তারল্য সংকটে থাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারকাকে ঋণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সিংহভাগ টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৮২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি ৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে বেসরকারি ব্যাংক থেকে। এছাড়া গত দশ মাসে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে সরকার ৮ হাজার ৮৪১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। সবমিলিয়ে চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৯০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, বর্তমানে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। এর ফলে ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিচ্ছে। এর সিংহভাগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব আয় বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ ছিলো ৫২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। আর এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৫৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক মাসেই বেড়েছে ২৯ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। এর আগের মাস মার্চে এ অঙ্ক ছিল ১১ হাজার কোটি। আর ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৭ হাজার কোটি টাকার কিছু কম। সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থবছরের শেষে এসে ঋণের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে সরকার। কারণ রাজস্ব খাত থেকে কাক্সিক্ষত আয় হচ্ছে না। ঘাটতি মেটাতে শেষ দুই মাসে আরও বেশি পরিমাণে ঋণ নিতে পারে সরকার। ফলে বাজেটের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাংক খাত থেকে ঋণের লক্ষমাত্রা বাড়ানো হতে পারে।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের আগস্ট শেষে ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণ স্থিতি দাড়িয়েছিলো ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এর পরের মাসে ঋণ স্থিতি দাড়ায় ২ লাখ ৮২ হাজার ৭১২ কোটি টাকায়। নভেম্বর মাসে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছিলো ২ লাখ ৯৯ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এপ্রিলে এসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের চার মাসে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি বেড়েছে ৫৩ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী প্রতি মাসেই ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বাড়ছে।
এপ্রিল মাস শেষে ব্যাংক খাত থেকে সরকার মোট ঋণের মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এছাড়া দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।
এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেয়ার লক্ষ্য সরকারের। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকেও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
এআরএস