নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম
বাংলাদেশ টানা সাড়ে চার বছর ধরে বিশ্বব্যাংকের খাদ্য মূল্যস্ফীতি সূচকে লাল তালিকায় রয়েছে। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রতিমাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের ওপরে থাকার কারণে দেশটি এ তালিকা থেকে বের হতে পারেনি। এই সময়ে খাদ্যপণ্যের মাসিক মূল্য বৃদ্ধির হার গড়ে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশের বেশি পর্যন্ত পৌঁছেছে, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি।
বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী, মাসিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকতে হবে।
সর্বশেষ ২০২১ সালের মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৪.৮৭ শতাংশে নেমেছিল। এরপর থেকে এটি ধারাবাহিকভাবে উচ্চমাত্রায় রয়েছে।
জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমে ৭.৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে দেশে এখনও চাল, সবজি, ডিম, মুরগিসহ অনেক অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের দাম ৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আশা করা যাচ্ছে না যে বাংলাদেশ শিগগিরই লাল তালিকা থেকে বের হতে পারবে।
বিশ্বব্যাংকের খাদ্য মূল্যস্ফীতি সূচক অনুযায়ী— মাসিক মূল্য বৃদ্ধি ২ শতাংশের কম হলে দেশ সবুজ তালিকায় থাকে। ২–৫ শতাংশ হলে হলুদ তালিকায়। ৫–৩০ শতাংশ হলে লাল তালিকায়, যা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার প্রতীক। ৩০ শতাংশের বেশি হলে পিঙ্গল বর্ণের তালিকায়, যা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়।
বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় বিভিন্ন পর্যায়ে এই তালিকায় অবস্থান করেছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বনিম্ন ০.২৫ শতাংশ বেড়ে সবুজ তালিকায় ছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে ২.৫৭ শতাংশ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪.২৩ শতাংশ বেড়ে হলুদ তালিকায় অবস্থান করেছিল। তবে ২০০৭-০৮, ২০১৬-১৭, ২০১৯-২০ এবং ২০২২-২৪ অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের বেশি হওয়ায় লাল তালিকায় ছিল।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, লাল ও পিঙ্গল তালিকায় থাকা দেশগুলোর মুদ্রা স্থিতিশীল নয়। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে। এর ফলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমতে ধীরগতিতে চলছে। তবে সরকার ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পণ্যের দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, অন্যথায় দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব বাড়তে পারে।
ইএইচ