নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারির পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লক্ষ্য— এমন একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা, যেখানে ভোটাররা নির্ভয়ে, ভীতিহীনভাবে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ইসির পরিকল্পনায় তিন ধাপের কৌশল তফসিল ঘোষণার আগে, চলাকালীন এবং ভোটের পরবর্তী সময়, প্রতিটি ধাপেই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কার্যক্রম থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ তৎপরতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ শুরু হয়েছে। যদিও এই ধাপ সরাসরি ইসির নিয়ন্ত্রণে নয়, তবুও প্রশাসন মনে করছে, সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় গড়ে তোলা হবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। মাঠে থাকবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। এই বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে— বহিরাগত অনুপ্রবেশ রোধে, প্রার্থীদের সমান প্রচার সুযোগ নিশ্চিতে, ভোটারদের নিরাপদে ভোট দিতে সহায়তায়, এ সময় নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও মাঠে থাকবেন। যাতে কোনো হয়রানি বা বৈষম্যমূলক আচরণ না হয়।
ভোট শেষ হওয়ার পরও ৯৬ ঘণ্টা সক্রিয় থাকবে নিরাপত্তা বাহিনী। একই সঙ্গে দুই দিন চলবে সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা মোকাবিলা করা যায়।
এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ইসি বিবেচনা করছে ডিজিটাল সার্ভিল্যান্স প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা। প্রস্তাব অনুযায়ী— সিসিটিভি ক্যামেরা, ফেস রিকগনিশন সফটওয়্যার, ড্রোন নজরদারি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং, মোবাইল ট্র্যাকিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এসব ব্যবহারে স্বচ্ছতা বাড়বে, আচরণবিধি লঙ্ঘন দ্রুত চিহ্নিত হবে এবং সহিংসতা প্রতিরোধ সহজ হবে বলে মনে করছে কমিশন।
তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন নেটওয়ার্ক ত্রুটি, সাইবার নিরাপত্তা দুর্বলতা, প্রযুক্তির অপব্যবহার ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি রোধে বিশেষ নজর দিতে হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন কমিটি— যেখানে সরকারি কর্মকর্তা ও নিরপেক্ষ, সম্মানিত নাগরিকরা থাকবেন। উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভিজিল্যান্স টিম আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে মনিটরিং কমিটি, তফসিল ঘোষণার পর প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায়, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতিনিধিরাও যুক্ত থাকবেন।
ভোটের আগের দিন সকাল ৮টা থেকে পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত (৭২ ঘণ্টা) রাজধানীতে ইসির কেন্দ্রে থাকবে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল। এ সেলে থাকবেন ইসির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার-ভিডিপি, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি। প্রতি দেড় ঘণ্টা পর কমিশনকে সর্বশেষ তথ্য জানানো হবে, প্রয়োজনে বিশেষ প্রতিবেদনও পাঠানো হবে। মাঠ পর্যায়ের সব তথ্য সরাসরি ‘আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং অ্যাপ’-এর মাধ্যমে সেলে পৌঁছাবে।
গত জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন ছিল। এবার সেই সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব আছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তফসিল ঘোষণার আগে সিইসির সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় সভায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ‘নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বড় চ্যালেঞ্জ। সব বাহিনীকে নিয়ে আমরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই, যাতে মানুষ নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।’