নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম
“ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়”—এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। দলের পাঠানো শোকজ নোটিশের জবাবে তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট, স্বৈরাচার পতনের বর্ষপূর্তি এবং ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের দিন সকালে এনসিপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা কক্সবাজার সফরে যান। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু গণমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, ওই নেতারা কক্সবাজারের একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, ওই সময় পিটার হাস ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন।
গুজবের অবসান ঘটলেও, এনসিপির কেন্দ্র থেকে কক্সবাজার সফরকারী নেতাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শোকজের লিখিত জবাবের একটি অনুলিপি প্রকাশ করেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট তার কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না এবং দল থেকেও তাকে কোনো দায়িত্ব জানানো হয়নি। তিনি জানান, ৪ আগস্ট রাতে দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার কোচিং সেন্টারের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে জানান যে, তিনি স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার যাচ্ছেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনিও ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি ৪ আগস্ট রাতে পার্টি অফিসে গিয়ে আহ্বায়ক মহোদয়কে বিষয়টি জানাই এবং সদস্য সচিবের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করি। জানতে পারি, রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে তিনজন প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবং আমার কোনো দায়িত্ব নেই। ব্যক্তিগত প্রয়োজন এবং মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমি ঘুরতে যাই।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম, তবে এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে নির্জনে চিন্তা-ভাবনা করা। গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, দলীয় কাঠামো ও একটি নতুন সংবিধানের খসড়া নিয়ে আমি গভীরভাবে ভাবার চেষ্টা করেছি।”
কক্সবাজার পৌঁছানোর পর ‘পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক’ বিষয়ক গুজব ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, “আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানিয়েছি যে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে, পিটার হাস সেখানে ছিলেন না।”
তিনি বলেন, “এই গুজব ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ও আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। আমি অতীতেও এই হোটেলে থেকেছি, কিন্তু এমন কোনো বিতর্ক কখনো হয়নি। দলের পক্ষ থেকেও ঘুরতে যাওয়াকে বিধিবিরুদ্ধ বলা হয়নি।”
শোকজ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, “শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয়। আমার সফর স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং এটি ছিল একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তার সুযোগ মাত্র। তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ও রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি লিখিত জবাব দিচ্ছি— অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদর্শন হিসেবে।”
পোস্টের শেষে তিনি লেখেন, “আমার বক্তব্য স্পষ্ট: ‘ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়।’ কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।”
ইএইচ