নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে দলীয় কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশের জবাবে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেককে অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই ব্যক্তিগতভাবে ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং ঢাকার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করি।”
বৃহস্পতিবার তিনি দলের পাঠানো শোকজের লিখিত জবাব জমা দেন।
শোকজের জবাবে হাসনাত লেখেন, “ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তিদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। শহীদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি, এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও দেওয়া হয়নি। এতে আমি সহ অনেকেই ব্যথিত।”
তিনি আরও লেখেন, “ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় কিছু উপাদান রয়েছে, যা অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন—প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অসত্য। বরং আমরা বরাবরই গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পক্ষে কথা বলেছি, যা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটাবে এবং রাষ্ট্রের কাঠামোয় মৌলিক পরিবর্তন আনবে।”
হাসনাত দাবি করেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারেন আন্দোলনের আহত ও নেতৃত্বদানকারী অনেককেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। “যেখানে ঐক্যের বদলে বিভাজন, শহীদ ও আহতদের বদলে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে—সেখানে আমার উপস্থিতি অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। ফলে আমি ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”
তিনি বলেন, “এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল পূর্বের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ—এজন্য আমি কক্সবাজার যাই। এটি অসম্পূর্ণ ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদও বটে।”
হাসনাত আরও উল্লেখ করেন, “৪ আগস্ট রাতে আমি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাকে না পেয়ে মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীকে জানাই যে, আমি স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দু’দিনের জন্য ঘুরতে যাচ্ছি। তাকে অনুরোধ করি আহ্বায়ককে বিষয়টি জানাতে। তিনি পরে জানান, আহ্বায়ক সম্মতি দিয়েছেন। এরপর নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, সারজিস আলম ও তার স্ত্রী, এবং খালেদ সাইফুল্লাহ ও তার স্ত্রীও আমাদের সঙ্গে যোগ দেন।”
সাবেক এই সমন্বয়ক লেখেন, “আমার ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে নির্জনে চিন্তা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভেবেছি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না। বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “কক্সবাজার পৌঁছানোর পর গুজব ছড়ায়, আমরা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি তৎক্ষণাৎ গণমাধ্যমকে বলি, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করে জানায়, পিটার হাস সেখানে ছিলেন না। পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারি তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন।”
হাসনাত এই গুজবকে “পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র” ও “ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “আমি পূর্বেও একাধিকবার এই হোটেলে থেকেছি, কখনো এমন বিতর্ক হয়নি। ঘুরতে যাওয়াকে দলীয় বিধিমালা লঙ্ঘন বলা হয়নি কখনো।”
শেষে তিনি লেখেন, “পরিস্থিতি বিচার করে আমি মনে করি, শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয়। আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগমাত্র। তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি এই জবাব প্রদান করছি—অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদর্শন হিসেবে। ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়, কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জনতা বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।”
ইএইচ