Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

সিয়াম পালন ও তাক্বওয়া অর্জনে মসজিদের ভূমিকা

বেলাল সানী ও মুহাম্মদ আল্-হেলাল

বেলাল সানী ও মুহাম্মদ আল্-হেলাল

মার্চ ২৩, ২০২৪, ১২:২৯ পিএম


সিয়াম পালন ও তাক্বওয়া অর্জনে মসজিদের ভূমিকা

মসজিদ আল্লাহর ঘর। মুসলিম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র। মুসলিম মিল্লাতের সবচেয়ে আপন এবং ভালবাসার জায়গা হলো মসজিদ। সালাত আদায়ের পাশাপাশি মুসলিমদের ইহলৌকিক এবং পরললৌকি কার্যক্রম মসজিদ কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে এটাই স্বাভাবিক।

আরো একটু অগ্রসর হয়ে বলা যায় মসজিদ শুধু সিজদা দেওয়ার জায়গা নয় এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু। কেননা বিশ্বনবী সা. মসজিদ থেকে শিক্ষা এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন এবং মসজিদ কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা হিসাবে অভিহিত করেছেন। ইসলামের সামাজিক ও শিক্ষা বিষয়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের স্থান হলো মসজিদ।

মসজিদ শব্দটি আরবি ইস্ম মাফ্উল এর সীগা। শাব্দিক বিশ্লেষণ করলে অর্থ হয় সিজদার স্থান আর সিজদার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের নিকটবর্তী হওয়া যায় কেননা স্বয়ং আল্লাহ ঘোষণা করেছেন “ওয়াসজুদ ওয়াকতারিব-আপনি সিজদা করুন এবং এবং আমার নৈকট্য অর্জন করুন।” (সূরা আলাক-১৯)

সিয়াম পালন ও তাক্বওয়া অর্জনের সাথে মসজিদের যোগসূত্র ও ঘনিষ্টতা সুস্পষ্ট ও সুবিদিত। জামা’তের সাথে সালাত আদায় করা একজন মুসলিমের অন্যতম কর্তব্য। মসজিদ আল্লাহর ঘর সে কথা আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন “আর নিশ্চয় এই মসজিদ আল্লাহর সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডাকিও না।” (সূরা জ্বীন-১৮)

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ইবাদতের মধ্যে সালাত অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এটি মুমিন এবং কাফিরের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। আর এই ইবাদত পালনের শ্রেষ্ঠ জায়গা হলো মসজিদ। মুমিনগন প্রতিদিন ৫ বার মহান আল্লাহর আদেশ পালনের নিমিত্তে মসজিদে গমন করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে আল্লাহর সাথে বান্দার তাওহিদ ভিত্তিক বন্ধন সুদৃঢ় হওয়ার পাশাপাশি বান্দার হৃদয়ে শিরক ও তাগুতি চিন্তার শেকড় গ্রোথিত করতে পারেনা। এর মূলে রয়েছে তাক্বওয়া নামক প্রপ কটি। তাক্বওয়া মানবদেহে আল্লাহর  সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে রক্তের ন্যায় ভূমিকা পালন করে। রক্তহীন মানবদেহের অসারতা যেমন তাক্বওয়া বিহীন বান্দার ইবাদত তেমন সারশুন্য।

যে সব ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ভীতি বা তাক্বওয়া বেশি অর্জন করা যায় তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত সিয়াম সাধনা তথা মাহে রমজানের রোযা পালন। সিয়াম সাধনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা স্পষ্ট করে ঘোষণা করেছেন-“হে মুমিনগন! তোমাদের জন্য রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমনভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছে যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” (সূরা বাকারা-১৮৩)

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার এই স্পষ্ট নির্দেশনার মাধ্যমে সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য এবং ইবাদতে তাক্বওয়ার গুরুত্ব সহযেই অনুমেয়। বছর ঘুরে যখন মাহে রমজান বান্দার দ্বারে সমাগত তখন বান্দার উপর আবশ্যক আল্লাহর আদেশে সিয়াম পালনের মাধ্যমে পূণ্য অর্জনের জন্য বান্দা প্রস্তুত হয় কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ঘোষণা করেছেন “রমজান হলো এমন একটি মাস যে মাসে নাজিল করা হয়েছে মহাগ্রন্থ আল্-কুরান যাতে রয়েছে মানুষের জীবন বিধান এবং মানুষের সৎপথে চলার জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শন যেটি সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। 

সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে। এবং যে অসুস্থ বা সফরে থাকে সে যেন অন্য সময় এসংখ্যা পূরণ করে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তোমাদের কাজকে সহজ করতে চান তিনি তোমাদের কষ্ট দিতে চাননা। আল্লাহ চান তোমরা যেন রোজা পূরণ করতে পার এবং তোমাদের সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য আল্লাহর মহাত্ম ঘোষণা করতে পার। সম্ভবত তোমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।’’ (সূরা বাকারা-১৮৫)

তাই প্রতি বছর রমজান মাস কে স্বাগত জানাতে মুসলিম নর-নারী এবং শিশুদের মধ্যে ফুটে ওঠে আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায় আবেগ ও ভালোবাসার হিল্লোল। আর এসব কিছুর প্রতিচ্ছবি প্রতিধ্বনিত হয় মসজিদে মসজিদে মুয়াজ্জ্বীনের আযানের ধ্বনি আর ভোর রাতে সাহরীর এ’লানের মাঝে যেটি মু’মিনদের সিয়াম পালনে উৎসাহী সহোগিতা করে। একটি মাসের জন্য হলেও শুধু মাত্র রমদানুল মুবারকের সিয়াম পালন কে কেন্দ্র করে মসজিদ থাকে সরব। ইমাম মুয়াজ্জি¦ন থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের মুসল্লীদের মাঝে থাকে বাড়তি আবেগ ও ভালবাসা।

কুরান তিলাওয়াত, জিকির তাসবীহ্ পাঠ, কুরান হাদীসের বয়ান পুরো মাস ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে মসজিদ গুলিতে এমনকি বাসা বাড়ি গুলিতেও আমেজের স্ফুরণ লক্ষ্য করা যায়। মহান রব্বুল আলামিনের সাথে বান্দার ঐশ্বরিক সম্পর্ক নতুনরূপে গড়তে থাকে। এ যেন সেই স্বীকারুক্তির কথা স্বরণ করিয়ে দেয়: “আমি কি তোমাদের প্রভু নই? সমস্বরে বান্দা বলেছিল হ্যাঁ।”

শুধু তাই নয়। বান্দা এ মাসে আল্লাহকে এত বেশি ভয় করে যে, সুযোগ থাকাও স্বত্তে¡ও পানাহারসহ জৈবিক চাহিদা পূরণে নিজেকে পূর্ণরূপে হেফাজত করার চেষ্টায় ত্রুটি রাখেনা। যে বান্দা আল্লাহর বিধান পালনে নিজেকে বিভিন্ন  অজুহাতের কাছে পরাজিত হতে মোটেই দ্বিধাবোধ করেনা, পাঁচবার সালাত আদায়সহ সপ্তাহে একবার মসজিদে যায় কিনা সন্দেহ আছে, সেই ব্যক্তিও এমাসে সিয়াম পালনও মসজিদ কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় আর তার তাক্বওয়া সুদৃঢ় হতে থাকে।

সিয়াম পালনের মাধ্যমে যেমন তাক্বওয়া অর্জন করা যায় তেমন তাক্বওয়ার উপর ভিত্তি করে যে মসজিদে প্রতিষ্ঠিত সে মসজিদে সালাত আদায় করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালা আদেশ করেছেন যেন সেখান থেকেও তাক্বওয়াবানদের সংস্পর্ষে এসে বান্দা আরো তাক্বওয়াবান হতে পারে। তাক্বওয়াবান হলে বান্দা অন্যান্য ইবাদতের সাথে সাথে সিয়াম পালনে আরো বেশি অনুপ্রেরণা পায়।

“(হে নবি) আপনি কখনো দিরার মসজিদে সালাত আদায় করার জন্য দাড়াবেননা তবে যে মসজিদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে তাক্বওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে সেটিই আপনার দাড়ানোর যোগ্য স্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন।” (সূরা তওবা-১০৮)

সুতরাং সিয়াম পালন ও তাক্বওয়া অর্জনে মসজিদের ভূমিকা অপরিসীম।

বেলাল সানী                                                                                               মুহাম্মদ আল্-হেলাল
সহঃ অধ্যাপক                                                                                      এমফিল গবেষক(এবিডি)
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ                                                                      ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 
ডা. আ. রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, যশোর                                                                                  

এইচআর
 

Link copied!