Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

গোপনে প্রাথমিকের শিক্ষক বদলির আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

জুন ২১, ২০২২, ০১:২০ এএম


গোপনে প্রাথমিকের শিক্ষক বদলির আদেশ

করোনার কারণে প্রায় দুবছর ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি বন্ধ থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম তার চাকরির শেষ দিনে গোপনে বদলির আদেশ দেন। 

ওইদিনই ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন জেলায় ১৯ জনের বদলির পরপরই আবারও বদলির নির্দেশনা বাতিল করা আদেশ স্থগিত করা হয়।

এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং শিক্ষকদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব জানেন না বলে জানা গেছে। 

এদিকে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)-এর আরডিপি অনুমোদন না হতেই সেখানে কনসালটেন্ট পদে নিজেকে নিয়োগের প্রস্তাব নিজেই দিয়েছেন ডিজি। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। 

তবে গতকাল সোমবার তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিদায় সংবর্ধনা নিয়েছেন। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি পদে চলতি দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, আদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। বদলি কতজন হয়েছেন, তা আমি জানি না। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, অবসরে গমনের জন্য গত ১৩ জুন ডিজিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়। অবসর গমনের দিনই ডিজি দুবছর থেকে স্থগিত থাকা শিক্ষক বদলি চালুর নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী আদেশও জারি করা হয়। 

এরপর ডিজির পছন্দের বিভিন্ন জেলার ১৯ শিক্ষককে বদলি করা হয়। তাদের মধ্যে চাঁদপুরের একজন এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের একজন বদলিস্থলে যোগদান করেছেন। এরপরই আবার বদলির নির্দেশনা বাতিল করা হয়। 

এছাড়া বদলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়। তাদের কাছে তথ্য নিতে গেলেও আর পাওয়া যায়নি। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থেকে মাহমুদা আক্তার নামে এক শিক্ষক ঢাকা মহানগরের যাত্রাবাড়ী এলাকায় বদলি হয়েছেন এবং যোগদানও করেছেন বলে জানান চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাহাব উদ্দিন। 

তিনি বলেন, শিক্ষক তাকে ফোন করে বলেছেন, তার বদলির আদেশ হয়েছে এবং যোগদানও করছেন। তবে যাত্রাবাড়ীর কোন স্কুলে— সেটা বলতে পারেননি তিনি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, যাদের বদলি করা হয়েছে, তাদের চিঠি গোপনে হাতে হাতে দেয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়নি। শুধু সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা জানেন। তারা আবার এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজি এ বিষয়ে জানলেও তিনি কথা বলছেন না।

এদিকে শিক্ষক বদলির আদেশ জারি হওয়ার পর মন্ত্রণালয় এবং ডিজি অফিসে শত শত শিক্ষক বদলির জন্য যোগাযোগ করছেন। তাদের বলা হচ্ছে, এ আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। যখন আবার মন্ত্রণালয় থেকে বলা হবে, তখন বদলি করা হবে।

ডিজির নির্দেশে বদলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা, সহকারী পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) তাপস কুমার আচার্য্য এবং শিক্ষা অফিসার সেলিনা আখতার। 

এ বিষয়ে ১৫ জুন অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বদলির আদেশ হয়েছে এবং আবার স্থগিতও করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলুন।

ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখা জানান, দুবছর বদলি বন্ধ থাকার আদেশ প্রত্যাহারের চিঠি পেয়েছি। প্রধান শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম চলমান আছে। তবে সহকারী শিক্ষকদের বদলি জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। 

ঢাকা মহানগরীতে বদলি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে আমার কাছে এসেছেন যাদের বদলির আদেশ হয়েছে। তবে আমি হাতে কাগজ পাইনি। 

জামালপুর থেকে আসা এক শিক্ষক বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় পুলিশে চাকরি করেন। আমি ৩-৪ বছর থেকে বদলির জন্য আবেদন করছি। কিন্তু হয়নি। অথচ আমার আগে কয়েকজনের বদলির আদেশ হয়েছে। 

এদিকে পিইডিপি-৪ উপপরিচালক মো. ফরহাদ আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, আরডিপিপি পাস না হতেই চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)-এর আরডিপি অনুমোদন না হতেই সেখানে কনসালটেন্ট পদে নিজেকে নিয়োগের প্রস্তাব নিজেই করেছেন ডিজি মনসুরুল আলম। 

পিইডিপি-৪-এর আওতায় প্রোগ্রাম সাপোর্ট টিমে ছয়জন পরামর্শকের জন্য ডিপিতে সংযুক্ত রয়েছেন। সে অনুযায়ী পিইডিপি-৪-এর প্রারম্ভিক পর্যায়ে ছয়জন পরামর্শক কর্মরত থাকলেও বর্তমানে প্রায় দুবছর যাবৎ কোনো পরামর্শক কর্মরত নেই। পিইডিপি-৪-এর মতো এত বিশাল বাজেটের কর্মসূচি পরামর্শক ছাড়াই চলমান রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। 

এক্ষেত্রে পিইডিপি-৪-এর পরবর্তী কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের জন্য আরডিপিপিতে সাতটি টার্মস অব রেফারেন্স (টিআরও) সংস্থান রাখা হয়েছে, যা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। ডিজি অবসরে যাওয়ার দিনই সাতজন টিআরও নিয়োগের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।

Link copied!