সেপ্টেম্বর ২, ২০২২, ০৮:১৫ পিএম
রাজপথে রাজনৈতিক উত্তাপ। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সরকার পতনের টার্গেট বিএনপির। ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনে উজ্জীবিত দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে দখলে রাখতে চায় ঢাকাসহ সারা দেশ। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় বিশাল রাজনৈতিক মহড়া দিয়েছে দলটি। আন্দোলনের নামে বিএনপির এমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীনদের দাবি— গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পরিহার করে অপরাজনীতির দিকে যাচ্ছে বিএনপির আন্দোলন। রাজনীতির মাঠে নৈরাজ্য সৃষ্টি পাঁয়তারা করছে। বিএনপির টার্গেট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। এ জন্য নগরের সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও সচেতন থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নগরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন পালন করা হবে অবস্থান কর্মসূচি।
তথ্যমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেছে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হতে না দেয়ার পরিকল্পনা তাদের। এ জন্য সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপির টার্গেট ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে সরকার পতনের। এ লক্ষ্য সামনে রেখে মাঠে ফিরেছে দলটির মাঠের রাজনীতি। দৈনন্দিন কর্মসূচি পালনের মধ্যে দিয়ে উজ্জীবিত কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ গতকাল দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের বেশ কিছু স্থানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বড় বড় শোডাউন দিতে দেখা গেছে ঢাকাসহ সারা দেশে। সর্বশেষ গতকাল দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় বিশাল রাজনৈতিক মহড়া দিয়েছে বিএনপি। তাদের দাবি— ক্ষমতাসীনদের দমন-নিপীড়ন, নির্যাতন, গুম, খুন ও অপরাজনীতি বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভয়াবহ দুঃশাসন ও ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি জনগণের সরকার গঠনের বিকল্প নেই। এ জন্য দলটির পক্ষে থেকে সারা দেশে লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে।
আ.লীগ সূত্র জানায়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য বিরোধী দলগুলোর মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং দলীয় কর্মসূচি বাধা না দেয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ফলে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রাম ও দৈনন্দিন কর্মসূচি পালনে কিছুটা নমনীয় ক্ষমতাসীনরা।
যদিও সম্প্রতি বিএনপির কর্মসূচিকে ভালোভাবে নিচ্ছে না ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ জন্য মহানগরের সবগুলো ইউনিট ও ওয়ার্ডের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও সচেতন থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন পালন করা হচ্ছে অবস্থান কর্মসূচি।
মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি— গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পরিহার করে দিন দিন অপরাজনীতির দিকে যাচ্ছে বিএনপির আন্দোলন। দলটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে জ্বালাও-পোড়াও, বোমাবাজি, আগুন-সন্ত্রাস, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের পথ বেছে নিচ্ছে। আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি পাঁয়তারা চালাচ্ছে। নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে। দেশ-বিদেশে আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করছে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে বিএনপির টার্গেট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। আর আন্দোলনে ঢাল হিসেবে বিএনপি রাজধানী ঢাকাকে দখল করতে চায়। যদিও বিএনপির এসব কার্যক্রমকে অপরাজনীতি হিসেবেই দেখছে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। বিরোধীরা আন্দোলনে নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে দাঁতভাঙা জবাব দেবে তারা।
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির আমার সংবাদকে বলেন, কেউ আন্দোলনের নামে অপরাজনীতি করবে— সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষর জীবন হুমকির মুখে ফেলবে, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করবে, আওয়ামী লীগবিরোধী ষড়যন্ত্র করবে— তা তো করতে দেয়া হবে না। আন্দোলনের নামে অপরাজনীতি শুরু করলেই মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী তা প্রতিহত করবে। প্রতিরোধ করবে।
তিনি আরও বলেন, অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মহনগরসহ বিভিন্ন ইউনিট ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে। মহানগরের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি আমার সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগ চায় বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন-সংগ্রাম করুক। মিছিল-মিটিং করুক। কিন্তু বিএনপি আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। পুলিশের ওপর হামলা করছে। জ্বালাও-পোড়াও ও আগুন-সন্ত্রাসের দিকে এগোচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে বিএনপি অগণতান্ত্রিক পথ বেছে নিলে রাজনৈতিকভাবে মহানগর আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিহত করবে। এ জন্য নগরের ওয়ার্ড ও ইউনিটসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তবে সরকার পতনের জন্য বিএনপির আন্দোলনের ডাক ও দলীয় কার্যক্রম পুরোনো হাঁকডাক হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনেও ব্যর্থ। ব্যর্থ বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। তারা সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে চায় এবং গণতান্ত্রিক পক্রিয়ার বাইরে গিয়ে অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে চায়।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপি নেতাদের আন্দোলনের ডাক, সরকার পতনের হুঙ্কার, সরকারবিরোধী অপপ্রচার ও মিথ্যাচার নতুন কিছু নয়। তাদের আন্দোলন হুঙ্কার দেশের মানুষও বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আমলে নেয় না। বিএনপির আন্দোলনের হাঁকডাক নতুন কিছু নয়।
আব্দুর রহমান আরও বলেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা কিভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরা যায় সেই লক্ষ্য সামনে রেখে আওয়ামী লীগ কর্মকৌশল নির্ধারণ করছে এবং কাজ করবে।