ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

সাবলেটে ঝুঁকছেন নগরবাসী

রায়হান উদ্দিন তন্ময়

নভেম্বর ৩, ২০২২, ০১:৪৯ এএম

সাবলেটে ঝুঁকছেন নগরবাসী

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে তাল মিলিয়ে রাজধানীতে নীরবে বাড়ছে বাসা ভাড়া। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বেড়েছে ব্যয়, বাড়েনি আয়। ঠিক এ সময়ে বাসা ভাড়া বাড়াচ্ছেন বাড়িওয়ালারা। এ বৃদ্ধি যেন ভাড়াটিয়াদের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। আবার পাগলা ঘোড়ার পিঠে চেপে ক্রমেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।

পাশাপাশি বেড়েছে সংসারের খরচও, ভাঙতে হচ্ছে সঞ্চয়ও। সবমিলিয়ে চরম হিমশিমে নগরীর মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে কেউ ঝুঁকছেন সাবলেটে, কেউ যাচ্ছেন এক রুমের আধাপাকা বা টিনশেডের বাড়িতে। আবার কেউ যাচ্ছেন শহর ছেড়ে গ্রামে কিংবা ঢাকার আশপাশের এলাকাতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খরচের সাথে সমন্বয় করতেই ভাড়াটিয়াদের কেউ ফ্ল্যাট শেয়ারে ঝুঁকছেন, কেউ পরিবার গ্রামে পাঠাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের দামে অস্বাভাবিকতার কারণে খরচা বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসা ভাড়া কোথাও বাড়ানো হচ্ছে। আবার কোথাও জানুয়ারিতে বাড়ানো হবে বলে বাড়িওয়ালারা নোটিস দিচ্ছেন। করোনার ঘাটতি পোষাতে ও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ভাড়া বাড়াচ্ছেন বলে জানান বাড়িওয়ালারা। এতে করে ঢাকায় এখন টু-লেটের ছড়াছড়ি। শহরজুড়ে সাবলেটের বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ছে বেশি। এদিকে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে না পেরে কেউ পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে মেসে উঠছেন। কেউ শহরের প্রান্তিক এলাকায় বাসা খুঁজছেন। তবে বেশিরভাগেরই পছন্দ সাবলেট বাসা। বাসা ভাড়া বৃদ্ধির কারণেই এমন চিন্তা করছেন নগরবাসী।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের যে দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ। সংগঠনটির অন্য এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ ও ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাসা ভাড়া পরিশোধে।

এই অবস্থায় জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। ডিজেল-কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। ফলে বাড়তি দামের প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই 
পড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সৈয়দ আনোয়ার। এক বছর আগে ১৩ হাজার টাকায় দুই রুমের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। বছর না ঘুরতেই ভাড়া বাড়িয়েছেন আরও এক হাজার টাকা।

পানি বিল ৫০০ টাকা, গ্যাস বিল ৯৭৫ টাকা, বিদ্যুৎ বিল আসে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এতে ফ্ল্যাটের মোট খরচা পড়ছে প্রায় ১৭ হাজার টাকা। এভাবে ভাড়া বাড়ানোয় বেশ বিপাকে পড়তে হয় তাকে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এর পাশাপাশি রয়েছে সংসারের খরচ। সন্তানের পড়াশুনা, ওষুধপত্র নানান খরচা। সবমিলিয়ে তিনি ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দিয়ে আরও কম খরচের ফ্ল্যাট খুঁজছেন। যদি না পান তাহলে তিনি ঢাকার আশপাশের এলাকায় বাসা নিবেন বলে জানান।  এদিকে কাফরুল এলাকায় দুই রুমের ফ্ল্যাট নিয়ে বসবাস আমির হুসাইনের।

তিনি জানান, করোনার সময় বাড়িওয়ালা ভাড়া কমালেও পূর্বে যে ১০ হাজার টাকা ভাড়া নিতেন তা এখন নিচ্ছেন। পাশাপাশি আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে আরও দুই হাজার টাকা বাড়ানোর নোটিস দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। বর্তমানে তার বাসা ভাড়ার খরচা পড়ছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা। সাথে রয়েছে অন্যান্য খরচও। তিনিও কম খরচের ফ্ল্যাট খুঁজছেন। যদি না পান তাহলে সাবলেটে বা এক রুমের আধাপাকা বাড়িতে উঠবেন। অথবা অন্য এলাকায় বাসা খুঁজবেন। যেহেতু ব্যয় বেড়েছে, আয়-রোজগার বা বেতন বাড়েনি তাই টিকে থাকতে হলে তাকে অবশ্যই স্বল্প খরচের বাসস্থানে উঠতে হবে। একই কথা জানালেন রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া। শুধু আনোয়ার, আমির ও সুমন নয় নগরীর বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটিয়া বাসা ভাড়া বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন ব্যাচেলরও ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাজধানীতে বসবাস করেন বেশ কয়েকজন ব্যাচেলর জানান, কয়েকমাস আগেই বাসা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তাই তারাও নতুন বাসা খুঁজছেন। আবার কোথাও কোথাও জানুয়ারিতে বাসা ভাড়া বাড়ানো হবে এমন নোটিসও দিয়েছে বাড়িওয়ালা। না হলে বাসা ছেড়ে দিতেও বলা হচ্ছে।

ভাড়াটিয়াদের ভাষ্য, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসা ভাড়া কোথাও বাড়ানো হচ্ছে। আবার কোথাও জানুয়ারিতে বাড়ানো হবে বলে বাড়িওয়ালারা নোটিস দিয়েছে। আর প্রতিদিনই তো পণ্যের কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। কমতির দিকে তো কোনোটিই নেই। তাই তাদের সাবলেট পছন্দ। না হলে এতো ব্যয়বহুল এই শহরে টিকে থাকা নিয়ে তাদের সংশয় দেখা দিয়েছে।

তারা আরও বলেন, বাসা পরিবর্তন করতে চাইলেই করা যায় না। কারণ বাসা পরিবর্তনে আরও ছয়-সাত হাজার টাকা খরচা হয়ে যায়। পাশাপাশি নতুন বাসায় উঠতে হলে অগ্রিম এক মাসের ভাড়াও দিতে হয়। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সাবলেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকেই। যদি সাবলেট না মিলে শহরের প্রান্তিক এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার ঘাটতি পোষাতে ও বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কারণে ভাড়া বাড়াচ্ছেন তারা। তবে বেশিরভাগ বাড়িওয়ালা সঠিকভাবে এর সদুত্তর দিতে পারছেন না। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় অনেকে বাসা ছাড়ছেন। তাই প্রত্যেক মাসে এক-দুইটি ফ্ল্যাট খালি থাকছেই। আবার দুই পরিবার মিলে বাসা নিচ্ছেন অনেকে। সাবলেট দিলে ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে সহজেই। তা না হলে প্রত্যেক মাসে ফ্ল্যাট খালি থাকছেই। তাই সাবলেট দিতে ও নিতে আগ্রহী ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালারা।

অর্থনীতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের  অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, দ্রর্বমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শুধু শহর নয় গ্রাম-গঞ্জের মানুষও খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে নগরের বাসিন্দারা তো আরও বিপাকে। তাই তারা খরচের সাথে সমন্বয় করতেই বাসা ভাড়াও কমাতেও চাচ্ছেন। তাই কেউ কেউ কারো সাথে ফ্ল্যাট শেয়ার করছেন, কেউ কেউ কমদামি ফ্ল্যাটে উঠছেন। আবার অনেকে পরিবার গ্রামে পাঠাচ্ছেন। তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। যদি এমনটা না করা হয় তাহলে এর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার আমার সংবাদকে বলেন, বাড়িওয়ালারা সৃজনশীল পদ্ধতিতে বাসা ভাড়া বাড়াচ্ছেন। যেমন জানুয়ারিতে একবার বাড়াবে আবার ছয়মাস গেলেই আবার বাসা ভাড়া বাড়াবে। তারা ভাড়াটিয়াদের মানুষই মনে করে না। মন চাইলেই তারা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এতে করে কেউ ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকছেন। এমনকি অনেকেই গ্রামে পরিবার পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Link copied!