Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ

আহমেদ হূদয়

আহমেদ হূদয়

নভেম্বর ২০, ২০২২, ০১:১৬ এএম


বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ
  • পাঁচজন খেলোয়াড় বদল করার সুযোগ
  • ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ নারী রেফারিদের
  • অফসাইড ধরতে সেমি অটোমেটেড প্রযুক্তি
  • সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো

ফিফা বিশ্বকাপ; যাকে বলা হয় দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। ২২তম আসর; ৩২টি দল; একটি ট্রফি! যার জন্য লড়বে বিশ্বের ৩২টি ফুটবল দল। ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ দামামার শব্দে উৎসবে মেতে উঠেছে সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা। ফুটবলের আমেজে আনন্দ-উৎসবে একাকার হয়ে গেছে সারা বিশ্ব। ফুটবলপ্রেমীরা এই এক মাসের জন্য হয়ে গেছে বিশ্বনাগরিক। চার বছর অপেক্ষার পার আজ পর্দা উঠছে বিশ্বকাপের ২২তম আসরের। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে এবারঅনুষ্ঠিত হবে এই ফুটবল মহাযজ্ঞের।

এবারই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হিসেবে এককভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে কাতার। এর আগে অবশ্য ২০০২ সালে যৌথভাবে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। এতগুলো দেশ এই টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও ২১টি আসরে এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছে মাত্র আটটি দেশ। সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে লাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। এরপরই আছে জার্মানি; তারা বিশ্বকাপ জিতেছে মোট চারবার। জার্মানির সমান চারবার বিশ্বকাপ জিতেছে ইতালি। তবে 
এবারই টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এই দলটি। লাটিন আমেরিকার আরেক দেশ আর্জেন্টিনা; তারা বিশ্বকাপ জিতেছে দুবার।

সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ জেতা উরুগুয়েও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুবার। ইউরোপের দেশ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স; তারাও বিশ্বকাপ জিতেছে দুবার। ১৯৬৬ সালে একবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। ২০১০ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপের স্বাদ গ্রহণ করেছে স্পেন। এই আটটি দল ছাড়া এ পর্যন্ত আর কোনো দল জিততে পারেনি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের এই ট্রফিতে চুমু খাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় এই ট্রফিকে ছুতে হলে।

কাতারের আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে আজ রাত ১০টায় মুখোমুখি হবে গ্রুপ ‘এ’-এর দুই দল ইকুয়েডর ও স্বাগতিক কাতার। বিশ্বকাপে কাতারের এটি প্রথম অংশগ্রহণ। স্বাগতিক হিসেবে কাতার সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। অন্যদিকে আট বছর অনুপস্থিত থাকার পর বিশ্বকাপে ফিরেছে ইকুয়েডর। কাগজে কলমে কাতারের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছে ইকুয়েডর। যে কারণে ম্যাচটিতে জয়ের সম্ভাবনায়ও এগিয়ে রয়েছে সফরকারীরা।

দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে কঠিন চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে ইকুয়েডর চতুর্থ স্থান লাভ করে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে। কিন্তু স্বাগতিক হিসেবে ঘরের মাঠের বাড়তি সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে প্রস্তুত কাতার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এ পর্যন্ত উদ্বোধনী ম্যাচে কোনো স্বাগতিক দল হারেনি।

সেদিক থেকে হয়তো কিছুটা এগিয়ে থাকবে কাতার। ১৯৭৮ সালের পর বিশ্বকাপে উদ্বোধনী কোনো ম্যাচ গোলশূন্য শেষ হয়নি। কাতার এ পর্যন্ত টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। সেপ্টেম্বরে চিলির সাথে ২-২ গোলে করার পর একে একে কাতার হারিয়েছে গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পানামা ও আলবেনিয়াকে। এ জয়গুলোই হয়তো বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে কাতারকে।

গত পাঁচ বছর ধরে স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স সানচেজ বাসের অধীনে কাতার নিজেদের ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছে। এত বড় আসরে অতীতে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক কিছুতেই তাদের মানিয়ে নেয়াটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রুপ ‘এ’-এর অপর দুটি দল হচ্ছে সেনেগাল ও নেদারল্যান্ড। কাতারের লক্ষ্য স্বাগতিক হিসেবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে যতটা সম্ভব সবাইকে আকৃষ্ট করা, ভালো খেলা উপহার দেয়া। আফ্রিকান নেশন্স কপ বিজয়ী সেনেগাল।

এর আগে ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ড। এদিকে বিশ্বকাপের আগে পাঁচটি প্রীতি ম্যাচের কোনোটিতেই কোনো গোল হজম করেনি ইকুয়েডর।

গত শনিবার সর্বশেষ ইরাকের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে তারা। দুই বছর আগে দলের দায়িত্ব পাওয়া আর্জেন্টাইন কোচ গুস্তাভো আলফারোর অধীনে এভাবেই পুরো ইকুয়েডর বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। কাতার এর আগে তিনবার ইকুয়েডরের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলেছে যার মধ্যে একটিতে জয়, একটি ড্র ও একটি পরাজিত হয়েছে।

আলবেনিয়ার বিপক্ষে শেষ প্রীতি ম্যাচে অ্যাটাকার আহমেদ আয়েলদিন ইনজুরিতে পড়ে ২৬ মিনিটে মাঠ ছাড়েন। এই একটি ইনজুরি ছাড়া আপাতত কোনো ঝুঁকি নেই কাতার শিবিরে। যদিও কাতারের মেডিকেল টিম আশ্বস্ত করেছে— আয়েলদিনের ইনজুরি ততটা গুরুতর নয়। এদিকে কাতারের পাঁচটি শহরের আট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সর্বমোট ৬৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বিশ্বকাপের এই উন্মাদনা।

অন্যদিকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান চলবে টানা ৪৫ মিনিট। পরে রাত ১০টায় উদ্বোধনী ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মাঠে নামবে স্বাগতিক কাতার। দেশটির খোর শহরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে হবে এ সব আয়োজন। স্টেডিয়ামটিতে এক সঙ্গে ৬০ হাজার দর্শক বসতে পারবেন। এটি কাতারের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম। ৮০ হাজার ধারণক্ষমতার লুসাইল স্টেডিয়ামটি সবচেয়ে বড়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমেরিকান গায়ক ডমিনিক লিল ববি ও বলিউড সুপারস্টার নোরা ফাতেহিসহ চমক আছে বিটিএস ফ্যানদের জন্য।

এবারের আসরের থিম সং ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস টু টেক’ গাইবেন ববি। গানের সঙ্গে মঞ্চ মাতাবেন মানাল, রেহমার এবং নোরা ফাতেহি। এই মুহূর্তে বলিউডের সেরা নৃত্যশিল্পীদের তালিকায় রয়েছেন নোরা। এর বাইরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার কোরিয়ান ব্যান্ড বিটিএসের সঙ্গীত পরিবেশনাও থাকবে। ব্যান্ডটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য জন জাংকুক গাইবেন উদ্বোধনী মঞ্চে।

এছাড়া স্থানীয় নৃত্যশিল্পীরাও আল বায়াত স্টেডিয়ামে পারফর্ম করার সুযোগ পাবেন। কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল মাসকট লাইভ। যার অর্থ ‘অতি দক্ষ খেলোয়াড়’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনে এই মাসকট প্রদর্শনীও চলবে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপের দিকে চোখ থাকবে প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের। যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।

৬০ কোটিতে ম্যাচ কেনা বিতর্কে কাতার
আজ থেকে পর্দা উঠছে ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২। ২২তম আসরে আজ রাত ১০টায় ইকুয়েডরের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামবে স্বাগতিক কাতার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এ পর্যন্ত উদ্বোধনীম্যাচে স্বাগতিক কোনো দেশ হারেনি। তেল বাণিজ্যের কৃপায় বিপুল ঐশর্যের অধিকারী দেশটি। তবে এবারের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে খেলতে নামার আগেই ৭.৪ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার ঘুষ দিয়ে ম্যাচ কেনার বিতর্কে জড়িয়েছে তারা। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৬০ কোটিও বেশি।

এই পরিমাণ টাকা দিয়ে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটি কিনে নিতে মরিয়া কাতার সরকার। লক্ষ্য যে করেই হোক বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে খেলার মাঠে একটি দাগ রেখে যাওয়া। প্রতিপক্ষ দল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর। অভিযোগ সেই দেশের কাছে গোপনে ৭.৪ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার পাঠিয়েছে কাতার। ম্যাচ কেনার অভিযোগ তুলেছেন মধ্যপ্রাচ্যের ব্রিটিশ গবেষণাকেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রধান আমজাদ তাহা।

তার বিস্ফোরক দাবি, ইকুয়েডর ম্যাচ ছেড়ে দেবে কাতারকে। উদ্বোধনী ম্যাচে জয়ের জন্য ইকুয়েডরের আটজন ফুটবলারকে ৭.৪ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছে কাতার। দ্বিতীয়ার্ধে করা গোলে ইকুয়েডরকে হারাবে কাতার। বিশ্বকাপ যুদ্ধের প্রথম ম্যাচেই জয় চায় কাতার। আয়োজক দেশ হিসেবে এটি জরুরি বলে মনে করছে কাতার।

বিতর্ক আরও বেড়েছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নিজের দেশের হয়ে গ্যালারিতে থাকছেন না ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট। তিনি কেন আসছেন না এই প্রশ্নের পরই ইকুয়েডরকে বিপুল অর্থ দিয়ে ম্যাচ কেনার বিতর্কে জড়ায় কাতার। ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইল্লারমো লাসো বলেছেন, আমি কাতারের আমিরকে ধন্যবাদ জানাই আমন্ত্রণ করার জন্য। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে আমি বিশ্বকাপ উদ্বোধনী ম্যাচে থাকতে পারব না। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকবেন।

Link copied!