Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ভয়ংকর সাবডাকন জোনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দেশ

নুর মোহাম্মদ মিঠু

ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩, ০২:৫৫ পিএম


ভয়ংকর সাবডাকন জোনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দেশ

ব্যাপক জনসচেতনতা, ভবন নির্মাণে তদারকি বাড়াতে হবে এবং মুখ্য দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই -সৈয়দ হুমায়ুন আখতার, ভূতত্ত্ববিদ।
ঢাকায় শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংস্পর্শেই বোমার অভিঘাত তৈরি করবে পাঁচ থেকে ছয় মাত্রার ভূমিকম্প -ইকবাল হাবীব, নগরবিদ

গত চারশ বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাংশে দুটি ভূ-গাঠনিক প্লেটে শক্তি সঞ্চয়ের ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান বাংলাদেশ— এমনটাই আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। গবেষকদের মতে, ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে এবং এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে দেশের রাজধানীসহ সিলেট ও চট্টগ্রাম শহর। ২০১৯ সালে নেচার জিও সায়েন্স জার্নালে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের একদল গবেষক এমনই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই বিজ্ঞান সাময়িকীতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে ভূ-গাঠনিক প্লেটে শক্তি সঞ্চয়ের ফলাফল হলো ভূমিকম্প। ইন্ডিয়া, তিব্বত ও বার্মা— এই তিনটি গতিশীল প্লেট ও উপপ্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ ভয়ঙ্করভাবে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। আর সেই ঝুঁকির সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। তুরস্ক-সিরিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর দেশের বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, তুরস্ক-সিরিয়ার কাছাকাছি মাত্রার ভূমিকম্পও বোমার অভিঘাত তৈরি করবে ঢাকায়। জানতে চাইলে নগরবিদ ইকবাল হাবীব আমার সংবাদকে বলেন, রাজধানীর ৮০ শতাংশ ভবন রাজউকের অনুমোদন ছাড়া হচ্ছে। রাজউক নিজেই সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেছে। অন্য ভবনগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশ ভবনই হচ্ছে নকশার বরখেলাপ ও নিয়ম লঙ্ঘন করে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়াই অধিকাংশ ভবন তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো ঢাকা শহর ভূমিকম্পের তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছে। বেশিরভাগ ভবন ও স্থাপনাগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি ছাড়াই নির্মিত হয়েছে। সিরিয়া কিংবা তুরস্কের কাছাকাছি মাত্রায় বা ৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পও যদি দেশে হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতি হবে অনেক বেশি। আক্রান্ত শহরের চেয়ে বেশি ঘনত্বের শহর ঢাকা। এছাড়া গ্যাসলাইন যেভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে একবার ছোটখাটো করেও বায়াস্ট করলে গ্যাসের সাথে বিদ্যুতের সংস্পর্শে যে অগ্নস্ফুিলিঙ্গ হবে তা বোমার মতো অভিঘাত তৈরি করবে। আবার এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হলে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেয়ার মতো সুযোগও নেই। নগরের অভ্যন্তরে ফাঁকা জায়গাই নেই। হাসপাতাল কাঠামোও সেভাবে নির্মাণ করা নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকায় যে কাঠামোতে হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে তাতে এ ধরনের ঘটনায় চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি ভয়ঙ্কর পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, বাংলাদেশ তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ভারত প্লেট, উত্তরে তিব্বত উপপ্লেট এবং পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে বার্মা উপপ্লেট। ভারত ও বার্মা প্লেটের সংযোগ বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। পূর্ব অংশটি বার্মা প্লেট এবং পশ্চিমাংশ ভারতীয় প্লেটের অন্তর্গত। শিলং মালভূমি ভারত প্লেটের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি প্লেট। এটি দক্ষিণ দিকে এগিয়ে চলেছে ধীরে ধীরে। ভূতাত্ত্বিক গঠন ও টেকটোনিক কাঠামোর কারণেই বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশের ভূতাত্ত্বিক ও টেকটোনিক কাঠামো বিশ্লেষণ করে ধারণা করা যায়, সুদূর ও নিকট অতীতে এ অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকার (উত্তর ও পূর্ব দিকে) ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি রয়েছে। পূর্বাংশের পাহাড়ি অঞ্চল সাবডাকসন জোন, যেখানে ভারতীয় প্লেট বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। প্লেটের পরস্পরমুখী গতির কারণে এসব ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি ও সাবডাকশন জোনে বিপুল শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। গত ৪০০ বছরে সাবডাকশন জোন ও চ্যুতিগুলো থেকে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর গতিপথের পরিবর্তন হয়েছে। সাবডাকশন জোন থেকে সংঘটিত ভূমিকম্প সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। জনবহুল নগর ঢাকা ভূমিকম্পের সক্রিয় দুটি প্রধান উৎস, উত্তরে ডাইকি চ্যুতি ও পূর্বে ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোন থেকে ৫০ হাজার ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।

২০১০ সালে হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদ বিনষ্ট হয়। এরপর মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে চিলিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় ৫২৫ জনের। ২০১৫ সালে নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৯ হাজার জনের মৃত্যু ও বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়। ৭০০ কিলোমিটার দূরের নেপালের ভূমিকম্পের আতঙ্কে বাংলাদেশে ছয়জনের মৃত্যু হয়। হাইতিতে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭। আর চিলির ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮।

এসব আলোচনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্টে সংঘটিত ৮ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিল এক হাজার ৬২৬ জন। মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে ওই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করা যাবে না। কারণ, ওই সময় জনসংখ্যার ঘনত্ব ও স্থাপনা ছিল খুব কম। তবে ওই ভূমিকম্প পুরো ভারতবর্ষে আঘাত হেনেছিল এবং ক্ষতি সাধন করেছিল। একই মাত্রার ভূমিকম্প বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বা এর আশপাশে হলে কী ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা কল্পনা করলে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। কারণ, ঢাকা শহরে কেবল পুরোনো নয়, অতি পুরোনো অনেক ভবনও রয়েছে এবং সেসব ভবনে ঝুঁকি নিয়েই অনেক মানুষ বসবাস করছেন। এছাড়া চিলির ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি এবং মৃত্যুর সংখ্যা হাইতি ও নেপালের চেয়ে কম হওয়ার কারণ, চিলির ভবনগুলোর নির্মাণশৈলী অনেক বেশি টেকসই। এ ছাড়া হাইতির ঘনবসতি চিলির তুলনায় বেশি, তাই নিহত ব্যক্তির সংখ্যাও অনেক বেশি। বাংলাদেশের তুলনায় চিলির আর্থসামাজিক অবস্থা অনেক উন্নত। কাজেই একই মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী হবে, তা চিলির সঙ্গে তুলনা করে বোঝার উপায় নেই। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সরকারকেই এ বিষয়ে মুখ্য দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে থাকে। একটি ভবন নির্মাণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব নিয়ম মেনে করছে কি না, তা কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে।

আগের সীমানাই বহাল সময়ের মধ্যে যেসব দাবি আপত্তি উত্থাপিত হবে এবং এখন পর্যন্ত যেসব আবেদন জমা হয়েছে, সবগুলো মিলিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি শেষে বিধিবিধানের আলোকে চূড়ান্ত বিভক্তি এলাকা ঘোষণা করা হবে।’ সংসদীয় আসনে পরিবর্তন হবে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এ বিষয়টি হবে মূলত প্রাপ্ত আবেদনের সংখ্যার ওপরে নির্ভর করে।’ সচিব বলেন, ‘আমরা আগে খসড়া প্রকাশ করব। এরপর আপত্তি আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে বলতে পারব আসলে কটি (আসনে) কী (পরিবর্তন) হয়েছে।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে যেভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে, অর্থাৎ এখন যেটা আছে, সেটা দিয়েই আমরা খসড়া প্রকাশ করব। এরপর কারো যদি কোনো আপত্তি থাকে, সেই আপত্তি দাখিল করবে। সব আবেদনের শুনানি হবে। এরপর চূড়ান্ত হবে কটি আসনের সীমানা পরিবর্তন হচ্ছে।’ খসড়া কবে নাগাদ প্রকাশ করা হবে— এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘খসড়া দ্রুতই প্রকাশ করা হবে। এটা আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই করে দেব। বাস্তবতা এবং আইনের বিষয়টিও তাই। আগে তো মানুষকে জানাতে হবে। তারপর তাদের কোনো আপত্তি থাকলে তার ওপর শুনানি হবে।’ তিনি জানান, ‘যে আইন আছে, প্রথম হচ্ছে ভৌগোলিক অখণ্ডতা, তারপর আঞ্চলিক অবিভাজ্যতা, তারপর প্রশাসনিক এলাকা, চতুর্থত জনসংখ্যার ঘনত্ব। এসব বিবেচনায় নিয়ে যদি প্রয়োজন হয় সংশোধন হবে। না হলে হবে না।’ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে এটি বর্তমান কমিশনের প্রথম কমিশন বৈঠক। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।           

Link copied!