Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে তা’মীরুল মিল্লাত

আবদুর রহিম

মার্চ ২৭, ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম


তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে তা’মীরুল মিল্লাত
  • গুগলে তা’মীরুল মিল্লাত লিখে সার্চ দিলে  ইনফোটেক সলিউশনস ইএমএসের নাম প্রদর্শন

 

তা’মীরুল মিল্লাতের ওয়েবসাইট অন্য কোনো নামে থাকলে পদক্ষেপ নেব

—বেগম শাহনওয়াজ দিলরুবা খান, যুগ্ম সচিব, মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ

 

পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বসে বিষয়টির সমাধানের উদ্যোগ নেব

—মাওলানা মিজানুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তা’মীরুল মিল্লাত

 

ইনফোটেক যেটা করেছে তা সম্পূর্ণ প্রতারণা, এর পেছনে দুরভিসন্ধি আছে

—আব্দুল আলিম, সাইবার গবেষক 

 তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী ও তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদ্রাসা। প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত তথ্যের জন্য গুগলে tmkm ও tmmkm লিখে চার্চ দিলে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ইনফোটেক সলিউশনস ইএমএসের নাম চলে আসছে। এ নিয়ে বিব্রত হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। দেশের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্টের এ দুটি প্রতিষ্ঠান যেকোনো সময় সাইবার তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। 

তারা বলছেন, একটি নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সেবাপ্রতিষ্ঠান এভাবে কোনোভাবেই নাম ব্যবহার করতে পারে না। একটি প্রতিষ্ঠানের সাইট তৈরি পর সব কিছু চূড়ান্ত হলে তবেই সাইট জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত হতে পারে। এভাবে প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্ট উন্মুক্ত করে আড়ালে ইনফোটেক সলিউশনস জালিয়াতি করে যাচ্ছে। এ ধরনের সেবাপ্রতিষ্ঠান যেকোনো সময় স্টুডেন্ট তথ্য শিক্ষকদের তথ্য নিয়ে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে বলেও অনেকের ধারণা। সচেতন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন।

ফেনী জেলা একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শহীদ উল্লাহ মিয়াজী। তার ছোট মেয়ে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় পড়ে। মিল্লাতের ওয়েবসাইট সার্চ করে ইনফোটেক সলিউশনস ইএমএসের নাম দেখে তিনি বিভ্রান্তিতে পড়েন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, মাদ্রাসার নিয়মিত আপডেট পেতে ওয়েবসাইটে যাই। কিন্তু মাদ্রাসার নামের পরিবর্তে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে বিভ্রান্ত হই। এটি কী আসলেই মাদ্রাসার সাইট নাকি কোনো সেবা প্রতিষ্ঠানের। খুব ভয় হয় তারা যদি আমার মেয়ের তথ্য প্রতিষ্ঠানের আদলে অন্য জায়গায় পাচার করে দেয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতাকেও দায়ী করেন।

তা’মীরুল মিল্লাতের  শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি একজন মিল্লাতের স্টুডেন্ট এবং Ui/Ux ডিজাইনার হিসেবে বলতে চাই, এ ধরনের ওয়েবসাইট একটা সময় ছিল কিন্তু বর্তমানে মিল্লাতের সাথে এটি যায় না। দেখুন, প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আছে বলেই আমরা চাই এটি সব দিক থেকে ফ্রেশ থাকুক। এই মিল্লাত কোনো ব্যক্তির একার প্রতিষ্ঠান নয় যে, যেখানে ওয়েবসাইটের Url, Seo পর্যন্ত কোনো মিল্লাতের না হয়ে আরেকজনের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের নাম থাকবে।’

মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী হাফেজ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তা’মীরুল মিল্লাত জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত একটা ওয়েবসাইট গঠন করতে পারল না! এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমি আশা করব, আমাদের প্রতিষ্ঠানের যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা আমাদের নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট উপহার দেবেন। গোপনীয় কিংবা অস্তিত্বহীন কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে যাতে প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সম্পদকে ঝুঁকিতে না ফেলে।’

এদিকে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ইনফোটেক সলিউশনসের কর্ণধার মুহাম্মদ পাশা বিদ্যুৎ ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের নিয়েও আপত্তিক মন্তব্য করছেন। তার নিজস্ব ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন” যেহেতু আমি ইনফোটেক সলিউশনসের কর্ণধার হিসেবে কথা বলছি, সেহেতু বলে রাখছি, ওইসব সাইবার বুলিং-ফুলিং, কমেন্টিং ইত্যাদি যে কার কি ছিড়তে পারে তা আমার জানা আছে। ফেসবুক ভার্চুয়াল জগত, ব্লক মারলেই সব ফুট্টুস। আর আমি তো বহু আগে চ্যালেঞ্জ একটা দিয়েই এসেছি যে, পারলে রিয়েল লাইফে কেউ আমার শরীরের একটা পশম টেনে সোজা করুক।’

জানতে চাইলে ইনফোটেক সলিউশনসের কর্ণধার বলেন, ‘এটি আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ কী? আমি প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়েই করেছি। আপনি তাদের জিজ্ঞেস করুন। প্রতিষ্ঠানের সাইট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নামে কেন জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো সঠিক উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।’

সাইবার গবেষক আব্দুল আলিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘সাধারণত কোনো ওয়েবসাইটের ডেমো তৈরি হলে তখন ব্যানারে কোম্পানির নাম থাকতে পারে। কিন্তু সাইট হস্তান্তর হলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের নাম লাগানো হবে। ইনফোটেক যেটি করেছে সেটি সম্পূর্ণ প্রতারণা। এর পেছনে হয়তো তাদের বড় কোনো দুরভিসন্ধি আছে। ইনফোটেকের পক্ষে একজন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভাষায় কথা বলছে সেটিও অন্যায়। বলছে, দেখা হবে আদালতের বারান্দায়। এই ঘটনা আদালত পর্যন্ত যদি গড়ায়। আর আদালত যদি ন্যায়বিচার করে তাহলে ইনফোটেক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শাস্তি পাবে।’

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সংবাদ মাধ্যম ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে আইটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেকনোহাটের কর্ণধার বায়জিদ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট স্থানে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম থাকতে পারে। কিন্তু সেটি কখনোই এসইও টাইটেলে থাকবে না। একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসইওতে অন্যের বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্টরা মেনে নেবে না, এটিই স্বাভাবিক। যদি কেউ এমনটি করে তাহলে বুঝতে হবে, হয় তিনি এ বিষয়ে অজ্ঞ অথবা তার খারাপ উদ্দেশ্য রয়েছে।’

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার টঙ্গী শাখার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মিজানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘ইনফোটেক সলিউশনসের মাধ্যমে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান নাম সার্চ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম চলে আসে, বিষয়টি দেখেছি। তবে  আমরা চেষ্টা করছি বিষয়গুলোতে অগ্রসর হতে। এ নিয়ে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে শিগগিরই বসে সমাধান করব। আমাদের ওয়েবসাইট অবশ্যই আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামেই থাকা আবশ্যক। আমাদের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বসে আমরা এর সমাধানের উদ্যোগ নেবো।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব বেগম শাহনওয়াজ দিলরুবা খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তি বা আইটি প্রতিষ্ঠানের নামে হতে পারে না। ইউআরএল অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নামেই থাকবে। তা’মীরুল মিল্লাতের ওয়েব সাইট যদি অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানের নামে থেকে থাকে এ বিষয়ে আমরা অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নেবো।’

Link copied!