Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

শিগগিরই কমছে না লোডশেডিং

মহিউদ্দিন রাব্বানি

মে ২৯, ২০২৩, ১২:৩০ এএম


শিগগিরই কমছে না লোডশেডিং
  • দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানোই যাচ্ছে না
  •  চলতি সপ্তাহে বন্ধ হতে পারে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র
  •  আদানির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার সুফল মেলেনি

জুনের শেষদিকে বিদ্যুৎ ঘাটতি কমে আসবে

—প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন

মহাপরিচালক, পাওয়ার সেল

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় পরিকল্পনায় অগ্রসর হতে হবে

—বদরূল ইমাম

অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

লোডশেডিং মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও মুক্তি মিলছে না শিগগিরই। চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দিনে অবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকায় কিছুটা স্বস্তি মিললেও লোডশেডিংয়ের কবল থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। ঘন ঘন বিদ্যুৎবিপর্যয়ে বিরক্ত গ্রাহকরা। তাপমাত্রা নিম্নমুখী হওয়ায় বিদ্যুতে তুলনামূলক চাহিদা কমেছে। এতেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যর্থ বিদ্যুৎ বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ডলার সংকটে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে রাজি হচ্ছে না ব্যাংকগুলো। কয়লা, জ্বালানি তেলের অভাবে বেকায়দায় পড়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিভাগ। চলমান বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় চলতি বছরের ভরসা ছিল রামপাল, পায়রা ও আদানির বিদ্যুৎ। কিন্তু প্রয়োজনী কয়লার সংস্থান না থাকায় রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে চার মাসে তিনবার উৎপাদন বন্ধ করতে হয়েছে। এদিকে কয়লা সংকটের কারণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ করে দতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ মে এই উৎপাদন বন্ধ করা হয়। বাকি ইউনিটও কয়েক সপ্তাহের জন্য বন্ধ হতে পারে শিগগিরই। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সমগ্র বরিশাল ও খুলনা এবং ঢাকার কিছু অংশের জন্য বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য উৎস। কয়লার জোগান না হলে এই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অন্য ইউনিটটি থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

দেশের সর্ববৃহৎ কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সূত্র বলছে, তাদের কাছে মাত্র ৫০ হাজার টন কয়লা মজুত রয়েছে এবং দুটি ইউনিটের প্রতিটিতে দৈনিক প্রায় ছয় হাজার টন কয়লা প্রয়োজন। সে হিসাবে ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হতে আর দেরি নেই। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে এবং ৫০ শতাংশ শেয়ার থাকা চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি) কয়লার টাকা দেয়। বিল পরিশোধ করে দেয়ার ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে অর্থ আদায় করে সিএমসি।

গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, পিডিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বিসিপিসিএল জানায়, ছয় মাসের বেশি বকেয়া থাকায় সিএমসি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত কয়লা সরবরাহ বন্ধ থাকবে। বিপিডিবি এখনো পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি। বিসিপিসিএল সূত্র বলছে, প্রায় ৩০ কোটি ডলার বকেয়া ছিল এবং কয়লা পরিশোধের বিষয়ে পিডিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনা চলছে।

এদিকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি আপাতত কোনোভাবেই কমানোর সুযোগ নেই। আদানির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পরও সুফল মেলেনি। লোডশেডিং অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা এখন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিটের উৎপাদনের দিকে তাকিয়ে আছেন। লোডশেডিংয়ের জন্য গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো পিডিবিকে দায়ী করছে। আর পিডিবি বলছে, জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে রামপালসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে এলে বিদ্যুতের ঘাটতি ৬০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু পিডিবি গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। কমবেশি ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। উৎপাদনে ঘাটতির জন্য একদিকে দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন কমে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে পর্যাপ্ত এলএনজি কিনতে না পারা, জ্বালানি তেলের অভাবে ডিজেলচালিত কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকা এবং সর্বোপরি ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ বিভাগকে বহুমুখী সংকটে পড়তে হয়।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, দেশের লোডশেডিং পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। আরো অন্তত এক মাস লাগবে। জুন মাসের পর বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়বে। তখন লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমতে শুরু করেছে। আরো একটু কমলেই স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হবে। গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এটি করতে পারলে বিদ্যুতের উৎপাদনও বাড়বে। চলমান লোডশেডিংয়ে কত দিন থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানান, এখনই লোডশেডিং মুক্ত হচ্ছে না। জুন মাসের শেষ দিকে বিদ্যুতের ঘাটতি কমে আসবে। এই সময়ের মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে আসবে। এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। মহেশখালিতে ঘূর্ণিঝড় মোকার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলএনজি টার্মিনাল পুরোপুরি সচল হবে। এর ফলে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এতে সংকট অনেক কমে আসবে। উৎপাদনে ঘাটতি এবং লোডশেডিং দুটোই কমবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম বলেন, ‘বিদ্যুৎ সেক্টরকে সচল রাখতে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কিন্তু সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনার অভাবেই গ্যাস ও বিদ্যুৎ সেক্টরে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা যখন সরকারকে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছি, তখন সরকার উচ্চমূল্যের এলএনজির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এখন হোঁচট খেয়ে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ভোলায় বিপুল গ্যাস পাওয়া গেছে।

Link copied!