Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিড়ম্বনায় ঢাবি অধিভুক্ত শিক্ষার্থীরা

মো. নাঈমুল হক

মে ৩১, ২০২৩, ১১:৩১ পিএম


বিড়ম্বনায় ঢাবি অধিভুক্ত শিক্ষার্থীরা

ঢাকা কলেজের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী নুরে আলম। ঢাবি অধিভুক্তির প্রথম ব্যাচ। চতুর্থ বর্ষের একটা কোর্সে তিনি ২.৭০ পেয়েছেন। কিন্তু সিজিপিএ দেয়ার পর দেখেন ২.৪৮ দেখাচ্ছে। এ কারণে এখনো তিনি মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারছেন না। রেজাল্ট পরিবর্তনের জন্য ১৭ দিন আগে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচ দিন রেজিস্টার ভবনে গেছেন। এখনো রেজাল্টের কোনো পরিবর্তন আসেনি। ভুক্তভোগী এ শিক্ষার্থী আমার সংবাদকে বলেন, আমার মতো এরকম অনেকেরই রেজাল্টে ভুল এসেছে। আমরা প্রতিকার চাওয়ার জন্য ঢাবির রেজিস্টার ভবনে বারবার যোগাযোগ করি। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তরা রেজাল্ট সংশোধন না করে উল্টো আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। ঢাকা কলেজের নুরে আলমই নন। সাত কলেজের সব ডিপার্টমেন্টের প্রতিটি ব্যাচের এরকম ভুক্তভোগী পাওয়া যাচ্ছে।

জানা যায়, রেজাল্টে ভুল, নামের ভুল, খাতা দেখায় বৈষম্যমূলক নম্বর দেয়া সাত কলেজের নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রেজাল্ট প্রদানে ৯০ দিনের কথা থাকলেও রেজাল্ট পেতে শিক্ষার্থীদের ছয় থেকে আট মাস সময় লেগে যায়। শিক্ষকরা হুটহাট যেকোনো নিয়ম শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেন। যেকোনো সমস্যার প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সুনির্দিষ্ট অভিভাবক পান না শিক্ষার্থীরা। এরকম আরো সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি সাত দফা দাবি জানিয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজ অধ্যক্ষরা অধিকাংশ দাবির পক্ষে একমত হয়েছেন। দাবিগুলো হলো— ১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের হয়রানির কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ২. যে সব শিক্ষার্থী পরবর্তী বর্ষের ক্লাস, ইনকোর্স পরীক্ষা ও টেস্ট পরীক্ষা পর্যন্ত অংশগ্রহণ করার পর জানতে পেরেছেন নন-প্রমোটেড তাদের সর্বোচ্চ তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে। ৩. সব বিষয়ে পাস করার পরও একজন স্টুডেন্ট সিজিপিএ সিস্টেমের জন্য নন-প্রমোটেড হচ্ছেন। সিজিপিএ শর্ত শিথিল করতে হবে। ৪. বিলম্বে ফলাফল প্রকাশের কারণ ও এই সমস্যা সমাধানে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে (৯০ দিন) ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। ৫. সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অভিভাবক কে-কারা? কোথায় তাদের সমস্যাসমূহ উপস্থাপন করবে? তা ঠিক করে দিতে হবে। ৬. একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এবং ৭. শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিজের বিভাগের ও কলেজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তরা মিম আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের বিভাগে রেজাল্ট পেতে ছয় থেকে আট মাস সময় লাগে। এর মধ্যে তার আরেক বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। রেজাল্ট পেতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীর মানোন্নয়ন পরীক্ষা আছে কি-না বা সে পাস করেছে কি-না? এটি জানতে জানতে আরেক বর্ষের পরীক্ষা আসে। তখন হুট করেই প্রস্তুতি নেয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।

ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাঈম হোসেন বলেন, যেকোনো সমস্যার জন্য আমরা কোনো অভিভাবক খুঁজে পাই না। ঢাকা কলেজকে জানালে ওনারা বলেন ঢাবিতে যাওয়ার জন্য। আর ঢাবিতে গেলে ওনারা বলেন তোমাদের কলেজ প্রশাসনকে জানাও। আমরা যখন কোনো আন্দোলনে নামি, শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে একমত হন। আমাদের সমস্যার সমাধানে আশস্ত করেন। পরবর্তীতে আর সমাধান পাই না। শিক্ষার্থীদের দাবির ব্যাপারে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য আমার সংবাদকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি শুনেছি। আগামী ১ জুন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বসব। এ ব্যাপারে ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আমার সংবাদকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক নয়। তবে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। শিগগিরই ঢাবির সঙ্গে আমরা বসব। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আক্তারুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, রেজিস্টার ভবনের ব্যাপারে যে অভিযোগগুলো করা হয় ওটা সঠিক নয়। বিভিন্ন মানুষ নানা উদ্দেশ্য অনেক কথা বলে। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি। কন্ট্রোলার, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর নিয়মিত এগুলো মনিটর করছে। বিচ্ছিন্ন দু’-একটি ঘটনা ঘটলেও আমরা চাই সেগুলো না ঘটুক। অতীতের তুলনায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো অবস্থায় আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠছে। এখন তারা অনেক কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। নিয়মিত যথা সময়ে পরীক্ষা হচ্ছে। তাদের প্রিন্সিপালরা উন্নতির কথা আমাদের জানিয়েছেন। এখন যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো আরো ভালো অবস্থানে নেয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। তাদের শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকট আছে।

Link copied!