Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

পানিতে ভাসছে স্বপ্ননগরী

নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধি

আগস্ট ৮, ২০২৩, ১১:৩২ পিএম


পানিতে ভাসছে স্বপ্ননগরী
  • চট্টগ্রামে পানিবন্দি লাখো মানুষ
  • পানিতে ডুবে বিচ্ছিন্ন বান্দরবান
  • চট্টগ্রাম-বান্দরবানে সেনা মোতায়েন
  • চার জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
  • পাহাড়ধসে মা-মেয়ের মৃত্যু, একজন নিখোঁজ 
  • ১৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকার প্রকল্পের সুফল পাননি নগরবাসী

১৯৯৫ সালের কাজ এখনো চলছে, সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতায় সুফল মিলছে না
—অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান

খালগুলো পরিষ্কার না থাকায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে
—প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার

চট্টগ্রাম হবে সিঙ্গাপুরের চেয়েও ‘সুন্দর’ এমন স্বপ্নের বাক্যটি একজন শীর্ষ মন্ত্রীর। সিডিএ কর্তৃক নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা-প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে সিঙ্গাপুর বানানোর ঘোষণা ছিল সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও। রাজনীতিবিদদেরও নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ও ইশতেহার ছিল জলবদ্ধতা নিরসন করে এই অঞ্চলকে সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত করার। সেই স্বপ্নের নগরী এখন টানা চার দিনের বৃষ্টিতেই পানিতে ভাসছে। চট্টগ্রাম বান্দরবানসহ পূর্বাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি। 

ইন্টারনেট, সড়ক যোগাযোগসহ সব কিছুই  বিচ্ছিন্ন, নেই বিদ্যুৎও।  চার জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে মাঠে নামানো হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের। টানা অবিরাম বৃষ্টিপাত পাহড়ধসে মৃত্যুও ঘটছে। পাশাপাশি বাড়ছে নদ-নদীর পানি। ভূমিধসে চাপা পড়েছে বহু বাড়িঘর। বেশ কিছু প্রাণহানির খবরও মিলেছে। এরই মধ্যে সরকার দুর্গত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। অনেক এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিংও করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় তিন দশকের পুরোনো সমস্যা। ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার সঙ্গে অভিশাপ হয়ে হাজির হয় পাহাড়ধস। ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাহাড়ধসে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫১ জন। এখন ভারী বর্ষণ শুরু হলেই পাহাড় থেকে জনবসতি সরাতে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয় জেলা প্রশাসনকে। আর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকার প্রকল্পের সুফল হিসেবে মহানগরবাসী পেয়েছেন অভিশাপ। এদিকে বান্দরবানে বাড়ছে ভয়ঙ্কর ঝুঁকি। পাহাড়ধসে গত সোমবার মারা গেছে চারজন। গতকাল মঙ্গলবারও পাহাড়ধসে মা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আরো একাধিক নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। বান্দরবনের পৌর এলাকার রাস্তায় নৌকা চলছে। পৌরসভার ফায়ার সার্ভিস অফিস, খাদ্যগুদাম অফিস, বাসস্ট্যান্ড বালাঘাটা, কালাঘাটা, আর্মিপাড়া, নোয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে ডুবে আছে।

সিঙ্গাপুরের স্বপ্ন অধরা : সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রাম হবে সিঙ্গাপুরের চেয়েও সুন্দর’ এখানে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা  চট্টগ্রামকে স্বপ্নের সিঙ্গাপুর নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। এ ছাড়া কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, বন্দরের বে-টার্মিনাল, মীরসরাই ইকোনমিক জোন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ, সিডিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ এ ছয় প্রকল্পের মাধ্যমে দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর হবে বলেও ঘোষণা ছিল প্রশাসনের। ব্যয় করা হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। 

এ ছাড়া  চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদলও বলেছিলেন, চট্টগ্রাম অবশ্যই সিঙ্গাপুর হবে, সেই স্বপ্নেই কাজ করছি। আর যদি কাজে লাগাতে না পারি নাইজেরিয়ার হারানো রাজধানী ‘লেগোস’-এর মতো ‘মরা শহরে’ পরিণত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।  প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী দায়িত্ব পালনের শুরুতে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সবার সহযোগিতা পেলে চট্টগ্রামকে সিঙ্গাপুর বানানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। চট্টগ্রামের আরেক  মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছিলেন, উন্নয়ন যাত্রায় চট্টগ্রামকে সিঙ্গাপুর বানাতে সরকার কাজ করছে। জলজটমুক্ত করতে নির্বাচনি ইশতেহারও ছিল তার। 

চট্টগ্রামে পানিবন্দি লাখো মানুষ : টানা চারদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি নগরবাসীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব উপজেলায় ফসলের ক্ষেত ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এর পাশাপাশি বীজতলা ও নতুন রোপণ করা ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। চট্টগ্রামের বান্দরবানে ৩০ বছরে বৃষ্টির রেকর্ড করেছে। উপজেলাগুলোর মধ্যে দক্ষিণের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা এবং উত্তরের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পরিমাণ বেশি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, বেশির ভাগ উপজেলায় পানি বাড়ছে। এর মধ্যে ১০ উপজেলায় পানির পরিমাণ বেশি। দক্ষিণের উপজেলাগুলোতে পানি বাড়ছে মূলত পাহাড়ি সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়ার কারণে। বাড়ছে হালদা ও কর্ণফুলীর পানিও। প্রায়  তিন লাখ ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর পরিবারের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগই উপজেলাবাসী।

রাউজান উপজেলার উরকিরচর, পশ্চিম গুজরা, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান, পূর্বগুজরা, বিনাজুরী ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে তীব্রভাবে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো কোনো রাস্তা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। হালদা ও কর্ণফুলীর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বোয়ালখালীর উপজেলার সারোয়াতলী, শাকপুরা, আমুচিয়া, পোপাদিয়ার বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এ উপজেলায় পানিতে কালুরঘাট ফেরির অ্যাপ্রোচ সড়ক, পন্টুুন ও বেইলি ব্রিজ ডুবে যাওয়ায় পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। 

চন্দনাইশ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জিমরান মোহাম্মদ সায়েক বলেন, আমরা ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছি। তিন ইউনিয়নে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অনেকে বসবাস করছেন। তাদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। যারা সরে যাচ্ছেন না তাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ও আমিলাইষ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ও ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঞ্চনা, এঁওচিয়া, বাজালিয়া ইউনিয়নে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী শতাধিক মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। 

সাতকানিয়া উপজেলা ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হলেও সড়ক যোগাযোগ ঠিক আছে। পাহাড় থেকে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা মিলে অনেক পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে। বাঁশখালীর ইউএনও সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, তিনটি ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এ ছাড়া সাধনপুরে দেয়ালধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সন্দ্বীপের ইউএনও সম্রাট খীসা বলেন, জোয়ারের পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সাগরে, নদীতে জোয়ার বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৩২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। যা গত ৩০ বছরে রেকর্ড। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষার্থে চট্টগ্রাম মহানগরে ছয়টি সার্কেলের মাধ্যমে ভাগ করে পাহাড় রক্ষা ও মানুষের জানমাল রক্ষায় জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম কাজ করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিদিন মাইকিং থেকে শুরু করে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সরে যেতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম-বান্দরবানে সেনা মোতায়েন : চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধসের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে দুর্গতদের সহায়তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আইএসপিআর বলেছে, সেনা সদস্যের মাধ্যমে নিরলসভাবে উদ্ধার তৎপরতা, জরুরি ত্রাণ পরিচালনা ও চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম চলছে। সেনাবাহিনীর অন্যান্য ফরমেশনসমূহ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে আইএসপিআর।

চার জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা : টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও ভূমিধসের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ বুধবার ও বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে। গতকাল এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় দুই দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। 

পানিতে ডুবে বিচ্ছিন্ন বান্দরবান : ভারী বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে বান্দরবান জেলা সদর ৬০ শতাংশ ও লামা উপজেলার শতভাগ এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে।  এতে করে বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে অতিক্রম করছে। বান্দরবান জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ইন্টারনেটসেবা বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

পাহাড়ধসে মা-মেয়ের মৃত্যু, একজন নিখোঁজ : বান্দরবানে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে মা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়িতে পানিতে ভেসে ম্রো সমপ্রদায়ের একজন নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল বিকেলে জেলার কালাঘাটা গুদারপাড় এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। এদিকে পানিতে তলিয়ে যাওয়া ছাত্রাবাস থেকে ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। বিদ্যুতের সাবস্টেশনগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় তিন দিন যাবৎ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন পুরো জেলা। নিহতরা হলেন নূর নাহার (৪২) ও সাবিকুননেছা (১৪)। বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লামা ও সদর উপজেলা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পাহাড়ধসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন কয়েকজন। ২৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর দুটি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প কাজ করছে। একাধিক টিম দুর্গতদের সহযোগিতায় কাজ করছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে নতুন চারটি খাল খননের কথা বলা হয়েছিল। তার মধ্যে একটি খালের কাজ ২০১৪ সালে শুরু করলেও আজ পর্যন্ত চসিক তা শেষ করতে পারেনি। আগের মাস্টারপ্ল্যানে প্রথম পর্যায়ের ড্রেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের ড্রেন ও তৃতীয় পর্যায়ের ড্রেনের কথা উল্লেখ ছিল। সরকার যে প্রকল্পগুলো এখন বাস্তবায়ন করছে, সেখানে এ বিষয়গুলো সেভাবে ভাবা হয়নি। এ জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে এসে এখন পানিপ্রবাহ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। আটকে যাওয়া পানি বড় খাল বা ড্রেন পর্যন্ত আসতে পারছে না। পরিকল্পনা নেয়ার আগে যদি যথাযথভাবে সমীক্ষা করা হতো, তাহলে এ দুর্বলতা ধরা পড়ত। জনগণও এটির সুফল পেত। সেবা সংস্থার মধ্যে আছে সমন্বয়হীনতাও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২২টি সেবাদানকারী সংস্থা আছে। প্রধান এ সমস্যা নিরসনে সেবাদানকারী এই সংস্থাগুলোর মধ্যেও আছে সদিচ্ছার অভাব। ২০০০ সালে জলাধার সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল সারা দেশে। সেই আইন বাস্তবায়নে আন্তরিক থাকার কথা ছিল সব সেবা সংস্থার। কিন্তু উল্টো পথে হাঁটছে চট্টগ্রাম।

জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকা। জলাবদ্ধতা প্রকল্পগুলোর আওতায় থাকা জলকপাটগুলো (স্লুইসগেট) যদি চালু করা যেত, তাহলে জোয়ারের পানি ঠেকানো যেত। খালগুলো ঠিকভাবে পরিষ্কার না থাকার কারণেও পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
 

Link copied!