ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad
সহযোগিতায় বিভাগীয় চেয়ারম্যান

জাককানইবির যৌনলিপ্সু শিক্ষক সাজন

মো. নাঈমুল হক

মার্চ ৫, ২০২৪, ১২:২২ এএম

জাককানইবির যৌনলিপ্সু শিক্ষক সাজন
  •  অনেক ছাত্রীকে বিভিন্ন যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মেসেজ দেন সাজন সাহা। পাত্তা না পেলে একাডেমিকভাবে হয়রানি করেন
  • বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়ে হেনস্তার শিকার ছাত্রী

শিক্ষক সাজন সাহা ইন্টার্নশিপ নিয়ে ঝামেলা করলে তাকে সরিয়ে নিজেই দায়িত্ব নিয়েছি
—রেজওয়ান আহমেদ শুভ্র, বিভাগীয় চেয়ারম্যান

এটা খুবই সেনসেটিভ বিষয়, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তদন্ত করে পদক্ষেপ নেব 
—ড. সৌমিত্র শেখর, জাককানইবি উপাচার্য

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা নিয়ে লিখেছেন বিখ্যাত কবি কাজী কাদের নেওয়াজ। এখনো শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সেই শ্রদ্ধার সম্পর্ক রয়েছে। শিক্ষকদের ভালোবাসার দৃষ্টান্ত হরহামেশাই দেখা মেলে। যুগ যুগ ধরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর এমন সম্পর্ক অটুট থাকুক এমনটাই চান সবাই। যদিও হঠাৎ কিছু শিক্ষক তাদের শিক্ষকতার মর্যাদা হারিয়ে ফেলেন। মর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রীদের সঙ্গে গড়তে চান অনৈতিক সম্পর্ক। সামাজিক মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মেসেজ দেন। দিন-রাত ছাত্রীদের প্রলোভনে ফেলার নানা ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত থাকেন। ছাত্রীরা ভদ্রতা বজায় রেখে সেগুলো এড়িয়ে চলতে চাইলেও সেই সুযোগও দেন না কোনো কোনো সময়। উল্টো তাদের ক্যারিয়ার ও একাডেমিক নানা দিকের ক্ষতি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। 

এমনই অভিযোগ রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। একজন ছাত্রীর বিপদে ছুটে আসবেন বিভাগের অভিভাবক চেয়ারম্যান এমনটাই প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের, কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে- এখানে উল্টো ছাত্রীকে এসব এড়িয়ে (ঘটনা চেপে) যেতে বলেন তিনি। অন্যায়ভাবে অন্য দুজন শিক্ষককে ফাঁসানোর প্রস্তাবও দেন। তাহলে মিলবে বিভাগে ভালো রেজাল্ট এমন লোভনীয় প্রস্তাবও দেয়া হয়। এসব বিষয় সামাজিক মাধ্যমে জানানো হলে ছাত্রীকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে এমন হুমকিও দেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান। 

জানা গেছে, শিক্ষক সাজন সাহা হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিভাগের ছাত্রীদের নেতিবাচক মেসেজ পাঠিয়েছেন। শিক্ষকতার শুরু থেকে ছাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। লোকলজ্জা ও শিক্ষকের ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী মুখ খোলেননি। গত দুদিন ধরে এসব ঘটনায় ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। গতকাল যৌন হয়রানির প্রতিকার ও জড়িত শিক্ষকের শাস্তি চেয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, জাককানইবির অধিকাংশ বিভাগের দু-একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। সাহস করে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। 
ছাত্রীদের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শিক্ষক হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের মেসেজ পাঠান, তাদের ফেসবুকের স্টোরিতে অশোভন কমেন্ট করেন সাজন সাহা। এমন অনেকগুলো স্কিনশট (প্রতিচ্ছবি) সংরক্ষিত রয়েছে আমার সংবাদের প্রতিবেদকের কাছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সেসব স্ক্রিনশট ব্যবহারের অনুমতি দেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা। 

সাজন সাহা কর্তৃক একজন ছাত্রীকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো মেসেজ থেকে দেখা যায়, রাত ৪টা ৪ মিনিটে একজন ছাত্রীকে ঘুমানোর কথা বলে চুমুর ইমোজি পাঠান। এরপর ভোর ৫টা ৪৯ মিনিটে ওই ছাত্রীকে অশ্লীল ভিডিও পাঠান তিনি। ২০২১ সালের নভেম্বরের ২৬ তারিখে রাত ১টা ৩৩ মিনিটে মেসেঞ্জারে ছাত্রীকে লেখেন, ‘চলেন চা খাই। আরেকটা মেসেজে তিনি লিখেন, এখনো ক্যাম্পাসে আছ? আমি বাসায়। মাঝে মাঝে এসো না অফিসে। ম্যাথ বুঝে নিলা।’ আরেকদিনের মেসেজ থেকে দেখা যায়, ‘ফোন দিলে আসতে পারবা? অফিসে। বললে বাসায় তো আসবা না, তাই না।’ একজন ছাত্রীর শাড়ি ও চুড়ি পরার স্টোরিতে তিনি লিখেন, ‘সব চুড়ি আপনাকে দিলাম। সব শাড়িগুলো আপনাকে গিফট।’ ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর রাত ১টা ৫৭ মিনিটে মেসেজে তিনি লেখেন, ‘এখন যদি চা পাওয়া যেত। চা করে নিচে নিয়ে এসো, খাই।’ ৫ ডিসেম্বরের একটা স্টোরিতে তিনি লেখেন, ‘ভালা লাগে না একটা ডিজিজ। এটা মাথায় আসলে আরো ভালো লাগবে না।’ এরপর হাসির ইমুজি। এমন অসংখ্য কুরুচিপূর্ণ ও অশোভন মেসেজ পাঠিয়েছেন ওই শিক্ষক।  
ছাত্রীদের একাডেমিকভাবে হয়রানি ও ক্ষতি করেন

সাজন সাহার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হলে ছাত্রীদের একাডেমিকভাবে হয়রানি করেন তিনি। হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের সায়িদা সানজানা আহসান ছোঁয়া তার একজন শিকার। ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময় মেসেজ দিয়ে তাকে বিরক্ত করতেন। ম্যাথ শেখানোর জন্য বাসায় যাওয়া ও চা খাওয়ার প্রস্তাবও দিতেন। একপর্যায়ে সায়িদা তার মেসেজের উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বিভাগে বিভিন্ন সময় ছোট করে কথা বলতেন। পরীক্ষার হলে সিট পরিবর্তন, পরীক্ষার খাতা ওলট-পালট করে দেখতেন। সারাক্ষণ ওই ছাত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। নিজের কোর্সে ইচ্ছাকৃত কম নম্বর দিতেন। সর্বশেষ, ফাইনাল সেমিস্টারের ইন্টার্নশিপের সুপারভাইজারের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাকে নানাভাবে হয়রানি করেন। চারবার বিষয় পরিবর্তন করে ভাইভার আগের দিন নতুন বিষয় দিয়েও হয়রানি করেন। 
বিচার চেয়ে হেনস্তার শিকার ছাত্রী 

সাজন সাহার হয়রানি থেকে বাঁচতে সুপারভাইজার পরিবর্তনের জন্য বিভাগের চেয়ারম্যান রেজওয়ান আহমেদ শুভ্রর কাছে যান সায়িদা সানজানা আহসান ছোঁয়া। এ সময় বিভাগের চেয়ারম্যান ছোঁয়ার সঙ্গে অপ্রত্যাশিত আচরণ করেন। নিজ বিভাগের শিক্ষকের নামে মিথ্যা অপবাদের অভিযোগ করেন। সায়িদা বিভিন্ন প্রমাণ দেখালে আহমেদ শুভ্র বিভাগের সম্মানের দোহাই দিয়ে এসব এড়িয়ে যেতে বলেন। একইসঙ্গে বিভাগের অন্য দুইজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা আনতে বলেন। পুরস্কার হিসেবে তাকে ভালো রেজাল্টের লোভ দেখান শুভ্র। অন্যথায় তার রেজাল্ট খারাপ করে দেয়ারও হুমকি দেন। শিক্ষকের এমন হুমকিতে হতাশায় পড়েন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী, তিনি সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও করেন। পোস্ট দেখে, শিক্ষার্থীকে ফোন দিয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান আহমেদ শুভ্র বলেন, তুমি কাজটা ঠিক করোনি। এর কারণে তোমাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে। 

এসব ঘটনা প্রতিকার চেয়ে সায়িদা সানজানা আহসান ছোঁয়া আমার সংবাদের এ প্রতিবেদককে বলেন, শুভ্র স্যারকে অনেক সম্মান করি। তার কাছে প্রতিকারের আশায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে অন্য দুজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ক্যান্ডালের অভিযোগ আনতে বলেন। এটা শুনে আমি অবাক হয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ভালো হিসেবে জানি। আমি কীভাবে ভালো দুইজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছড়াতে পারি? আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। আত্মহত্যারও সিদ্ধান্ত নেই। পরিবারের কথা ভেবে আত্মহত্যা থেকে সরে আসি। এরপর ফেসবুকে পোস্ট করি। অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেই। আমি চেয়ারম্যান স্যার ও সাজন সাহার বিচার চাই। 

অভিযোগের জবাবে যা জানালেন বিভাগের চেয়ারম্যান

হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, সামাজিক মাধ্যমে যেটা আছে, আমরা সেটাকে অবশ্যই সাপোর্ট করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন আছে, লিখিত অভিযোগ দিক। প্রমাণসাপেক্ষে, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী যে শাস্তি হবে আমরা সে বিষয়ে একমত। ছাত্রীকে সহযোগিতা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ও মনে হয় না আমার সামনে এটা বলতে পারবে। সাজন স্যার ওর ইন্টার্নশিপ নিয়ে ঝামেলা করলে, সাজন স্যারকে সরিয়ে আমি নিজেই দায়িত্ব নিয়েছি। ওকে বলেছি, যদি তোমার কোনো ক্ষতি হয় এটার দায়দায়িত্ব আমার। সাজন সাহা তোমার কোনো কিছুতে আসতে পারবে না। কারো ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ না এলে আমি কীভাবে ব্যবস্থা নিবো? আমার পক্ষ থেকে যতটুকু করার আমি তা করেছি। অন্য নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ আমি সামাজিক মাধ্যমে দেখেছি। অন্যায়কারী তো অন্যায়কারী। প্রচলিত আইনে সে তার শাস্তি পাবে। আইন অনুযায়ী যে কোনো কিছু হতে পারে। অন্য শিক্ষকদের ফাঁসানোর চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোনো একটা ঘটনা ঘটলে অনেক ডালপালা গজায়। হয়তো বা এটা এমনই একটা কিছু। 

জাককানইবির উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেন, আমিও এ ব্যাপারে শুনেছি। মেয়েটি আমাকে টেলিফোনে বলেছে। আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিস্তারিত জানানোর বিষয়েও বলেছে। তবে আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। এটা খুবই সেনসিটিভ বিষয়, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তদন্ত করে পদক্ষেপ নিবো। 

এ ব্যাপারে সাজন সাহাকে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
 

Link copied!