ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

১৬৯ শিক্ষার্থী যাবে কোথায়

মো. নাঈমুল হক

মার্চ ১২, ২০২৪, ০১:০০ এএম

১৬৯ শিক্ষার্থী যাবে কোথায়
  • মাউশি ও ভিকারুননিসার ভুলের খেসারত শিশুদের ওপর
  • নিয়মের কলে শিক্ষাজীবনের শুরুতেই বড় ধাক্কা
  • দুশ্চিন্তায় ভুক্তভোগী অভিভাবকরা

অভিভাবকরা আপিল করুক। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপিলে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসার কথা

—অধ্যাপক জাফর আলী
পরিচালক, মাউশি
 সাফিকা সুলতানা মরিয়ম এ বছর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ৬ মার্চ পর্যন্ত সে ক্লাসও  করে। সাফিকা হঠাৎ শুনতে পায় সে এ স্কুলের শিক্ষার্থী নয়। অকস্মাৎ এমন কথা শুনে শিশুমনে ধাক্কা লাগে। মন খারাপ করে বাবার কাছে বারবার মরিয়ম জানতে চায়, ‘স্কুলে যেতে আমাকে নিষেধ করা হচ্ছে কেন? আমি কী আর স্কুলে যাব না? বাবা সাগর আহমেদ সন্তানকে কোনো জবাব দিতে পারছেন না। মাউশি ও ভিকারুননিসার শিক্ষাভর্তির নিয়ম কীভাবে সন্তানকে জানাবেন। এত কঠিন ব্যাপার সন্তানকে কীভাবে বোঝাবেন। সেজন্য সন্তানকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, হ্যাঁ, তুমি শিগগিরই স্কুলে যাবে। এরপর থেকে সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর উপায় খুঁজতে থাকেন সাগর। 

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), ভিকারুননিসায় ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না তিনি। নিজের হতাশার কথা জানিয়ে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, সব প্রক্রিয়া মেনে আমরা মাউশিতে আবেদন করেছি। মাউশির আবেদনে শিক্ষার্থীর বয়স দেয়া ছিল না। সেজন্য আমরা পাঁচটি স্কুল পছন্দের তালিকায় দিয়েছি। এর মধ্যে ভিকারুননিসা একটি। ২০১৭ সালের আবেদনের বয়সসীমার ব্যাপারটি আমরা জানতাম না। আজ চারদিন ধরে আমার মেয়েটি বাসায় বসে আছে। দুই মাস ক্লাস করে তিন মাসের টাকা পরিশোধের পর এখন তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আমাদের তো কোনো ভুল ছিল না। এসব শিশুর কী কোনো অন্যায় ছিল? তাহলে কেন তাদের স্কুল থেকে বের করে দেয়া হবে? শুধু সাগরই নন, এরকম আরও ১৬৮টি পরিবার সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

জানা গেছে, বয়সসীমা লঙ্ঘন  করায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলটি এসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে। যদিও জানুয়ারিতে লটারির মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থী ভিকারুননিসায় ভর্তির সুযোগ পায়। তখন মাউশির ভর্তি নির্দেশনায় বয়সের কোনো উল্লেখ ছিল না। কিন্তু ভিকারুননিসার নির্দেশনায় বয়স ২০১৭ উল্লেখ করা হয়েছে। অভিভাবকরা সন্তানদের ভর্তি করানোর জন্য মাউশির ওয়েবসাইটে আবেদন করেন। তারা ভিকারুননিসার নিয়ম জানতেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি স্কুলের ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স কমপক্ষে ছয় বছরের বেশি হতে হবে। সে হিসেবে সর্বনিম্ন জন্মতারিখ হবে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি। তবে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা অর্থাৎ সর্বোচ্চ বয়সসীমা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। এরপর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ভিকারুননিসা। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম শ্রেণির জন্য ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জন্ম নেয়া শিশুরা যোগ্য বিবেচিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে।

২৮ নভেম্বর লটারির মাধ্যমে আবেদনকারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেয় মাউশি। তখন ভিকারুননিসা জানতে পারে মাউশি থেকে লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠানে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে জন্ম নেয়া শিশুদের নামও রয়েছে। লটারির বিষয়টি মাউশিকে চিঠির মাধ্যমে জানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মাউশির মৌখিক পরামর্শে গত ২ ডিসেম্বর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, সব সদস্য, শিক্ষক ও ভর্তি কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ। সেখানে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জন্ম নেয়া যেসব শিশু লটারিতে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের ভর্তি নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে ২০১৫ সালের ১০ ও ২০১৬ সালে জন্ম নেয়া ১৫৯ ছাত্রী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পায়। তবে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেয়া পাঁচজনকে ভর্তির অযোগ্য বলে বিবেচনা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেয়া দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন। ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী আদালতে হাজির হন। তিনি ভুল হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এরপর মাউশি থেকে ভিকারুননিসাকে চিঠি দিয়ে ভর্তি বাতিলের নির্দেশনা দেয়া হয়। ভর্তি বাতিলের ফলে শূন্য হওয়া আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে আগামী সাত দিনের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অভিভাবকরা বলেন, মাউশির যে নোটিসের বিপরীতে আমরা আবেদন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছি, তাতে এটা উল্লেখ নেই যে, আমাদের সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের নীতিমালাও জানা থাকতে হবে। বিদ্যালয় নির্ধারণের দৈবচয়নের যে প্রক্রিয়া, তাতে একজন শিক্ষার্থীর জন্য কমপক্ষে ৫০-১০০টি বিদ্যালয়ের জন্য আবেদনের সুযোগ আছে। এভাবে সব বিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুধাবন করে সে অনুযায়ী আবেদন করা কখনোই একজন সাধারণ অভিভাবক হিসেবে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কোনো আবেদন সংশ্লিষ্ট ওই নীতিমালার ব্যত্যয় করে কি না, তা নির্ধারণ করে ওই সুনির্দিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং মাউশি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তি প্রক্রিয়ার সময়ই সংশ্লিষ্ট নীতিমালার আলোকে আমাদের সন্তানদের অযোগ্য হিসেবে আবেদন বাতিল করা যেত। তার বিপরীতে আমরা আমাদের অন্যান্য সম্ভাব্য সুযোগগুলোতে ভর্তি করাতে পারতাম।

কাউসার আহমেদ বলেন, হঠাৎ ভর্তি বাতিলকৃত অবস্থায় দেশের একজন সাধারণ নাগরিক এবং একজন কন্যাশিশুর অভিভাবক হিসেবে আমরা এখন কোথায় যাব? এখন আমার শিশু যখন আমাকে প্রশ্ন করে সে কেন আর তার বিদ্যালয়ে যেতে পারবে না, আমার কাছে তার কোনো সঠিক উত্তর নেই। এখানে কার দায়, কার ভুল, তারচেয়েও বড় বিবেচ্য বিষয় ওই ১৬৯টি কন্যাশিশুর কী দোষ? তারা তাদের বর্তমান স্কুলটিকে এতদিনে তাদের মন-মননে ও চিন্তাধারায় ধারণ করে নিয়েছে, তাদের এই কচি মন কী সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে? তাদের বিতাড়িত করার এই হিসাবটা কী মেলাতে পারবেন?

এ ব্যাপারে সহমর্মিতা জানিয়ে মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের হাতে এখন কিছুই নেই। এই শিশুরা শিক্ষাজীবনের শুরুতেই এমন একটা ধাক্কা খেলো, সত্যিই এমনটা আমরা চাই না। মাঝপথে ওরা এখন কোথায় যাবে? তাদের অভিভাবকরা পুনরায় আপিল করুক। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপিলে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসার কথা। সেটা হলে পুনরায় তারা ক্লাস করতে পারবে।
 

Link copied!