ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad
সবলের সঙ্গে দুর্বলের একীভূতকরণ

ভালো ব্যাংক নিয়ে দুশ্চিন্তা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম

ভালো ব্যাংক নিয়ে দুশ্চিন্তা

সবলের সঙ্গে দুর্বলের একীভূতকরণ উদ্বেগের
—ফাহমিদা খাতুন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনায় ৬টি দুর্বলতা আছে —জিয়া হাসান

দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদের দায় জনগণের ওপর চাপবে 
—জ্যোতি রহমান

ভালো ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থপনা ও ঋণ জালিয়াতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হলে সবল ব্যাংকগুলো খারাপ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। এমনকি ব্যাংক একীভূতকরণের ফলে দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদের দায় জনগণের ওপর চাপাতে পারে বলেও মনে করেন তারা। এছাড়া, ব্যাংক একীভূতকরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনায় ছয়টি দুর্বলতাও চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

গতকাল শনিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘বিপর্যস্ত ব্যাংকিং খাতে ব্যাংক একীভূতকরণের প্রভাব’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন। প্রবাসী সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন ও অর্থনীতি গবেষক জিয়া হাসান। বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সিডনি পলিসি অ্যানালাইসিস সেন্টারের আন্তর্জাতিক পরিচালক অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান, অর্থনীতিবিদ ও আইএলও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ ও গবেষক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত করা হলে তা হবে উদ্বেগের। কেননা, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে একটি ব্যাংক ভালো অবস্থায় গেছে। সেখানে খারাপ একটি ব্যাংক মিলিয়ে দিলে তার উচ্চ খেলাপি ঋণ, সংস্কৃতি, মানবসম্পদ, তারল্য পরিস্থিতির কারণে সেটিও খারাপ হয়ে যেতে পারে। তড়িঘড়ি না করে সব দিক বিবেচনা করে একীভূতকরণ করতে হবে। 

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের সংস্কারের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছে। সংস্কারে যত দেরি হবে, ততই সমস্যা বাড়বে। তাই বলে কোন উপায়ে একীভূত করা হবে, আবার প্রকৃত অবস্থা খারাপ তবে পরিচালনায় প্রভাবশালীদের ব্যাংক একীভূত করা হবে কিনা এসব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখন ব্যাংক খাত সংস্কারে আইএমএফের শর্তের কারণে এটা লোক দেখানোর চেষ্টা কিনা- সে প্রশ্নই উঠেছে। সুশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত হলে এসব আলোচনা আসত না।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে চলমান সংকট তার মধ্যে তারল্য সংকট, মূলধন সংকট, দুর্বল সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংকট, ঋণের গুণগত মান ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার একটা প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের চাহিদা অনেক আগেই তৈরি হয়েছে। এটা দেরি করলে প্রতিটি দিনই দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত করার একটা রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এরই অংশ হিসেবে ১০টার মতো দুর্বল ব্যাংক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যেতে পারে। তারই অংশ হিসেবে পদ্মা ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক একীভূত করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর ঋণখেলাপির পরিমাণ, ব্যবস্থাপনার সব সূচকে তাদের অবস্থান খারাপ। খেলাপি ঋণটাই তো সবচেয়ে চিন্তার বিষয়। আসলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ তাদের কত? প্রকৃত খেলাপি ঋণের প্রিন্টটা তাদের অ্যাকাউন্টে নেই। যতটুকু রিপোর্ট করা হয়েছে এর চাইতে বেশি হবে। এটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রকৃত দুর্বল ব্যাংক আসলে কার? এমন প্রশ্ন তুলে ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রভাবশালীদের দুর্বল ব্যাংক এই তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। ব্যাংক মার্জিনের ক্ষেত্রে তারল্য সংকট, প্রযুক্তি, আর্থিক ঝুঁকি, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ— এসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ বিষয়গুলো দুটো ব্যাংকের একরকম হয় না। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার সঙ্গে একীভূত হয়েছিল। একীভূত হয়ে বিডিপিএল হয়। নতুন সত্ত্বা পাওয়ার পরও এই ব্যাংকটা এখন খারাপ ঋণের ভারে তলিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা ব্যাংক ছিল রেড জোনে, এক্সিম ব্যাংক ছিল হলুদ জোনে। দুটি খারাপ ব্যাংক একীভূত হয়ে ভালো ব্যাংক কীভাবে হবে, সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে।

অধ্যাপক জিয়া হাসান বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের যে সিদ্ধান্ত সেটা ভালো। তবে এক্ষেত্রে উচিত ছিল দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের একীভূত করা। একইভাবে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে ভালো ব্যাংকের একীভূত করা। এখন দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হলে সেটার (ভালো) অবস্থাও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খারাপ ব্যাংকের অনেক দায় রয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের খারাপ ঋণ রয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদ বা মন্দ ঋণের দায় চূড়ান্তভাাবে ট্যাক্স পেয়ার বা দরিদ্র জনগণের ওপর চাপানো হতে পারে। মূল্যস্ফীতি ছাড়া এত বড় অংকের দায় দেশের অর্থনীতি নিতে পারবে না।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি কমানো ও সুশাসন ফেরাতে একটি পলিসি নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকের প্রধান সংকট অনিয়ম ও লুটপাটের  ষ এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৭
কারণে খেলাপির প্রভাব ও রাজনীতির সখ্যতায় খেলাপি নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ না নেয়া। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে যেটুকু প্রস্তাব আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে কঠোর অবস্থানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একীভূত চাপানোর মাধ্যমে হবে গরিবের ওপর এসব ঋণের দায় চাপানো। দুর্বলের সঙ্গে সবলের মিলিত হওয়ায় আরও দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সবল ব্যাংকের। খেলাপি ঋণ লুকানোর কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন আবার মার্জার সামনে এলো। তথ্য বলছে, খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। খেলাপির কারণে ব্যাংকগুলোর সংকট। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ লাখ কোটি টাকার তারল্য সুবিধা দেয়া হয়েছে। এর কারণ খেলাপি ঋণ।

উন্নয়ন অর্থনীতির এ গবেষক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক একীভূতকরণে ছয়টি দুর্বল দিক রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো প্রস্তুতি নেই, এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই নিজের আইন ভঙ্গ করেছে। ব্যাংকের সংখ্যা কমানো কার্যকরী লক্ষ্য হতে পারে না, মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল কনসোলিডেশন (একত্রীকরণ)। দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদ বা মন্দ ঋণের দায় চূড়ান্তভাবে দরিদ্র জনগণের ওপর চাপানো হতে পারে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। আবার একই ধরনের প্রডাক্ট পোর্টফোলিও এবং ভৌগোলিক ভিন্নতা না থাকা ব্যাংকের কোনো স্ট্র্যাটেজিক ভ্যালু নেই।

অধ্যাপক জিয়া হাসান আরও বলেন, পদ্মা ব্যাংকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যাড লোনে পরিণত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ছাড়া এত বড় অংকের দায় অর্থনীতি নিতে পারবে না। জিডিপির সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে ব্যাংক বেশি, এটা ঠিক। তবে এখন আবার ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রস্তাব যৌক্তিক হতে পারে না।

অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্জারের পরিকল্পনায় মূল সমস্যায় হাত দেয়া হয়নি। দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদের দায় কে নেবে? যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর দায় নেয় তাহলে এর দায় জনগণের ওপর পড়বে। এটা মারাত্মক ভুল হবে। আইএমএফসহ সবাই বলছে ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণ বাড়ছে। সরকার ক্ষমতায় এসেই বেশ কয়েকটি ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছিল। ব্যাংকের বিপর্যয় একদিনেই আসেনি, দীর্ঘ সময় ধরে এসেছে। ফারমার্স ব্যাংক থেকে পদ্মা। ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে মালিককে অনিয়মের কারণে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলো। আবার সরকারের বড় বড় প্রকল্পের কাজও তিনি করছেন। এর দায়ভারও জনগণের ওপর আসে।

সাংবাদিক মুনির হায়দার বলেন, মার্জার এর আগেও হয়েছিল। বিসিআই ব্যাংক এরশাদ আমলে হয়। এরপর আমরা ব্যাংক খাতের অবস্থা দেখেছি। এখন আট ব্যাংক রেড জোনে, এরপর সবশেষ পদ্মা ব্যাংক একীভূত করার চুক্তি। পদ্মা ব্যাংকের মার্জারটা ছিল জোর করে চাপিয়ে দেয়া। এর ফল কী হবে, ডুবে যাওয়া ব্যাংক একীভূত করলে লাভটা কী? কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।

আরএস
 

Link copied!