Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

প্রধানমন্ত্রীর শোক

রাজধানীতে পৃথক দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ১৫, ২০২২, ০৮:০০ পিএম


রাজধানীতে পৃথক দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু

রাজধানীসহ সারাদেশ যখন শোক পালন করছে ঠিক সে সময় ঘটে গেল মর্মান্তিক দুই ঘটনা। সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় রাজধানীর চকবাজার এলাকায় আগুনে পুড়ে মারা যায় একই রেস্টুরেন্টে কাজ করা ৬ জন।  সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই বিকেলে উত্তরায় বাস র‍্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহত হয়। এই ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) হৃদয় ও রিয়ার বিয়ে হয়। তারা সোমবার ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুর বাগানের আসরাফউদ্দিন চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায়।

রাজধানীতে ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে নিহত ৫

হৃদয়ের চাচাতো ভাই রাকিব (১৯) বলেন, সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা দুর্ঘটনার খবর পান। কিন্তু এতো সময় পরও গাড়ি থেকে মরদেহগুলো বের করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ভেতরে যদি কেউ বেঁচে থেকেও থাকেন তাহলে এতোক্ষণে মারা গেছেন। রাকিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার কীভাবে এভাবে অব্যবস্থাপনার মধ্যে কাজ করছে? আমরা কার কাছে বিচার দিব! আমাদের অন্তত লাশগুলো বের করে দিক। কিন্তু এখানে তো কোনো উন্নত যন্ত্রপাতি নেই।’

দুর্ঘটনাস্থলে স্বজনেরা আসছেন। তাদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা লিভার দিয়ে গার্ডার উঁচুর করে তুলে গাড়ি বের করার চেষ্টা করছেন। তবে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চেষ্টায়ও গার্ডার সরেনি। এখন ক্রেন আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

প্রাইভেটকারে আরোহী ছিলেন সাত জন বলে স্বজনরা জানায়। তারা হলেন- হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), কনে রিয়া মনির খালা ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। শুধু বেঁচে গেছেন হৃদয় ও রিয়া। নব দম্পতিকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, রাজধানীর চকবাজারের কামালবাগের দেবীদাস ঘাটে ‘ঢাকা প্লাস্টিক’ নামের একটি পলিথিন কারখানায় আগুনের ঘটনায় ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

ফায়ার সার্ভিস পরিদর্শক মো. আনোয়ার জানিয়েছেন, ৬ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। 

নিহত ছয়জনের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মো. শরিফ (১৫), মো. বিল্লাল (৩৫), মো. স্বপন (২২), মো. ওসমান (২৫)। অপর দুজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যে ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সেই ভবনের নিচতলায় ‘বরিশাল হোটেল’ নামে একটি হোটেল আছে। সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।

জিল্লুর রহমান আরও বলেন, যে ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সেটাসহ আশপাশের কোনো ভবন নির্মাণের নিয়মনীতি মানা হয়নি। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এত দেরি হয়েছে।

লালবাগ পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।

চকবাজারে আগুনে ৬ জনের মৃত্যু: ফায়ার সার্ভিস

এর আগে, ফায়ার সার্ভসের কর্মীরা জানিয়েছিলেন, যে হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত আগুন লাগার সময় সেই বরিশাল হোটেলের পাঁচ কর্মী ভেতরে ছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে কয়জন বের হতে পেরেছেন তা কেউ নিশ্চিত বলতে পারেননি। ফলে ভবনের ভেতরে একাধিক মরদেহ থাকতে পারে।

হোটেলের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। তারা বলছেন, সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন শুরুতে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারে যায়। সেখানে আরেক দফা বিস্ফোরণের পর প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির কারখানায় আগুন লাগে।

অগ্নিকাণ্ডে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।

উত্তরায় ক্রেন ছিঁড়ে গার্ডারের চাপায় প্রাইভেটকারের চার যাত্রী নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে ক্রেন ছিঁড়ে গার্ডারের চাপায় ঘটনাস্থলেই একটি প্রাইভেটকারের চার যাত্রী নিহত এবং দুইজন আহত‌ হন। প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান; এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।


ইএফ

Link copied!